প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৬
সড়কে ড্রেজার পাইপ সন্ত্রাস : যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা
চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন সড়কে ড্রেজার পাইপ বসিয়ে জলাশয় ভরাট করার যেনো হিড়িক পড়েছে। সড়কের ওপর দিয়ে এভাবে ড্রেজারের পাইপ বসানোর কারণে সড়কে নির্বিঘ্নে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এমন পাইপ বসানোটাই যেনো এখন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। খাল-বিল-পুকুর-ডোবা-নালা সহ বিভিন্ন জলাশয় ভরাটে বালু ব্যবসা জমজমাট। এই ভরাট কাজ করার জন্যে রাস্তার ওপর দিয়ে টানা হয় ড্রেজার পাইপ।
চাঁদপুর সদর উপজেলাসহ হাইমচর, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া, মতলব ও শাহরাস্তির নানা স্থানে সড়কের ওপর দিয়ে পাইপ টেনে জলাশয় ভরাট করতে বালু ব্যবসায়ীদের ড্রেজার সন্ত্রাস চলছে। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনেও এসবের দিকে নজর নেই প্রশাসনের। বালু ব্যবসায়ীরা এলাকাভিত্তিক নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে রাস্তার ওপর ড্রেজার পাইপ বসিয়ে জনদুর্ভোগ ও যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে যাচ্ছে।
এমনই জনদুর্ভোগের অভিযোগ উঠেছে হাইমচর উপজেলার বেড়িবাঁধ সড়কের।
সেচ প্রকল্পের হাইমচর অংশে গত একমাসেরও অধিক সময় সড়কের ওপর একাধিক ড্রেজার পাইপ রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা। যার ফলে প্রায় সময়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে ছোট-বড় যানবাহন। ৫ আগস্টের আগে এই ব্যবসায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত থাকলেও এখন ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে। যুবদলের স্থানীয় এক নেতাকে যুক্ত করা হয়েছে ড্রেজার ব্যবসায়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, আর্থিক সুবিধা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এই কাজে জড়িত রয়েছেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, হাইমচর উপজেলার আলগী নয়ানী সড়কের মোড়ে দীর্ঘ লাইনে বসানো হয়েছে ড্রেজার পাইপ। এখানে প্রায় সময় সিএনজি অটোরিকশা, অটোবাইক ও মালবাহী ট্রাক দুর্ঘটনার শিকার হয়।
স্থানীয় অটোবাইক চালক জাহাঙ্গীর বলেন, ড্রেজার পাইপে সড়ক উঁচু হওয়ার কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার হই। কিছুদিন আগে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আমার গাড়ির সামনের অংশ ভেঙ্গে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়ানীর স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী বলেন, এই ড্রেজার পাইপ এক সময় এক স্থানে বসানো হতো। বর্তমানে নয়ানী ও তার কিছু দক্ষিণে দুটি পাইপ সড়কের ওপরে বসানো হয়েছে। এসব ড্রেজার ব্যবসার নেতৃত্ব দেন আবুল কালাম পাটওয়ারী। তিনি আওয়ামী লীগের লোক হওয়ার কারণে বর্তমানে যুবদলের কয়েকজনকে এ কাজে যুক্ত করে ড্রেজার পাইপ সন্ত্রাসের মাধ্যমে বালু ভরাট বাণিজ্য চালু রেখেছেন।
তিনি আরো বলেন, এই স্থান ছাড়াও বাংলা বাজার ও নয়ানী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ সুড়ঙ্গ করে বসানো হয়েছে ড্রেজার পাইপ। কিছুদিন আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসব ড্রেজার মালিককে ডেকে নিয়ে কাগজে লিখিত রেখেছেন। সড়কের ক্ষতি হলে এর দায়িত্ব ড্রেজার ব্যবসায়ীরা নিবেন বলে অঙ্গীকার করেন।
অভিযুক্ত ড্রেজার ব্যবসায়ী আবুল কালাম পাটওয়ারী বলেন, আমি কারো কাছে অনুমতি নেইনি। নিজেই ড্রেজার পাইপ বসিয়েছি। আমার কারো কাছ থেকে অনুমতি নেয়া লাগে না। যেখান থেকে অনুমতি নেয়া দরকার সেখান থেকে নেয়া আছে। একই সাথে অভিযুক্ত এই ব্যক্তি এ বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হুমকি দেন এবং তিনি সড়কে ড্রেজার পাইপ বসিয়ে এই ব্যবসা চালিয়ে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন ।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর পওর শাখা-৩, হাইমচরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসান গাজী বলেন, যারা সড়কের ওপরে এবং সড়ক সুড়ঙ্গ করে ড্রেজার পাইপ বসিয়েছে, তাদের বিষয়ে গত বছরও থানায় অভিযোগ দিয়েছি। এ বছর আবারও তাদের তথ্য নেয়া হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা বলেন, সড়কের ওপরে ড্রেজার পাইপ বসানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকেশৗলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, সড়কে সুড়ঙ্গ করে পাইপ বসানো হলে সমস্যা নেই। তবে সড়কের ওপরে পাইপ বসানো হয়েছে জেনেছি। বিষয়টি ওই সড়কের দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে বলে ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশ দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, চাঁদপুরে দীর্ঘ বছর যাবত পুকুর- ডোবা-নালা সহ বিভিন্ন জলাশয় ও নিচু জায়গা বালু দিয়ে ভরাট করে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা চলে আসছে। এ কারণে শহর, বন্দর ও গ্রামের এক শ্রেণীর বালু ব্যবসায়ীরা আনলোড ড্রেজারের মাধ্যমে অনেক দূর থেকে সংযুক্ত পাইপ টেনে শহর কিংবা গ্রামের রাস্তার ওপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এই ড্রেজার পাইপ সন্ত্রাস থেকে বাদ যাচ্ছে না গ্রামীণ জনপদের রিং বাঁধ ও সেচ প্রকল্প বেড়িবাঁধও। রাস্তা সুড়ঙ্গ করেও টানা হচ্ছে ড্রেজার পাইপ। চরম জনদুর্ভোগ হলেও প্রশাসনের দৃষ্টি নেই সেখানে।