প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
কাগজে কলমে মাদ্রাসার সম্পত্তি ৯৭.০৫ শতক। কিন্তু সর্বশেষ চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের জরিপে মাদ্রাসার সম্পত্তি দখলে পাওয়া যায় ৩৫.৪২ শতক। মাদ্রাসার বাকি সম্পত্তি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের দখলে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের দেয়া তদন্তে তা প্রমাণিত হলেও এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা ও অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়নি। বরং প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের পদ ফিরিয়ে দিতে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ একটি চক্র ভুয়া তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে তাকে বৈধ করার অপচেষ্টা করেন। যদিও সর্বশেষ সেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকেও সরে যেতে হয়। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ছাদেকিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার।
জানা গেছে, ইসলামপুর ছাদেকিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সম্পত্তি আত্মসাতের বিষয়ে অভিযোগের আলোকে ২০০৭ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিন তদন্ত করেন। তদন্তে তিনি মাদ্রাসার দখলে ৩৫ শতাংশ জমি পান। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছাদেক মিয়া সম্পত্তি আত্মসাৎ করার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে লিখিত পাঠান। ওই চিঠির আলোকে ২০০৮ সালের ২০ মার্চ আবু ছাদেক মিয়াকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পদ থেকে অপসারণ করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা জানায়, আবু ছাদেক মিয়া ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিন দফায় ৭৫.০৪ একর এবং ১৯৯৬ সালে এলাকার অন্যরা ১৭ শতক জমি দান করেন ইসলামপুর ছাদেকিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসাকে। কিন্তু ২০০৭ সালে আনীত অভিযোগে প্রকাশ ছাদেক মিয়া নিজে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন সাড়ে ৬২ শতাংশ। এদিকে ২০১৮ সালে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোস্তফা কামালসহ একটি চক্র আবু ছাদেক মিয়াকে বাঁচাতে ভুয়া তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে। ভারপ্রাপ্ত সুপার ওই বছরের নভেম্বর মাসে মাদ্রাসা বোর্ডের রেজিস্ট্রারকে লিখিত চিঠিতে উল্লেখ করেন, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবু ছাদেক মিয়ার দখলে মাদ্রাসার কোনো সম্পত্তি নেই এবং একই সাথে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পদ ফিরিয়ে দিতে সুপারিশ করেন।
যদিও মাদ্রাসার বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হালনাগাদ ভোগ দখল সম্পত্তি মাপা হয়। এতে মাদ্রাসার দখলে উত্তর ও দক্ষিণে ১৩৯ ফুট এবং পূর্ব পশ্চিমে ১১১ ফুট পাওয়া যায়। যার পরিমাণ ৩৫.৪২ শতাংশ। বাকি সম্পত্তি এখনো আবু ছাদেক মিয়ার দখলে।
আবু ছাদেক মিয়া মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ২০০৮ সালে আমার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পদ বাতিল হয়নি। আমি ২০১৮ সালে মাদ্রাসা বোর্ডের কাছে আবেদন করি। সেখানে আমি মাদ্রাসা বোর্ডকে বলি, আমার দখলে মাদ্রাসার কোনো সম্পত্তি নেই। সে মতে মাদ্রাসা বোর্ডের নির্দেশে মাদ্রাসার তদন্ত কমিটি তদন্ত করে সত্যতা পায়, আমার দখলে কোনো সম্পত্তি নেই। এ মর্মে তারা রেজুলেশন করে একটি প্রতিবেদন মাদ্রাসা বোর্ডের কাছে পাঠায়। আমি কয়েকবার মাদ্রাসার রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করি। তখন তারা বিষয়টি দেখবে বলে আমাকে জানান।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মোস্তফা কামাল বলেন, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবু ছাদেক মিয়ার দখলে কোনো সম্পত্তি নেই মর্মে রেজুলেশন এবং শিক্ষা বোর্ডে চিঠি দিয়েছি সত্য। আমি নিজে বাঁচার জন্য করেছি। তিনি আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন, এই প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন, এখন কিছুই করার নেই।
মাদ্রাসার বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোঃ আবদুস সালাম আজাদ বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর জানতে পারি মাদ্রাসার সম্পত্তি নিয়ে এই ধরনের অবস্থা। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবু ছাদেক মিয়াকে ২০০৮ সালে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের রেজিস্ট্রার সদস্য পদ বাতিল করেন। এই পর্যন্ত তিনি বহু মামলা ও আবেদন করেছেন। কোন কিছুই তার পক্ষে যায়নি। এখনো মাদ্রাসার সম্পত্তি তার দখলে রয়েছে। বর্তমান কমিটিও মেপে সত্যতা পেয়েছে। সর্বশেষ শৃঙ্খলার স্বার্থে গত ২৬ জুলাই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে।