রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

ডাঃ দীপু মনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥
ডাঃ দীপু মনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী

নতুন মন্ত্রিসভায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন ডাঃ দীপু মনি এমপি। এর আগের মন্ত্রিসভায় তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে মন্ত্রিপরিষদ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বুধবার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কারা হচ্ছেন তাঁদের নাম জানা গেলেও কে কোন্ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন তা জানা যায়নি। গতকাল বঙ্গভবনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর বিষয়টি জানানো হয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৩ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ১ লাখ ৬ হাজার ৫৬৬ ভোটে বিজয়ী হন।

দীপু মনির পিতা একুশে পদক বিজয়ী ভাষা সৈনিক ও রাজনীতিবিদ এম.এ ওয়াদুদ। মাতা রহিমা ওয়াদুদ ছিলেন শিক্ষিকা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২২ আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১০ জানুয়ারি শপথ নেন নতুন সংসদ সদস্যরা। শপথ নেয়ার পর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাদের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করেন।

সংসদ নেতা হওয়ার পর বুধবার বিকেলে সংসদ সদস্যদের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। তিনি শেখ হাসিনাকে নতুন সরকার গঠনের আহ্বান জানান।

এরপর প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভা গঠন করেন এবং বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের তালিকা নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী গঠিত মন্ত্রিসভায় সম্মতি জ্ঞাপন করেন। এরপর মন্ত্রিসভার ওই তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বুধবার রাতে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে তালিকায় থাকা ২৫ মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেন। ওই তালিকার একটি কপি তিনি সাংবাদিকদের কাছে হস্তান্তর করেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ৩৬ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়েছেন মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। এরপর মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর বন্টন করা হয়। তখনই জানা যায় ডাঃ দীপু মনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর-হাইমচর) আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে ডাঃ দীপু মনি অংশ নেন। এটিই ছিল দীপু মনির প্রথম নির্বাচনে অংশ নেয়া। প্রথম নির্বাচনেই তিনি বাজিমাৎ করে দেন। এ নির্বাচনে দীপু মনি বিপুল ভোটে বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৩৩ বছর পর এ আসনটি আওয়ামী লীগ ফিরে পায়। তাঁর এই বিজয় দেশব্যাপী আলোচিত হয়। ডাঃ দীপু মনি তখনকার মহাজোট সরকারের মন্ত্রী সভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। সে সরকারের পূর্ণ মেয়াদে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সমুদ্র বিজয়সহ অনেক সফলতা দেখিয়েছেন। বহির্বিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেন। সফলতাও পান তিনি।

এরপর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হন। সে সরকারে দীপু মনি মন্ত্রীত্ব পান নি। এরপর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দীপু মনি একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সরকারের মন্ত্রী সভায় দীপু মনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। পূর্ণ পাঁচ বছর তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে পালন করেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম তাঁর যে সফলতা সেটি হলো পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা। এটি তিনি শুরুতেই রোধ করে ফেলেন। এটা সফলতার সাথে করতে পেরে তিনি দেশব্যাপী প্রশংসিত হন। এরপর শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের কাজে তিনি হাত দেন। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি স্মার্ট জাতি গঠনে তিনি উদ্যোগ নেন। তাঁর এই কার্যক্রম বলতে গেলে এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৩ আসন থেকে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ডাঃ দীপু মনি এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়াকে ৮৩ হাজার ভোটের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বুধবার তিনিসহ নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। গতকাল ডাঃ দীপু মনি প্রথমে মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর তাঁকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

জীবন বৃত্তান্ত

গতকাল শপথ নেয়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির জন্ম ১৯৬৫ সালের ৮ ডিসেম্বর, রাজধানী ঢাকার কলাবাগানে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সহচর ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ তাঁর বাবা। মা রহিমা ওয়াদুদ চার দশক শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন।

হলিক্রস স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস, যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএইচ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম পাস করেন দীপু মনি।

ডাঃ দীপু মনি কর্মগুণে দেশে-বিদেশে পরিচিত, সমাদৃত। বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি। তারপর ২০১৮-২০২৩ মেয়াদে সাফল্যের সঙ্গে প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাঁচবারের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় দীপু মনি বাবা-মা’র জন্মস্থান চাঁদপুর আর তার মানুষকে ভালোবেসে ২০০৮ সাল থেকে জাতীয় সংসদে চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর-হাইমচর)-এর প্রতিনিধিত্ব করছেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার যুগান্তকারী বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে ডাঃ দীপু মনি-র নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমুদ্র জয় করে। এটি ছিল বাংলাদেশের জন্যে অবিস্মরণীয় অর্জন। এই সময়ে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে প্রায় চার দশকের সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত অমীমাংসিত বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে।

শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তাঁর সাফল্য প্রশংসনীয়। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও প্রসার, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, নিয়োগ ও বদলিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগীকরণ, নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন, করোনাকালে বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা চালু রাখা, ব্লেন্ডেড শিক্ষার জাতীয় মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধসহ শিক্ষা ব্যবস্থায় রূপান্তর ঘটানোর মধ্য দিয়ে দক্ষ, যোগ্য, মানবিক ও সৃজনশীল জনসম্পদ তৈরিতে অনেক উল্লেখযোগ্য কাজ তাঁর নেতৃত্বে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

এক সময়ের তুখোড় বিতার্কিক দীপু মনি মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে লেখালেখি, শিক্ষকতা, পরামর্শ প্রদান, গবেষণা, এডভোকেসি কর্মসূচি পরিচালনা, অসচ্ছল মানুষদের চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ নানা কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁর অনন্য অবদানের জন্যে তিনি মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন। ডাঃ দীপু মনি ঈড়সসড়হবিধষঃয গরহরংঃবৎরধষ অপঃরড়হ এৎড়ঁঢ় (ঈগঅএ)-এর প্রথম নারী এবং দক্ষিণ এশীয় চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়ে দেশের জন্যে অনন্য সম্মান বয়ে আনেন। সম্প্রতি তিনি ফিলিপাইনের সম্মানজনক আন্তর্জাতিক গুসি শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি অনন্যা শীর্ষ দশ (রাজনীতি, ২০০৭), বিবার্তা স্বর্ণপদক ২০১৭, এমটিসি গ্লোবাল রুশিকুমার পান্ডিয়া লাইফ টাইম এ্যাচিভমেন্ট এওয়ার্ড ২০১৯, উইমেন ইকোনমিক ফোরাম ও ডব্লিউআইসিসিআই কর্তৃক প্রদত্ত উইমেন অব দি ডিকেড ইন পাবলিক লাইফ অ্যান্ড লিডারশিপ ২০২১ এবং ১৫০ লিডিং উইমেন অব ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন সম্মাননাসহ আরও সম্মাননা পেয়েছেন।

সার্বক্ষণিক রাজনীতির মানুষ হলেও লেখালেখির সঙ্গে তাঁর রয়েছে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ হলো : ‘তোমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ (২০১৫), এম এ ওয়াদুদ স্মারকগ্রন্থ (২০১৫) এবং ‘স্মৃতিঘর’ (২০২১)।

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট এবং বাঁশীতে আলাপ বাদন শিল্পী তৌফীক নাওয়াজ ডাঃ দীপু মনির স্বামী। তাঁদের দুসন্তান--পুত্র তওকীর রাশাদ নাওয়াজ ও কন্যা তানি দীপাভলী নাওয়াজ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়