বুধবার, ০৮ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

শোকে-সংগ্রামে বাঙালির আগস্ট

পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

শোকে-সংগ্রামে বাঙালির আগস্ট
অনলাইন ডেস্ক

আগস্ট বাঙালিকে শোক হতে শৌর্যের দীক্ষা দিয়ে গেছে। আগস্টের রক্তক্ষরণ বাঙালির জন্যে এক মহা শিক্ষণের অধ্যায় হয়ে আছে। মুজিবীয় দর্শনকে বাঙালির উন্নয়ন চেতনায় সম্পৃক্ত করার প্রজ্ঞা আগস্ট আমাদের দিয়ে যায়। মুজিব চেয়েছিলেন চীন হতে স্বচক্ষে দেখে আসা দ্বিতীয় বিপ্লবের ফসলকে বাঙালির জাতীয় জীবনে প্রয়োগ করবেন। তাঁর দর্শন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। মুজিব যা ভেবে গেছেন আজ হতে পঞ্চাশ বছর আগে, তা এখন ভাবছে বাকি বিশ্ব। দুহাজার তিরিশের এসডিজি স্টেশনে পৌঁছানোর জন্যে পৃথিবীর একশ’ তিরানব্বইটি দেশ আজ সব রকমের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়ার প্রত্যয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে। মুজিব চেয়েছিলেন ক্ষুধা হতে মুক্তি, দারিদ্র্য হতে মুক্তি। মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দ্বিতীয় বিপ্লবের বীজ বপনের কোনো বিকল্প নেই। মুজিব একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের কথা ভেবেছিলেন। তিনি নয়াচীনকে দেখে এসেছেন, মানুষগুলো কতো সৎ, কতো দেশপ্রেমিক। ভ্রমণকালে ট্যাক্সিতে ভুলে কলম ফেলে আসা মুজিব অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করেন, তাঁর কলমটি নিয়ে তাঁরই হোটেলরুমে উপস্থিত হয়েছেন সেই চীনা ট্যাক্সিচালক। মুজিব এই সততাকেই তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে বপন করতে চেয়েছিলেন। মুজিবীয় দর্শনে মাটির কাছাকাছি জীবনই আদর্শ জীবনের রূপ নিয়ে জীবন্ত হয়েছে। তিনি তাঁর প্রজ্ঞায় জেনেছিলেন, বাংলার কৃষক-শ্রমিক এরা দুর্নীতি করে না। দুর্নীতি করে শিক্ষিত সমাজ। বাস্তবিক, পঞ্চাশ বছর পরে, আজকের বাংলাদেশের চালচিত্রও একই। হোয়াইট কালার ক্রিমিনালে ভরে গেছে বাংলাদেশের হৃদয়। ব্যাংকের টাকা ব্যাংকে থাকে না, চলে যায় দুর্নীতিবাজের পকেটে।

দুর্নীতিমুক্ত তরুণ সমাজের জাগরণে মুজিব ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। তাঁর যে যুব আন্দোলন, তাতে দেশপ্রেমই ছিল মুখ্য। যুবকদের চোখে ও মনে জাতীয়তাবাদের যে স্বপ্নবীজ তিনি রোপণ করেছেন, তাতে দুর্নীতির কোনো স্থান নেই, আছে কেবল সত্য ও সুন্দরের আরাধনা। মুজিবীয় দর্শনে সমবায় কৃষির আবেদন ছিল অপরিসীম। তিনি জমির বিভাজনে বিশ^াসী ছিলেন না। বরং সমবায় কৃষির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ও বন্টনে বিশ^াসী ছিলেন। মুজিববাদে সংস্কৃতি ও সাহিত্যের স্থান ছিল অতিউচ্চে। তিনি যেমন একদিকে ‘কাণ্ডারি হুঁশিয়ার’ কবিতাকে মনে গেঁথে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘আত্মত্রাণে’ খুঁজে পেতেন শক্তি, তেমনি অন্যদিকে বার্ট্রান্ড রাসেলের দর্শনে তাঁর পাঠপিপাসা মিটত। মুজিবীয় স্বপ্নে শ্রেণি-বৈষম্যের যেমন কোনো স্থান ছিল না, তেমনি আমলাতন্ত্রের প্রাধান্যও ছিল না। মুজিবের বাঙালি জাতীয়তাবাদে কৃষকের যতোটুকু সম্মান, শিল্পমালিকেরও একই সম্মান।

একজন মুজিব লক্ষ মুজিবের কথা ভাবতেন। একজন মুজিব কোটি বাঙালির প্রেমে বুঁদ হয়ে ছিলেন। একজন মুজিব তাঁর বুকের ভেতরে আস্ত একটি মানচিত্রকে প্রেমের পুষ্টি দিয়ে লালন করে গেছেন। আগস্ট সেই মানচিত্রের বুকে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিলেও সেই মানচিত্রের বিন্দুমাত্র নষ্ট করতে পারেনি। আগস্ট প্রাণ কাড়লেও প্রেম কাড়তে পারেনি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়