শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

আজ শহীদ রাজুর ৩২তম শাহাদাতবার্ষিকী
অনলাইন ডেস্ক

আজ ৩ ডিসেম্বর। ১৯৯০ সালের এ দিবসটি ছিলো অগ্নিঝরা। ওই দিন এরশাদ রিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে উঠে চাঁদপুর জেলা শহর যেন কাঁপছিলো। ৫ দিন পূর্বে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে লড়তে এ দিন সকাল ১০টা ৪০মিনিটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চাঁদপুর সরকারি কলেজ শাখার তৎকালীন নেতা ও কলেজের মেধাবী ছাত্র জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারী।

১৯৯০ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ২৭ নভেম্বর ঢাকার বিএমএ-এর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সামছুল আলম মিলন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিক্ষোভের দাবানল জ্বলে উঠে। তারই প্রেক্ষিতে পরদিন ২৮ নভেম্বর সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ওই মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারী। মিছিলটি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে চিত্রলেখা সিনেমা হল (বর্তমানে শহীদ রাজু চত্বর) মোড়ে আসামাত্রই কোনো প্রকার উস্কানি বা উত্তেজনা ছাড়াই পুলিশ মিছিলের ওপর গুলি চালায়। ওই সময় একটি গুলি মিছিলের সম্মুখভাগে থাকা জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারীর নাভীর নিচ দিয়ে শরীরে ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। তখন সময় ছিলো সকাল ১১টা ২০ মিনিট। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আহত রাজুকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে আসা হয়। চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে দিনভর চিকিৎসার পর গুলিবিদ্ধ জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারীর জ্ঞান ফিরে রাত ১০টায়। ওই দিন রাজুর চিকিৎসার জন্যে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন দেখা দিলে চাঁদপুরের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা স্বেচ্ছায় রক্ত দেয়ার জন্য হাসপাতালে ভিড় জমায়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও বয়দের ছিলো না কোনো অবহেলা। ৪১ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহের পর বেশির ভাগ রক্তই পুশ করা হয়েছিলো জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারীর শরীরে। দীর্ঘ চেষ্টার পরও রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যায়নি। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ৬ দিনের মাথায় ৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

তাৎক্ষণিক এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চাঁদপুর শহরে বিক্ষোভের দাবানল সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা। চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল করিম পাটওয়ারী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল আউয়াল, অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, সাবেক এমপি এম সফিউল্লাহ, অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকারের হস্তক্ষেপে ওই দাবানল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। হাজার হাজার শোকার্ত মানুষের শোক মিছিল ও জানাজা শেষে চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠের পশ্চিম পাশে ও শহীদ মিনারের ডান পাশে শহীদ জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারীকে সমাধিস্থ করা হয়।

জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারী ছিলেন চাঁদপুর শহরের বহুল পরিচিত আজিম পাটওয়ারী (বর্তমান আব্দুল করিম পাটওয়ারী বাড়ি)-এর মোঃ ফজলুর রহমান পাটওয়ারী জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং চাঁদপুরের সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারীর ভ্রাতুষ্পুত্রের ছেলে। ১৯৭৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারী জন্মগ্রহণ করে। মৃত্যু পর্যন্ত তার বয়স হয়েছিল ১৬ বছর ১০ মাস ২ দিন।

১৯৯৩ সালের ১৬ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সে সময়কার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুর সফরে আসলে শহীদ রাজুর বাসায় গিয়ে শহীদ রাজুর মা-বাবা ও ভাই-বোনের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং দীর্ঘ সময় কাটিয়ে তাদেরকে সান্ত¡না দিয়ে যান। ১৯৯৯ সালের ২৮ নভেম্বর ও ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল চাঁদপুরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা সরকারি সফরে এসেও শহীদ জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারীর পরিবারের খোঁজ-খবর নেন।

শহীদ রাজুর ৩২তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে পারিবারিকভাবে এবং শহীদ রাজু স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চাঁদপুর জেলা শাখা ও চাঁদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : সকাল ১০টায় কালোব্যাজ ধারণ ও শহীদ রাজুর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ। শহীদ রাজুর পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়কস্থ তালতলা পাটওয়ারী বাড়ি জামে মসজিদে শহীদ রাজুর রুহের মাগফেরাত কামনা করে বাদ আছর দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া শহীদ রাজুর ৩২মত শাহাদাতবাষির্কীতে শহীদ রাজু স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে শহীদ রাজুর স্মৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে ‘সাহসিক রাজু’ নামে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়