শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতুর কাজ প্রায় শেষ

এপ্রোচ সড়কের কাজ চলছে ॥ আগামী ডিসেম্বরেই খুলে দেয়া হবে

ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতুর কাজ প্রায় শেষ
দেলোয়ার আহমেদ ॥

চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জের মধ্যে সংক্ষিপ্ত যোগাযোগ স্থাপনে মাইল ফলক হিসেবে বিবেচনাযোগ্য ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতুর যাবতীয় কাজ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই। ডাকাতিয়া নদীর ওপরে বৈদ্যুতিক পিলারসহ মূল সেতু এবং তাকে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দনের কাজ শেষ হয়েছে ক’মাস আগেই। এখন বাকি শুধু এপ্রোচ সড়কের কাজ, যে কাজের ৪০ ভাগ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই। প্রকৌশলীগণ এমনটাই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

বর্তমান সরকারের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘কানেক্টিভিটি’র ওপর গুরুত্বারোপ করে অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ এলাকার লক্ষ লক্ষ অবহেলিত জনগণের সুবিধার্থে ২০১৭-এর ১১ ফেব্রুয়ারি এই সেতুর কাজ শুরু করা হয়। ৫২-এর প্রখ্যাত ভাষাসৈনিক ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন এবং প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা, ছোট সুন্দর গ্রামের এমএ ওয়াদুদের নামে নামকরণ করে ‘এমএ ওয়াদুদ সেতু’র ভিত্তিপ্রস্তর আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করেন যৌথভাবে চাঁদপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া।

সেতুটির পূর্বপ্রান্তে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রাম আর পশ্চিম প্রান্তে চাঁদপুর সদরের রামপুর ইউনিয়নের ছোটসুন্দর গ্রাম অবস্থিত। মাঝখানে ধীরে বেয়ে যাওয়া শান্ত ডাকাতিয়া নদী। মূল ব্রিজের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর। শেষ করার জন্যে বলা হয় ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বরে।

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইউনুছ হোসেন বিশ্বাস বলেন, শুরুতে এ সেতুর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৩৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার এ সেতুর অর্থ যোগানদাতা।

দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি কিছুটা জিগজাগ (ইংরেজি এস-এর মতো)। এর দৈর্ঘ্য ২৭৪ মিটার ও প্রস্থ ১০ মিটার (২৪ ফুট)। বৈদ্যুতিক পিলারসহ এ ব্রিজের মূল সেতুটির কাজ শেষ হলো বেশ ক’মাস আগে। দেখা গেছে, এরই মধ্যে উৎফুল্ল কিশোর-কিশোরী ছেলে-মেয়েরা বিকেলে সেতুতে উঠে বৈকালিক ঘোরাফেরাতে, আনন্দে-আড্ডায় মাতোয়ারা হয়ে উঠে।

এদিকে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর উভয় পাশের পাদদেশের এপ্রোচ সড়কসহ সংযোগ সড়কের কাজও চলছে। পশ্চিম পাশে এপ্রোচসহ সংযোগ সড়কের কাজ হবে প্রায় ১ কিলোমিটার-যা বগা নৌকা ঘাট থেকে প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র ‘ছোটসুন্দর বাজার’ পর্যন্ত এবং এ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার প্রশস্ততা হবে ১৮ ফুট। সেতুটির পূর্ব পাশে ইসলামপুরের এপ্রোচ সড়কসহ সংযোগ সড়কে প্রায় পোয়া/কোয়ার্টার কিলোমিটারে একই রকম ভালো মানের কাজ হচ্ছে। ওখানে পিচঢালা পথ হচ্ছে।

ঘুরে ঘুরে দেখা গেলো, বতর্মানে উভয় পাশের এপ্রোচ সড়কের ১০৯টি বেইজের নির্মাণ কাজ চলছে। বেইজগুলো মাটির তলদেশ থেকে গ্রাউন্ড লেভেলে এসেছে।

সদর উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ রহমান জানান, করোনার মধ্যেও আমাদের কাজ থেমে নেই। সংযোগ সড়কের কাজ এ পর্যন্ত ৪০ ভাগ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইনশাল্লাহ এপ্রোচ সড়কের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।

সেতুর উভয় পাড়ের মানুষের অভিযোগ, কাজ কচ্ছপের গতিতে চলছে। এতে মানুষের ক্ষোভ বেড়েই চলছে। অবশ্য উপজেলা প্রকৌশলী এ অভিযোগ মানতে নারাজ।

ব্রিজের কাজ দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানান ছোটসুন্দর গ্রামের কলেজ ছাত্র সাজিদ খান (বর্তমান করোনাকালে মুদী দোকানী), বিদেশফেরৎ আরিফ বেপারী, কৃষক আঃ গণি পাটোয়ারী (৬০), আঃ লীগ নেতা আঃ খালেক পাটোয়ারী ও এমনকি বাক্প্রতিবন্ধী শাহজাহান বেপারী (৫০) (আকার-ইঙ্গিতে) প্রমুখ ব্যক্তিরা।

এ ব্রিজের পূর্ব পাড়ে ইসলামপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন বেপারী (৫৫), সিদ্দিক বেপারী (৫৫) ও অটোড্রাইভার সেলিম মিয়াজী (৪৫), ইসলামপুর সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফসহ অন্য ব্যক্তিগণও দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পর ৫ বছরের বেশি সময় কেনো চলে গেলো?

ডাকাতিয়া নদী পারাপারের সময় নৌকার মাঝি শান্তি মাঝি (৩৩) ও অরুণ মাঝি (৪০) বলেন, আমরাও চাই দেশের উন্নয়নে ও সব মানুষের সুবিধার্থে তাড়াতাড়ি এ ব্রিজের কাজ শেষ হোক।

বিভিন্নজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, চির অবহেলিত, পশ্চাৎপদ ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ফরিদগঞ্জ উপজেলার সর্ব উত্তরে অবস্থিত বালিথুবা, সুবিদপুর পাইকপাড়া ইউনিয়নসহ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের শেষ প্রান্ত ইসলামপুর গ্রাম ও চাঁদপুর উপজেলার পূর্র্ব-দক্ষিণাঞ্চলের শেষপ্রান্তের গ্রাম ছোটসুন্দরসহ আশপাশের ৫/৬টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের মাঝে প্রচ- আশার সঞ্চার হয়েছে এ স্বপ্নের সেতুকে ঘিরে। সবার প্রত্যাশা, সেতুর এপ্রোচ সড়কের কাজ শেষ হলেই আনন্দে মেতে উঠবে উভয় অংশের মানুষেরা। পুরা রাস্তার কাজ শেষ হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটা হবে একটা বিশাল মাইলফলক। জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ হবে সংক্ষিপ্ত, আরামদায়ক ও সহজতর। চাঙ্গা হবে গ্রামীণ ব্যবসা-বাণিজ্য। সড়ক ও ব্রিজের দু পাশে গড়ে উঠবে আধুনিক মানের মার্কেট, বেড়ে যাবে জায়গা জমির বতর্মান মূল্য। পূরণ হবে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও দীঘদিনের লালিত স্বপ্ন।

ইতিমধ্যে এ ব্রিজকে কেন্দ্র করে এর আশপাশের জমির মূল্য প্রতি ডেসিমেলে/শতকে হাজার থেকে লাখ টাকায় উঠে এসেছে। মানুষ বিভিন্ন রকমের স্বপ্নের জাল বুনছেন।

এজন্যে এলাকাবাসী ও চাঁদপুর সদরের রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন পাটোয়ারী ও ফরিদগঞ্জের বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এলাকার সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি ও ফরিদগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার প্রতি।

‘উপজেলা-ইউনিয়ন সড়কে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে’র আওতায় এ সেতুর কাজ করা হচ্ছে বলে আরও জানান নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইউনুছ হোসেন বিশ্বাস। কার্যাদেশে বলা হয়, ব্রিজের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর। শেষ করার জন্যে বলা হয় ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বরে (৩৬৫ দিন)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল মামুন জেভি কোম্পানি।

ব্রিজের কাজ শেষ হলে, তখন এ বিরাট সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও ফরিদগঞ্জের সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া ও ফরিদগঞ্জের এমপি শফিকুর রহমান।

উল্লেখ্য, এ সেতুর একটু উত্তরেই ভাষাসৈনিক এমএ ওয়াদুদ ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর পৈত্রিক বাড়ি। ব্রিজ থেকে এ বাড়ি দৃশ্যমান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়