শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

আক্রান্ত ও মৃত্যু দ্রুত কমে যাওয়া কি অলৌকিক কিছু?
এএইচএম আহসান উল্লাহ ॥

কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাস যে চাঁদপুরকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল, করোনায় অতি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা ছিল যে চাঁদপুর, শনাক্তের হার কিছুদিন আগেও যে চাঁদপুরে ৪০ শতাংশের উপরে ছিল, এমনকি ৫০ শতাংশও অতিক্রম করেছে কোনো কোনোদিন; সে চাঁদপুর জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে বলা না গেলেও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে বলা যায়। গত ১৬ আগস্ট থেকে এ জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ২০ শতাংশের মধ্যেই থাকছে। যদিও শুধু ২০ আগস্ট শনাক্তের হার ২৮ শতাংশ ছিল, তবে তা একদিনেই। এরপর ২১ আগস্ট ছিল ১৯.৮৩, ১৯ আগস্ট ছিল ২১.৯ এবং ১৮ আগস্ট ছিল ১৬.৬০ শতাংশ। আর এ ক’দিন মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল অনেক কম। যেমন গতকাল ২২ আগস্ট রোববার জেলায় মারা গেছে একজন। তাও এ মৃত্যু করোনা পজিটিভ নয়, সাসপেক্টেড তথা উপসর্গে মৃত্যু। শনিবার মারা গেছে ২ জন। এর একজন করোনা পজিটিভ, আরেকজন উপসর্গ। ২০ আগস্ট মারা গেছে তিনজন। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ একজন, উপসর্গে দুইজন। অথচ ১৬ আগস্টের আগে শনাক্তের হার ছিল ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের উপরে। আর ওই সময়গুলোতে ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালেই মারা যেতো ১০-১২ জন করে। একদিন মারা গেছে সর্বোচ্চ ১৩ জন। এই ১০-১২ জনের মধ্যে করোনা পজিটিভ মৃত্যু একদিনে ছিল সর্বোচ্চ ৭ জন।

সেই বিপর্যস্ত ও বেসামাল অবস্থা থেকে এখন বলা যায় চাঁদপুর জেলায় করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে, সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার অনেক নিম্নমুখী। যদিও এখন জাতীয় পর্যায়েও করোনা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির দিকে। তবে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে- বিগতদিনে চাঁদপুর জেলা সবসময় করোনা শনাক্তের হার জাতীয় হারের উপরে থাকতো। কিন্তু গত ১৮ আগস্ট দেখা গেলো চাঁদপুর জেলায় শনাক্তের হার জাতীয় পর্যায় থেকে নিচে। এদিন চাঁদপুর জেলায় শনাক্তের হার ছিল ১৬.৬০ শতাংশ। আর জাতীয় পর্যায়ে এদিন শনাক্তের হার ছিল ১৯.১৭ শতাংশ।

এদিকে চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় তথা সংক্রমণ ক্রমান্বয়ে নিম্নগামী হওয়ায় সকলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। তাঁরা মহান স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা স্বস্তি প্রকাশ করছেন। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ও করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল জানান, আজকে (গতকাল রোববার) হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে রোগী ভর্তি আছে ৭৮ জন। এর আগেরদিন ৯৫ জন, এরও আগেরদিন ৯২ জন, তারও আগেরদিন ছিল ৮৯ জন। যেখানে এক সপ্তাহ আগেও রোগী ভর্তি ছিল গড়ে দেড়শ’ জন, তারও আগে ছিল গড়ে ২শ'র মতো। সে জায়গায় মাত্র ৪-৫ দিনের মধ্যে রোগীর সংখ্যা একশ’র নিচে চলে আসায় হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা যেনো হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য সূত্রে জানা যায়, গত ১২ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত এই দশদিনে চাঁদপুর জেলায় ৪,৯৫৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২৬৫ জন। যার শতকরা হার হচ্ছে ২৫.৫১। আর এই দশদিনে হাসপাতালে মারা গেছেন মোট ৫৬ জন। এর মধ্যে করোনা পজিটিভে মৃত্যু ১৫ জন, আর উপসর্গে মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। এদিকে এই দশদিনের মধ্যে ১৬ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত ছয়দিনে জেলায় ২৬৪২ জনের মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ৫৩৩ জন। শতকরা হার ২০.১৭। ছয়দিনে

মারা গেছেন ২৪ জন। এই ২৪ জনের মধ্যে করোনা পজিটিভ ছিল ৬ জন, আর উপসর্গে মৃত্যু ছিল ১৮ জন। বাকি সংখ্যক মৃত্যু ও শনাক্ত ছিল ১২ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত চারদিনে। এই চারদিনে শনাক্তের হার ছিলো ৩০.৬০ শতাংশ। এই হিসাবই বলে দিচ্ছে চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি কতোটা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।

কিন্তু কেনো, কোন্ মাজেজায় হঠাৎ চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতির এতোটা উন্নতি হয়ে গেলো? যদিও জাতীয়ভাবেও উন্নতি হচ্ছে। তবে চাঁদপুরে এতো দ্রুত উন্নতি হওয়া তথা করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় বিষয়টি এখন সচেতন মানুষ অনেকের মুখে মুখে। এটি অনেকের কাছে মিরাক্কেল মনে হচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা হয় চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ও করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহর সাথে। তিনি প্রথমেই পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করেন। এরপর তিনি বলেন, আসলে মানুষ এখন অনেকটা সচেতন হয়েছে। গ্রাম-গঞ্জে ভাইরাসটা ছড়িয়ে পড়ায় এবং এবার গ্রামের মানুষ বেশি আক্রান্ত এবং মারা যাওয়ায় তাদের মধ্যে সচেতনতা এসেছে। আগে যেমন বলতো ‘গ্রামে করোনা নাই’, করোনাকে হেলাফেলা করে স্বাস্থ্য বিধি মানতো না, তা এখন অনেকটা কেটে গেছে। এটা সকলের সমন্বিত চেষ্টায়ই সম্ভব হয়েছে। জেলা প্রশাসক ইউনিয়ন ভিত্তিক যে কমিটি করে দিয়েছেন, সে কমিটির কার্যক্রম, টিকা প্রদান, প্রশাসন, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকলের সম্মিলিত কার্যক্রমের ফসলই আসলে এটি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করায় চাঁদপুরে এখন বলা যায় করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। সে জন্যে আমি আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপিসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের (যিনি ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড একটি হাসপাতালে কর্মরত) সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বললেন ভিন্ন ধরনের কথা। তিনি জানান, আসলে এই ভাইরাসটা প্রকৃতিগতভাবেই অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছে। এটা সংক্রমিত হতে হতে এখন দুর্বল হয়ে গেছে। যেহেতু গবেষক তথা বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে কোনো কথা বলছেন না, তাই এমন বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া যাচ্ছে না। তবে এ কথা অবশ্যই বলতে হবে- এটি স্রষ্টার অপার করুণা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়