প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
হাজীগঞ্জের ৫নং সদর ইউনিয়নের সুবিদপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম। ২ ছেলে ২ মেয়ের জনক তিনি। ছেলেমেয়েরা চাকুরি ও পড়ালেখা করছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নিজে চাকুরি করেছেন। চাকুরি ছেড়ে দিয়ে টিম্বার ও স’মিল ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন তিনি। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজন ‘বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : কেমন আছেন মুক্তিযোদ্ধাগণ’ আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন বদরপুরে রেললাইন উপড়ে ফেলায় চারদিকে তার নাম জানাজানি হয়ে যায়। এ নিয়ে পরে ভারতে চলে যান ট্রেনিং করতে। আরো না বলা বহু কথা বলেছেন এই বীর, যার একাংশ চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :
চাঁদপুর কণ্ঠ : বছর ঘুরে আবার আসলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনার অনুভূতি কেমন?
খোরশেদ আলম : স্বাধীনতার দীর্ঘ এতো বছর পর অনুভূতি বলতে গেলে বলবো, আনন্দ আর বেদনা দুটোই রয়েছে। স্বাধীনতা পেয়েছি এটা আনন্দের, আর মা-বোনদের সম্ভ্রম হারিয়েছি সেটা বেদনার।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সার্বিকভাবে আপনি কেমন আছেন?
খোরশেদ আলম : বয়সের কারণে তেমন একটা ভালো নেই। তবে সামাজিক মর্যাদায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : ৫২ বছর পূর্বের মুক্তিযুদ্ধের কোন্ স্মৃতি আপনার মনে এখনও জ্বলজ্বল করছে?
খোরশেদ আলম : স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি তো অনেক, তবে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে দুটি ঘটনা কখনো ভুলবো না। ১৯৭১ সালের মার্চের ক’দিন পরের ঘটনা। তখনো এলাকায় রাজাকার সৃষ্টি হয়নি। মহামায়া এলাকায় মধুরোড রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে রেলের সেতুটি মুক্তিযোদ্ধারা উড়িয়ে দেন। এরপরেই পাক হানাদার বাহিনী রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ার ধরে এনে তাদের দিয়ে কাঠের পাটাতন তথা রেল স্লিপার লাগিয়ে সেতু মেরামত করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করে। পরে খবর পেয়ে আমরা চাচাতো-জেঠাতো পাঁচ ভাই সেই সেতুতে ফের গিয়ে কোরোসিন তৈল ও খড় দিয়ে কাঠের স্লিপার পুড়িয়ে রেলপথ অকেজো করে দেই। এর ক’দিন পরে হাজীগঞ্জ থানার শান্তি কমিটির সভাপতি টোরাগড়ের আনোয়ার হোসেন মিয়ার বাড়ির উত্তরে বদরপুরে রেলপথের তিন জোড়া রেললাইন খুলে ফেলে দেই। তারপর আমাদের সম্পর্কে জানাজানি হলে আমরা ট্রেনিং করতে ভারতে চলে যাই। সেই বছরের নভেম্বরে দেশে চলে এসে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নিতে গোপনে খবর পাই, মিত্র বাহিনী দেশে ঢুকবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশের বর্তমান অবস্থায় আপনি কতোটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট?
খোরশেদ আলম : সন্তুষ্টির চেয়ে বেশি অসন্তুষ্টি বেশি লাগে তখন, যখন দেখি স্বাধীনতা বিরোধীরা চক্রান্ত করে মাথাচাড়া দেয়। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা বিরোধী থাকবে কেন ?
চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম/মৃত্যু। মাফ করবেন, তবুও জানার ইচ্ছা, আপনি আর কতোদিন বাঁচতে চান?
খোরশেদ আলম : কতোদিন বাঁচবো জানি না। তবে বাঁচা মরা সৃষ্টিকর্তার ওপর ছেড়ে দিয়েছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কী কথা রেখে যেতে চান?
খোরশেদ আলম : স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে আদর্শের রাজনীতি করেছেন সেই আদর্শকে ধারণ আর লালন করে রাজনীতি করলে দেশে ত্যাগী রাজনীতিবিদ তৈরি হবে।