মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল

অক্সিজেন অভাবে মারা যাচ্ছে রোগী

এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই নারীসহ তিনজনের মৃত্যু ॥ হাসপাতালে আনাই হচ্ছে একেবারে শেষ সময়ে : আরএমও

অক্সিজেন অভাবে মারা যাচ্ছে রোগী
মিজানুর রহমান ॥

‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকারণ্ডবুকের ব্যথা বুকে চাপাইয়ে নিজকে দিয়েছি ধিক্কার’ সেনা সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী হায়দার হোসেনের বেদনাদায়ক সেই গানটি খুব মনে করিয়ে দিচ্ছে বর্তমান করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে। করোনার ভয়াল থাবায় চারদিকে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। মানুষের আহাজারিতে চাঁদপুরের আকাশ ভারী হয়ে উঠছে। করোনা সংক্রমণের উপসর্গ ও পজিটিভ রোগীতে ঠাঁসা আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল। ঈদের পর থেকে প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী ভর্তি হচ্ছে এ হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে।

এমনকি সরকারি হাসপাতালে খালি স্থানে অতিরিক্ত বেডের (শয্যা) ব্যবস্থা করেও ঠেকানো যাচ্ছে না রোগীর ঢল। বেড না পেয়ে স্বজনরা এ হাসপাতাল থেকে নামিয়ে ঢাকার হাসপাতালে ছোটাছুটি করছে। যারা এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের অনেকেই করোনার সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন।

প্রতিদিনই চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের দেরিতে হাসপাতালে আনা হচ্ছে। তখন তাদের চিকিৎসা দেয়ার আর বেশি সময় হাতে থাকছে না। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে শয্যাসঙ্কটের পাশাপাশি অক্সিজেনের সঙ্কটও দেখা দিচ্ছে। এ সঙ্কট বাড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় চাঁদপুরে আরও ১৩ জন মারা গেছেন। এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই নারীসহ মারা গেছেন তিনজন। সরজমিনে হাসপাতালে গিয়ে এ তথ্য জানা যায়।

চাঁদপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। চাঁদপুর জেলার বড় এ হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসায় এখন অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে বলে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করছেন। বিভিন্ন সংগঠনের অক্সিজেনের ছোট সিলিন্ডার সরবরাহ এবং আবুল খায়ের গ্রুপের রিফিল অক্সিজেন প্লান্টেও সঙ্কট নিরসন হচ্ছে না। অক্সিজেনের জন্যে আবুল খায়ের গ্রুপের রিফিল সেন্টারে রোগীর স্বজনদের সিলিন্ডার নেয়ার জন্যে সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। এই সিরিয়াল রক্ষা করতে সেখানে মোতায়েন করা হয় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের।

রোগীর অক্সিজেন সঙ্কট, স্যাম্পল নিতে ও রিপোর্ট পেতে বিড়ম্বনা, চিকিৎসক খুঁজে না পাওয়া, দায়সারাভাবে চিকিৎসাসেবা দেয়া এসব অভিযোগ স্বজনদের।

এদিকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে বেসরকারি একটি হাসপাতালে নেয়ার পথে ঝিলন (৫২) নামে শহরের একজন বীমা কর্মকর্তা মারা গেছেন। অক্সিজেনের অভাবে তার মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। সোমবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

এর পরপরই এক ঘণ্টার ব্যবধানে মৃত্যু হয় দুই নারীর। দুপুর পৌনে দুটার সময় মিলন বেগম (৬০) নামে মতলবের এক নারীকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হলে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা তাকে মৃত বলে জানান। হাসপাতালে আনা হলেও অ্যাম্বুলেন্সেই মারা গেছেন এ নারী। তার বাড়ি মতলব দক্ষিণ উপজেলার ধনারপাড়ে। সে দুলাল প্রধানীয়ার স্ত্রী। অপরজনকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি দেয়ার কিছুক্ষণ পর মারা যান। তার নাম সুফিয়া খাতুন (৮০)। বাড়ি শাহরাস্তি উপজেলার হোসেনপুর। এদিন একাধিক রোগী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অনেকের অক্সিজেনের অভাব ও কোভিড চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

আগের দিন ১ আগস্ট রোববার দুপুর ১টা ৫৫ মিনিট হাসপাতালের ফ্লোরে ছটফট করে মরে গেছেন চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সিদ্দিক আলী সরকার। হাসপাতালে আনার পর তাৎক্ষণিক অক্সিজেন সাপোর্ট না পাওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা।

এ বিষয়ে আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ও করোনাবিষয়ক ফোকালপারসন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, হাসপাতালে আগে বেড ছিলো ৬০টি, এখন ১২০টি বাড়িয়েও রোগী সামাল দেয়া যাচ্ছে না। আসনের বিপরীতে ২০০ জন রোগী ভর্তি আছে, যাদের অনেককে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এতো রোগীর চাপ অক্সিজেন সঙ্কট থাকবেই, আমরা চেষ্টা করছি। অল্প সময়ে মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, এসব রোগীকে হাসপাতালে আনাই হচ্ছে শেষ সময়ে। যাদের অক্সিজেন লেভেল থাকে ৪৫।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হাবিব উল করিম চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, হাসপাতালে স্থাপিত লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টটি চালু হয়ে গেলে সঙ্কট অনেকটাই কেটে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়