প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
কেনো এতো মৃত্যু, কেনো এতো লাশ? অনুসন্ধান-০৫
রোগী বাঁচবে না বলে হাসপাতাল থেকে দেয়া হয়নি অক্সিজেন
অনভিজ্ঞ সন্তানই করেছেন মায়ের চিকিৎসা ॥ অবশেষে মৃত্যু
বাঁচা মরা স্রষ্টার হাতে। এ কথা সকলেই জানে ও মানে। তবে মানুষের বাঁচার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। কিন্তু মতলব দক্ষিণ উপজেলার মাহফুজা বেগমকে মৃত্যুর আগেই মেরে ফেলেছেন চিকিৎসকরা। রোগী বাঁচবে না বলে হাসপাতাল থেকে দেয়া হয়নি অক্সিজেন, নেয়া হয়নি ভর্তি। মুমূর্ষু মাকে নিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বাড়ি ফিরেছিলেন ছোট ছেলে ইকবাল হোসেন। স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় নিজের ঘরেই চালু করেছেন অক্সিজেন সেবা, মাকে বাঁচাতে অনভিজ্ঞ সন্তানকেই হতে হয়েছিলো ডাক্তার। যথাযথ চিকিৎসাসেবার অভাবে ৭ দিন পর মৃত্যু হয়েছিলো মাহফুজা বেগমের। কী ঘটেছিলো সেই ৭ দিন? কেন সরকারি হাসপাতালে জায়গা হয়নি মাহফুজা বেগমের? কেন দেয়া হয়নি অক্সিজেন? এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনুসন্ধানে নামে চাঁদপুর কণ্ঠ। বেরিয়ে আসে আরও একাধিক ঘটনা। মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অব্যবস্থাপনা, কতিপয় ডিউটি অফিসার ও নার্সদের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে থাকছে আজকের অনুসন্ধান-০৫।
|আরো খবর
মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের খড়গপুর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী মাহফুজা বেগম দীর্ঘদিন ধরে আলসার জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। ২৪ জুলাই রাতে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে নেয়া হয় মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছিলো মাহফুজা বেগম কোভিড সাসপেক্টেড। তাকে চাঁদপুর সদরস্থ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে করোনা পরীক্ষা করাতে। ২৫ জুলাই জেনারেল হাসপাতালে তার নমুনা জমা দেয়া হয়। ২৭ তারিখ তার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। ২৮ জুলাই মাহফুজা বেগমের শ্বাসকষ্ট বাড়ায় তাকে ফের নিয়ে যাওয়া হয় মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
উপজেলা হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তার বলেছিলেন, 'আপনার মায়ের অবস্থা খারাপ। এ রোগী আর বাঁচবে না। বাড়িতে নিয়ে যান।' কথাটি একজন চিকিৎসকের জন্য একটি ঘোষণা হলেও একজন সন্তানের জন্য ছিলো পাহাড়সম কষ্টের। মাহফুজা বেগমের ছেলে ইকবাল হোসেন অনুরোধ জানিয়েছিলেন, আপাতত তার মাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার জন্য। ডিউটি অফিসার বলেছিলেন, হাসাপাতালে অক্সিজেন নেই। এই রোগী অক্সিজেন দিলেও বাঁচবে না। উনারে বাড়ি নিয়ে যান।
মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন সন্তান ইকবাল হোসেন। বাড়ি যাওয়ার সময় মা সন্তানকে বলেছিলেন, 'কিরে বাবা আমারে ডাক্তার দেখাবি না? আমার অনেক কষ্ট হইতাছে, অক্সিজেন দিবি না?’ মায়ের প্রশ্নের উত্তর জানা ছিলো না ইকবাল হোসেনের। দ্রুত প্রসঙ্গ পাল্টে মায়ের কপালে হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, ‘আল্লাহরে ডাকেন মা। আল্লাহই ভালো করবো।’
শ্বাসকষ্টে ভোগা মা চোখের সামনে দম আটকে মারা যাবেন তা মানতে পারেননি তিনি। পরদিন বিষয়টি শেয়ার করেন মতলব দক্ষিণ উপজেলার অক্সিজেন সরবরাহকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নজরুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম শান্তের সাথে। চিকিৎসকরা মুখ ফিরিয়ে নিলেও নিরাশ করেননি এই স্বেচ্ছাসেবী। ইকবাল হোসেনকে ধৈর্য ধারণ করতে বললেন। আপাতত মায়ের শ্বাসকষ্ট কমাতে ডাক্তারের পরামর্শক্রমে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে বললেন।
নারায়ণপুর ইনসাফ হসপিটালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আরিফুল ইসলাম শান্ত ‘নজরুল ইসলাম স্মৃতি সংসদ’ থেকে মাহফুজা বেগমের বাড়িতে পাঠালেন অক্সিজেন সিলিন্ডার। পালস অক্সিমিটার দিয়ে পালস মেপে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী মাহফুজা বেগমকে দেয়া হয়েছিলো অক্সিজেন। চার ঘণ্টার মধ্যে মাহফুজা বেগমের পালসের উন্নতি হলো। তিনি স্বাভাবিক হলেন। কথা বললেন সন্তানের সাথে। অক্সিজেন সাপোর্টে মায়ের সুস্থতা দেখে ইকবাল হোসেন নিজেই কিনে ফেললেন একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার।
হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেছিলেন, মাহফুজা বেগম পরদিনই মারা যাবেন। অথচ পরদিন তিনি আগের চেয়ে সুস্থ হয়ে কথা বলেছেন সন্তানের সাথে। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন, হাসপাতালের ডাক্তাররা যখন মায়ের ভর্তি নিচ্ছেন না, দিচ্ছেন না কোনো সেবা, তাই তিনি নিজেই পালন করবেন চিকিৎসকের ভূমিকা। সিলিন্ডার কী করে চালাতে হয় জেনে নিলেন তা। পালস কত থাকলে কতটুকু অক্সিজেন দিতে হবে তাও জেনেছেন ফোনে ফোনে। সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে গেলে হাজীগঞ্জ থেকে রিফিল করে আনতেন। মায়ের শ্বাসকষ্ট বাড়লে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতেন। অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে আবার দৌড়াতেন রিফিলের জন্য। জ্বর, স্বর্দি বাড়লে দৌড়ে যেতেন ফার্মেসিতে। রোগের বর্ণনা অনুযায়ী ঔষধ এনে খাওয়াতেন মাকে। এভাবে টানা ৭ দিন একাই মাকে বাঁচানোর সংগ্রাম চালিয়ে যান ইকবাল হোসেন।
কখনও মায়ের শয্যা পাশে বসে কেঁদেছেন, কখনও মায়ের মুখে হাসি দেখে হেসেছেন। এভাবে ৭ দিন পার করার পর ৪ আগস্ট শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি বুকে ব্যথা উঠে মাহফুজা বেগমের। শ্বাসকষ্ট হলে কী করবেন তার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ইকবাল, জ্বর-সর্দি হলে কী করবেন তা জানা ছিলো তার, কিন্তু বুকে ব্যথা উঠলে কী করবেন তা তো জানা ছিলো না, জানার কথাও নয়। সেদিন মাহফুজা বেগমের বুকের ভেতর কী যে অসম্ভব ব্যথা হয়েছিলো তা তার চিৎকারে কিছুটা হলেও অনুধাবন করেছিলেন ইকবাল হোসেন। পাগলের মত মাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, 'মা! মাগো! আল্লাহরে ডাকেন। আল্লাহ ছাড়া আমাগো আর কেউ নাই...’। ইকবাল অক্সিজেন দিতে চাইলেন মায়ের মুখে। এবার আর মা অক্সিজেন মুখে রাখছেন না। হাত দিয়ে টেনে খুলে ফেললেন, অস্থিরতায় অনবরত দীর্ঘশ্বাস নিতে নিতে এক সময় চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলো মাহফুজা বেগমের শ্বাস-প্রশ্বাস।
মৃত্যুর পর শোকে পাথর হয়ে গেছেন ইকবাল হোসেন। দেশের চিকিৎসা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর ঘৃণা জন্মানো হয়তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। জমাট বাঁধা কষ্ট নিয়ে বুক ভরা অভিমান নিয়ে ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি কাউরে কোনো দোষ দিমু না। সব দোষ আমার ভাগ্যের। আল্লাহ হয়তো আমার মায়ের মৃত্যু এভাবেই লিখেছেন, তাই মা এভাবে মারা গেছেন। আমরাতো আর ডাক্তার না, তবুও মায়েরে বাঁচানোর সব চেষ্টাই করেছি। নিজেরা ডাক্তার হইলে হয়তো মায়ের এভাবে মরণ লাগতো না। এত কইরা হাসপাতালে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) কইলাম। মারে একটু দেখেন। তারা কয় অক্সিজেন নাই, অন্য ব্যবস্থা করেন। যাক, আমার মা মারা গেছেন, আর যেনো কারো মা এইভাবে না মরেন। আমি মা হারাইছি, আমি জানি মায়েরে হারানোর কী কষ্ট।’ -কথাগুলো বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। তবে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নজরুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের প্রতি।
মাহফুজা বেগমের মৃত্যুর বিষয়ে নজরুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম শান্ত বলেন, রোগীর মৃত্যুর আগেই রোগীকে মেরে ফেলা উচিত নয়। সাধারণ মানুষের শেষ ভরসা সরকারি হাসপাতাল। সেখানে গিয়ে কাক্সিক্ষত চিকিৎসা না পাওয়াটা দুঃখজনক। সেদিন মাহফুজা বেগমকে হাসপাতাল ভর্তি করালে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হয়তো তিনি সুস্থ হয়ে উঠতেন।
এ বিষয়ে গত ১১ আগস্ট কথা বলা হয় মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম কাউছার হিমেলের সাথে। তিনি জানান, ২৮ জুলাই হাসপাতালে ৫৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত থাকার কথা। করোনা বেড ২০টির মধ্যে খালি ছিলো বেশ কয়েকটি। মাহফুজা বেগমসহ কোনো রোগীকে অক্সিজেন নেই বলে জরুরি বিভাগ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে এই তথ্য তাঁর জানা নেই। মাহফুজা বেগমের মত আর যেন কেউ অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতাল না ছাড়েন এ বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানানোর পরও মিলেনি সমাধান। পরদিন ১২ আগস্ট আবারো ঘটে একই ধরণের আরো একটি ঘটনা। অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। বাংলাদেশ পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জে নিয়োজিত পুলিশ সদস্য জাহিদুল ইসলাম সোহেলের মা অসুস্থ হয়ে ১২ আগস্ট ভর্তি হন মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তার অক্সিজেন লেভেল ৮০ তে নেমে যাওয়ার পরও তাকে দেয়া হচ্ছিলো না অক্সিজেন সাপোর্ট। কর্মরত চিকিৎসককে বারবার বলার পরও অক্সিজেন দেয়া হয়নি রোগীকে। নিজ কর্মস্থল থেকে ছোট ভাইয়ের মোবাইল ফোনে কথা বলেন দায়িত্বে থাকা নার্সের সাথে। নিজের পরিচয় দিয়ে অনুরোধ করেন তার মাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়ার জন্য। তাতেও মিলেনি সমাধান। যখন মায়ের অক্সিজেন লেভেল ৭৫-এ নেমে আসে তখন পুলিশ সদস্য জাহিদুল ইসলাম আবারো কথা বলেন নার্সের সাথে। এবার বিনয়ের সাথে নার্সকে নিজের বোন সম্বোধন করে বলেন, ধরে নিন যিনি কষ্ট পাচ্ছেন তিনি আমার মা নয়, আপনার মা। আপনি আমার বোনের মত। প্লিজ মাকে একটি অক্সিজেন ম্যানেজ করে দিন। প্রত্যুত্তরে নার্স বলেছিলেন, সময় হলে দিবো। আপনি কি আমার চেয়ে বেশি বুঝেন নাকি?
হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নজরুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের কাছে অক্সিজেন সংগ্রহ করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কর্মরত সেই নার্সকে জাহিদুল ইসলাম সোহেলের ছোট ভাই অনুরোধ করেছিলেন, অক্সিজেনটি পালস অনুযায়ী সেটিং করে দিতে। তাতেও সাড়া দেননি নার্স। দেখিয়ে গেছেন নিজস্ব ব্যস্ততা। নিজের মায়ের ক্রমাগত স্বাস্থ্য অবনতির পরও চিকিৎসা না পেয়ে যখন শিকার হচ্ছেন চরম অবহেলার তখন আর ঝুঁকি নেননি। ওই দিনই ঢাকাস্থ বাংলাদেশ পুলিশ হাসপাতালে রেফার করে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। নেয়ার সাথে সাথেই অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়। অথচ উপজেলা হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখিয়ে রোগীকে কয়েক মিনিট নেবুলাইজার দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছিলেন কর্মরত চিকিৎসক।
এ বিষয়ে ১৫ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মত কথা বলা হয় হাসপাতালে কর্মরত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম কাউছার হিমেলের সাথে। পুলিশ সদস্যের মায়ের অক্সিজেন না পাওয়ার বিষয়টি কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতে চাননি তিনি। বারবারই বলেন বিষয়টি তথ্য বিভ্রাট। আমার হাসপাতালে অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি নেই। যে কোনো শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগী ভর্তি হলেই তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। তাহলে কেন ওই রোগীকে অক্সিজেন দিবে না? ১২ আগস্টের ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা বলে সমস্যা কোথায় তা চিহ্নিত করবেন বলে জানান।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ১২ আগস্টের ঘটনার বিষয়ে অবগত নন বললেও স্বেচ্ছাসেবী আরিফুল ইসলাম শান্ত ও আল-আমিন মিয়াজি ওই দিনই হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের বিষয়টি নিয়ে ওই কর্মকর্তা ডাঃ হিমেলের সাথে সরাসরি কথা বলেছেন বলে জানান। অক্সিজেন না থাকায় বাহির থেকে যে সিলিন্ডার নিয়ে গিয়েছিলেন সেটিও তাকে জানানো হয়েছিলো বলে চাঁদপুর কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন এই স্বেচ্ছাসেবীরা।
‘২৮ জুলাই মাহফুজা বেগম হাসপাতালে এসে অক্সিজেন না পাওয়া ও তার ভর্তি না নেয়ার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি-না’ জানতে চাইলে ডাঃ গোলাম কাউছার হিমেল বলেন, আমি খোঁজ নিয়েছি। ২৮ জুলাই ইমারজেন্সি রুমে মাহফুজা আক্তার এসেছিলেন সত্যি, তবে ডিউটি অফিসার নয় অন্য কেউ ইকবাল হোসেনকে অক্সিজেন না থাকা ও ভর্তি করানো যাবে না বলে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন।
ডিউটি অফিসার যদি ‘না’ বলেন, তবে সেদিন কে বসেছিলেন ডিউটি অফিসারের চেয়ারে? ইকবাল হোসেন যখন অসুস্থ মাকে নিয়ে ইমার্জেন্সি কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান, তখন কোন্ ভরসায় বিদায় দিয়েছিলেন ডিউটি অফিসার? হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুমে ভুল তথ্য প্রদানকারী বহিরাগত কেউ থেকে থাকলে তাদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব কার? প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করতে পারলেই দূর হবে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কৃত্রিম অক্সিজেন সংকট। হাসপাতালে বহিরাগতদের প্রভাব বিস্তার শুধু এই উপজেলাতেই নয়, আরো অনেক উপজেলার হাসপাতালেই ঘটছে অহরহ। একটি উপজেলার শুধু ইমার্জেন্সি রুমই নয়, রাতের বেলা করোনা ইউনিট চালানো হয় ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে। এমন তথ্যও বেরিয়ে এসেছে চাঁদপুর কণ্ঠের অনুসন্ধানে। দিনের আলোতে যা ফিটফাট রাতের অন্ধকারে তা সদরঘাটে রূপ নেয়। ভাড়াটিয়া লোক দ্বারা পরিচালিত করোনা ইউনিটের অনিয়ম ও রোগীদের হতাশার কথা নিয়ে পরবর্তী সংখ্যায় থাকছে অনুসন্ধান-০৬। জানতে চোখ রাখুন চাঁদপুর কণ্ঠে।
উপজেলা হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুত থাকলেও ‘অক্সিজেন সিলিন্ডার’ কোনো কোনো স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে হাতের মোয়ার মতই। যাকে ইচ্ছে দিচ্ছেন, যাকে ইচ্ছে দিচ্ছেন না। কতোটা নির্দয় ও দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকে অক্সিজেন না দিয়ে বলা হয় 'উনিতো মরেই যাবেন, অক্সিজেন দিয়ে কি লাভ?' এ ধরণের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে মাহফুজা বেগমের মত প্রাণ হারাবেন অনেকেই। চাঁদপুর কণ্ঠের অনুসন্ধানে সর্ষের ভূত বের হচ্ছে একে একে। সেই ভূত দূর করতে প্রশাসন কতটা উদ্যোগী হবেন-তা-ই দেখার অপেক্ষা।