শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৩, ০০:০০

অনেকটাই ফাঁকা পড়ে আছে বাখরপুর গুচ্ছগ্রাম ॥ দখলে স্থানীয়  দালাল চক্র
স্টাফ রিপোর্টার ॥

চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চরে সবার জন্যে বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ‘বাখরপুর গুচ্ছ গ্রাম’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। এতে নির্মিত হয় ৫০টি ঘর। ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০টি ঘরে দশটি পরিবার বসবাস করলেও এখনো ফাঁকা পড়ে আছে আরো ৪০টি ঘর। এসব ঘরে লোকজন না থাকায় স্থানীয় সংঘবদ্ধ দালাল চক্র তাদের নামে ঘর আছে বলে অসহায় লোকদের কাছ থেকে নগদ অর্থ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নদী ভাঙ্গনের কারণে সে জায়গা অনেক দুর্গম চর এলাকায় হওয়ায় অনেক পরিবার যেতে চাচ্ছে না। আবার ফাঁকা পড়ে থাকা ঘরগুলোর স্থানে স্থানীয়ভাবে অপরাধপ্রবণতার কথাও শোনা যাচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন বলছে, স্থানীয়ভাবে প্রথম যে তালিকা দিয়েছে সেসব তালিকার ৯ জনকে ঘর দেয়া হলেও তারা ওইসব ঘরে উঠেনি।

সম্প্রতি সরেজমিন ওই গুচ্ছগ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ১ থেকে ৯ নম্বর পর্যন্ত ঘরগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। এছাড়া বাকি ঘরগুলোর মধ্যে ১০ পরিবার বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করছে এবং কিছু ঘরে তালা। আবার ক’টি ঘরে বহিরাগত লোকজনকেও থাকতে দেখা গেছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রফিকুল ইসলাম জানান, এই প্রকল্পের মাটি কাটার কাজ আমরা করেছি। প্রথম মাটি কাটার পর বর্ষা চলে আসে। পরবর্তীতে থাকার উপযোগী করার জন্যে দ্বিতীয়বার মাটি কাটা হয়। আর ৫০টি ঘর নির্মাণ করতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৭৫ লাখ টাকা।

গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম জানান, এখানে সচ্ছল ব্যক্তিদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে। নির্মাণকৃত ঘরের মধ্যে অনেক ঘরই এখন পর্যন্ত ফাঁকা। স্থানীয় বাসিন্দা মনা শেখ, খলিল গাজী, সাদ্দাম, কালু মাস্টার ও পগু গাজী বেশ কয়েকটি ঘর তাদের দখলে রেখেছে। এসব ঘর তারা তাদের বলে দাবি করে এবং যারা টাকা দিবে তাদেরকে দিবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে। এছাড়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ইমাম হোসেন ঘর বরাদ্দের পর বেশ ক’জনের কাছ থেকে ২ হাজার থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা নিয়েছে।

ওই এলাকার গৃহহীন খুকি বেগম জানান, তাকে ঘর দেবে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে মেহেদী তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঘর পাননি।

প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে গুচ্ছগ্রামের একটি ঘরে থাকেন আমেনা বেগম (৩৫)। তিনি জানান, তার নামে ঘর বরাদ্দ হয়নি। ঘর খালি পড়ে আছে, সে জন্যে তিনি থাকেন। স্থানীয় লোকজন যাদের ঘর-বাড়ি আছে, ছেলে সন্তান বিদেশে থাকে এমন লোকদের তালিকা করে ঘর বরাদ্দ দিয়েছে। তদন্ত করলে সত্যতা পাওয়া যাবে। ঘর দেয়ার কথা বললে দালালরা একটি ঘরের জন্যে ১০-২০ হাজার টাকা দাবি করে আসছে বলে জানান খুকি।

গুচ্ছগ্রাম এলাকার বাসিন্দা নবু গাজী বলেন, মেঘনায় ভেঙ্গে মাত্র দুই বছর পরেই জায়গাটি ভেসে উঠে। সেখানে সরকারিভাবে গুচ্ছগ্রাম তৈরি হয়। কিন্তু এসব জমির প্রকৃত মালিক কলিম গাজীর বংশধর কামরুল, নজরুল ও আমিনুল ইসলাম। তাদের পক্ষে আমি মামলা করলে আদালত আমাকে ১০টি ঘর দেয়ার জন্যে নির্দেশ দেয়। এখনো সেসব ঘর উপজেলা থেকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।

এই বিষয়ে কথা বলার জন্যে চান্দ্রা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ইমাম হোসেনকে তার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন দেয়া হয়। তিনি ব্যাংকে আছেন, পরে কথা বলবেন বলে জানান। কিন্তু ১ ঘন্টার অধিক সময় অপেক্ষা করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি এবং তিনি মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে রাখেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা শাহনাজ বলেন, তিনি এই উপজেলায় যোগদানের পূর্বে গুচ্ছগ্রামের ৭০% ভাগ কাজ হয়। পরবর্তীতে বাকি ৩০% কাজ সম্পন্ন হয়। স্থানীয়ভাবে যে তালিকা দেয়া হয়েছে ওই তালিকার মধ্যে প্রথমে ৯জনকে ৯টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু তারা ওই ঘরগুলোতে উঠেননি এবং উঠবেন না বলে জানিয়েছেন। এখন আমরা ওই ঘরগুলো নতুন করে বরাদ্দ দেবো।

দালাল সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে এক ব্যক্তির নামে একাধিক ঘর দেয়ার বিধান নেই। যাদের নাম বলা হয়েছে, তাদেরকে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ডেকে আনা হবে। সার্বিক বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন খোঁজ-খবর নিবে। আর যারা জমির মালিক তাদেরকে আদালত ১০টি ঘর দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়