শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

পদ্মা-মেঘনার ব্যাপক ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে রাজরাজেশ্বরের শিলারচর গ্রাম
চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥

চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন যার পূর্ব দিকে রাক্ষুসে মেঘনা আর পশ্চিম দিকে প্রমত্তা পদ্মা। পদ্মা-মেঘনার যৌথ ভাঙ্গনে প্রায় প্রতিবছরই রাজরাজেশ্বরের আয়তন কমছে। কোনো না কোনো গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইউনিয়নের মূল ভূখণ্ডের মাঝখান দিয়ে সর্বনাশা পদ্মা আঘাত হেনে শিলারচর ও চিরারচর গ্রামকে আলাদা করে দিয়েছে। ২০২০ সালে বর্ষার সময় ভাঙ্গনের কবলে পড়ে একটি সাইক্লোন শেল্টার কাম হাইস্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তখনও বড় ধরনের ভাঙ্গনের মুখে পড়ে শিলারচর এলাকাটি। ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক স্কুল ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ৩ তলা পাকা নতুন ভবন (সাইক্লোন শেল্টার) পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। একই সাথে বসতবাড়ি হারায় শতাধিক পরিবার। তখন শিলারচরের বেশির ভাগ নদীগর্ভে চলে যায়। বর্তমানে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার এ এলাকায় বসবাস করছে।

প্রমত্তা পদ্মার স্রোতে গত ক’দিনের ভাঙ্গনে শিলারচরের বহু পরিবারের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙ্গনে হুমকির মুখে রয়েছে শিলারচর ও বলাশিয়া গ্রামের গুচ্ছগ্রাম। শিলারচর গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক পরিবার নদী ভাঙ্গন আতঙ্কের মধ্যেই দিনযাপন করছে।

নদী ভাঙ্গন বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারীর সাথে। তিনি জানান, ৩৯.৪০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের শিলারচর গ্রামের দুশ’ পরিবারের বসতভিটা ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত ক’দিনে দুটি গণকবরস্থান, দুটি মসজিদ, একটি ঈদগাহ ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই ইউনিয়নের মূল ভূখণ্ডের বেশিরভাগই নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙ্গনের বিষয়টি চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করা হয়েছে।

স্থানীয় অনেকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ইতিমধ্যে বহু পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। কেউ কেউ পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর জেলার তারাবুনিয়া ইউনিয়নে এবং মতলব উত্তর উপজেলার জহিরাবাদ ইউনিয়নের চরউমেদ গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। ভাঙ্গনের শিকার বিল্লাল হোসেন মাঝিসহ বেশ ক’জন চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, অন্য কোথাও জায়গা-জমি না থাকায় আপাতত পাশর্^বর্তী ইউনিয়নে আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। নদীতে পানি বৃদ্ধি এবং নদীর ঢেউয়ের কারণে ভাঙ্গন বেড়ে যায়। তাই নদী ভাঙ্গন রোধের স্থায়ী একটা ব্যবস্থা চায় এলাকাবাসী।

ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হাসেদ প্রধানীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি জানান, পূর্বেও নদীতে বাড়িঘর ভেঙ্গেছে, এবারও ভাঙ্গছে। গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আপাতত নিরাপদ দূরত্বে সরানো হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী আহমদ বকাউল বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে ইউনিয়নের বেশিরভাগ ওয়ার্ডই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। নদীর স্রোতে এবং অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করার কারণে আমরা ভাঙ্গন হুমকিতে। সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয় এলাকাবাসী কোথায় আশ্রয় নিবে?

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ বলেন, বিষয়টি আমাকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করেছেন। ভাঙ্গন প্রতিরোধের বিষয়ে এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রেফাত জামিল জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারিগরি কমিটি পদ্মার ভাঙ্গনসহ তিন নদীর মিলনস্থল রক্ষায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে স্টাডি করেছেন। তাদের রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিয়েছে। এখন তাদের স্টাডির বিষয়টি যাচাই-বাছাই করার জন্যে আমাদের ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডাব্লিউএম) খুব শীঘ্রই সার্ভে করতে আসবে।

তিনি আরো বলেন, কারিগরি কমিটিসহ ভাঙ্গন প্রতিরোধ নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের সাথে আলাপ করে আমি বুঝতে পেরেছি, ইচ্ছে করলেই হঠাৎ পদ্মার ওই অংশের ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা যাবে না। কেননা প্রতিরোধ ব্যবস্থা নির্ণয় করেই তবে ব্যবস্থা নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়