শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

মায়ের দেয়া পিঠা খাওয়ার আগেই শহীদ হওয়া সহযোদ্ধার স্মৃতি এখনও কাঁদায়
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবু তাহের। বাড়ি হাজীগঞ্জের দ্বাদশ গ্রাম ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামে। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর দিকে টগবগে এক তরুণ ছিলেন তিনি। বঙ্গন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ট্রেনিং করতে ভারতে চলে যান। দেশে এসে নিজ এলাকায় মুক্তিবাহিনীর সাথে মিলে বেশ ক’টি যুদ্ধে অংশ নেন পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে। ব্যবসায়ী এই বীর যোদ্ধা ৩ কন্যা সন্তানের জনক ও স্ত্রী আয়েশা বেগম সরকারি চাকুরিজীবী। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি উপজেলার নাসিরকোট শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজন ‘ বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : কেমন আছেন মুক্তিযোদ্ধাগণ’ আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। নিজের চোখের সামনে সহযোদ্ধা তাহেরের মৃত্যুর বিষয়টি ৫২ বছর পরেও তাঁকে নাড়া দেয়। আরো না বলা বহু কথা বলেছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা। যার একাংশ চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বছর ঘুরে আবার আসলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনার অনুভূতি কেমন?

এমএ তাহের : বিজয়ের মাস আসলে অনেক কথা, অনেক স্মৃতি মনে পড়ে। অনুভূতি বলতে কী বলবো, তারপরেও বলতে হয় ভালো-মন্দ নিয়ে আছি। ভালো বলতে বেঁচে আছি সেটাই ভালো, আর যুদ্ধে যাদেরকে হারিয়েছি তাদের জন্য সবসময় কষ্ট হয়। সেই কষ্টের কথা মনে হলে আর ভালো থাকতে পারি না।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সার্বিকভাবে আপনি কেমন আছেন?

এমএ তাহের : সার্বিকভাবে ভালো আছি। কারণ স্ত্রী, সন্তান নিয়ে জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করে আসছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : ৫২ বছর পূর্বের মুক্তিযুদ্ধের কোন্ স্মৃতি আপনার মনে এখনও জ্বলজ্বল করছে?

এমএ তাহের : আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার কোনাবন সীমান্ত দিয়ে ভারতে ট্রেনিংয়ে যাই। ২১দিন ট্রানজিট ক্যাম্পে থেকে সেখান অম্পিনগরে ক্যাপ্টেন জেকে শর্মার অধীনে ৪৭দিন ট্রেনিং করে আসামের মেলাঘর ২০দিন থেকে দেশে ঢুকি ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর সরাসরি এলাকা তথা নাসিরকোট, মুকুন্দসার, বোরখালসহ তৎসংলগ্ন এলাকায় মুক্তিবাহিনীদের সাথে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। ৭১ সালের নভেম্বর মাসের ঘটনা। নভেম্বর মাসের ৯ তারিখে আমরা মুক্তিবাহিনীর দলটি ছিলাম বাকিলা ইউনিয়নের বোরখাল বড় বাড়িতে। সে সময় শীতকাল থাকাতে সেদিন বলাখালের পাশের গ্রামের সুবিদপুর গ্রামের বাসিন্দা আমাদের সহযোদ্ধা তাহেরের মা তার ছেলে তাহেরসহ আমাদের সবার জন্য পিঠা বানিয়ে বড় বাড়ির ক্যাম্পে আসেন। তাহেরের মা যখন পিঠা নিয়ে ক্যাম্পে আসেন তখন তাহের ক্যাম্পের বাইরে থাকাতে তার মায়ের সাথে তার আর দেখা হয়নি। তাহেরের মা যখন পিঠা দিয়ে চলে যান তখন আমরা সবাই তাহেরের মায়ের আনা পিঠা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে খেয়ে ফেলি। তাহের আমার ক্লোজ হওয়ায় একটি মাত্র পিঠা কাগজ প্যাঁচিয়ে তাহেরের বিছানায় বালিশের নিচে রেখে দেই। তাহের ফিরে আসার পর পর মুকুন্দসার গ্রামে পাকবাহিনীর সাথে সরাসরি যুদ্ধ করতে আমাদের দলটি চলে যায়। সেদিন ছিলো ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর। মুকুন্দসার যুদ্ধে আমার পাশে থাকা তাহের পাকবাহিনীর গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। তাহেরকে মাটি দিয়ে ক্যাম্পে ফিরে আসি। এসে তাহেরের বিছানায় বসে তাকে ভাবতেই বালিশের পাশে কাগজে মোড়ানো সেই পিঠাটি আমার নজরে আসে। তাহের নেই, তার মায়ের পিঠা তার কিসমতে জুটলো না, এটা ভেবেই কান্না শুরু করে দিলাম। আমার কান্না দেখে ক্যাম্পের অন্যরাও স্থির থাকতে পারেনি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশের বর্তমান অবস্থায় আপনি কতোটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট?

এমএ তাহের : স্বল্প পরিসরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট। দেশের মানুষ ভালো থাকবে, শান্তিতে থাকবে এমন চিন্তা-চেতনা নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছি। প্রকৃত পক্ষে যে চিন্তা-চেতনা নিয়ে জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশ নিয়েছি-এ দেশের মানুষ সুখে থাকবে, কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে সে চিন্তা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। এমন দেখার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। এ জন্যে আমি অসন্তুষ্ট।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম/মৃত্যু। মাফ করবেন তবুও জানার ইচ্ছা আপনি আর কতোদিন বাঁচতে চান?

এমএ তাহের : বেঁচে থাকা তো আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। তবে দেশ স্বাধীন করেছি, সে হিসেব করলে উন্নত দেশের তালিকায় মাতৃভূমিটাকে দেখে মরার ইচ্ছা।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কী কথা রেখে যেতে চান?

এমএ তাহের : বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মকে বলবো, তোমরা যুদ্ধ দেখোনি, আমরা যুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়েছি, তোমরা দেশটাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসো, দেশের উন্নয়ন করো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়