প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
সাতদিনের চাঁদপুর : করোনা ও উপসর্গে মৃত্যু ২০ জন
ছয়দিনে শনাক্ত ৪৭০ ॥ সংক্রমণের হার ১৯.৬২ শতাংশ
চাঁদপুর জেলায় করোনার সংক্রমণ এখন নিম্নমুখী। গত সাতদিনের হিসেবেই এ তথ্য জানান দিচ্ছে। সাতদিনে চাঁদপুর জেলায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ২০ জন, আর সর্বশেষ ছয়দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৭০ জনের। সংক্রমণের হার ১৯.৬২ শতাংশ। অথচ এর ক’দিন আগে এমনও দিন গেছে একদিনেই মারা গেছে ১৩ জন। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ একদিনে সর্বোচ্চ মারা গেছে সাতজন।
|আরো খবর
চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ১৭ আগস্ট থেকে গতকাল ২৩ আগস্ট পর্যন্ত এই সাতদিনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেলো, চাঁদপুরে করোনার সংক্রমণ এখন নিম্নমুখী। এমনকি জাতীয় হারের চেয়েও নিচে থাকে এখন চাঁদপুরে সংক্রমণের হার। ২০ শতাংশের মধ্যেই থাকে এখন সংক্রমণের হার। তবে রোববার ছিলো ১৪.৭০, ১৮ আগস্ট ছিলো ১৬.৬০ শতাংশ। শুধু মাঝখানে একদিন ২০ আগস্ট শনাক্তের হার হয়েছে ২৮.১৯ শতাংশ। এরপর এ পর্যন্ত আর ২০-এর উপরে যায়নি। এই পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৭ আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত এ সাতদিনে আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে এবং শাহরাস্তি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে ২০ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে চারজন ছিলেন করোনা পজিটিভ, আর বাকি ১৬ জন ছিলেন করোনার উপসর্গে আক্রান্ত। আর ১৭ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট এই ছয়দিনে জেলায় ২৩৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৯.৬২ শতাংশ। অথচ এর পূর্বে একদিনেই শনাক্ত হাজার ছাড়িয়েছে। আর সংক্রমণের হার একদিনেই ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছিলো।
চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতির এমন অভাবনীয় উন্নতি হওয়াকে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের সফলতা হিসেবেই দেখছেন সচেতন মানুষেরা। তারা বলছেন, জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাঠে সক্রিয় থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের সার্বক্ষণিক তদারকিতে পুলিশ সদস্যরা মাঠে সক্রিয় এবং খুবই তৎপর ছিলেন। চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলের সরাসরি তদারকিতে পুরো পৌর এলাকায় তাঁর বিশাল বাহিনী অবিরাম কাজ করেছে। পৌর মেয়রের নেটওয়ার্ক একেবারে পাড়া-মহল্লায় সচেতনতামূলক কাজ করেছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান করোনার পুরো ঝড়ের সময়টাতে তাঁর উপজেলায় মাঠে সক্রিয় ছিলেন। সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহর নেতৃত্বে এবং সার্বক্ষণিক তদারকিতে পুরো জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ খুবই সচেতন এবং সক্রিয় ছিলো। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউএনওরাও বেশ তৎপর ছিলেন জনগণকে সচেতন করে তুলতে, লকডাউন বাস্তবায়ন করতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। গণমাধ্যম কর্মীরাও প্রতিনিয়ত মানুষকে সচেতন করতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়া ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদরাও যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রেখেছেন করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে চাঁদপুরকে রক্ষা করতে এবং নিয়ন্ত্রণে আনতে। এমনিভাবে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসেই আজকের এই সফলতা বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
তারা বলছেন, এখন আর হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের অক্সিজেন নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় না, কাড়াকাড়ি করতে হয় না, একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় না। অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর ঘটনাও এখন নেই। তবে তাঁরা চাঁদপুরে করোনার এই ভয়াল থাবাকালীন এই জেলার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখাসহ কীভাবে মানুষকে আরো বেশি চিকিৎসা সেবা দেয়া যায় তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তৎপর থাকায় চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং তাঁর বড় ভাই ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপুর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। শুধু জেলার সাথেই নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথেও তাঁরা নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন করোনাকালীন কীভাবে চাঁদপুরের জনগণকে চিকিৎসা সেবা ঠিকভাবে দেয়া যায়। তাঁরা সফলও হয়েছেন। যার সুফল এখন চাঁদপুর জেলাবাসীই শুধু নয়, আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষও ভোগ করছে। সেজন্যে এই দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রতি জেলাবাসীর অশেষ কৃতজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন এই জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।