প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
উপজেলার হাসপাতালগুলোতে করোনার চিকিৎসা হলেও রোগী চলে আসছে চাঁদপুর শহরে
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পজিটিভ অথবা সাসপেক্টেড তথা করোনা উপসর্গ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও রোগীকে শহরেই নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে করে জেলা সদর হাসপাতালে রোগীর চাপ এখনো আগের মতই। যে সব রোগীকে স্থানীয়ভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব, সে সব রোগীকেও জেলা সদরে নিয়ে আসা হচ্ছে। এটা কারো কারো আত্মতৃপ্তি। আবার কেউ কেউ বলছেন উপজেলার হাসপাতালগুলোতে করোনা পজিটিভ বা উপসর্গ রোগীদের চিকিৎসা করাতে সংশ্লিষ্টরা তেমন একটা আগ্রহী নন। এ জন্য তারা জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
|আরো খবর
গত ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর চাঁদপুর জেলার সাত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার চিকিৎসার জন্য শয্যা নির্ধারণ করা হয়। তবে শাহরাস্তি উপজেলায় এর আগ থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীর চিকিৎসা চলছে। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ বেড করোনার জন্য ডেডিকেটেড করা হয়। অন্য ছয় উপজেলার মধ্যে হাইমচরে শুধু ১০ বেড করা হয়। বাদবাকিগুলোতে ২০ বেড প্রস্তুত রাখা হয়। কিন্তু দেখা গেছে যে, কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী তেমন একটা ভর্তি হচ্ছে না। একজন দুইজনের বেশি রোগী কোনো হাসপাতালেই নেই। গ্রামের সব রোগী আগের মত জেলা সদরেই নিয়ে আসা হচ্ছে। বর্তমানে জেলা সরকারি জেনারেল হাসপাতালে বেডের চেয়ে রোগী অনেক বেশি হওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে চরম হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা।
গত বছর দেশে যখন কোভিড-১৯ ভাইরাস জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন থেকেই চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়। তখন হাসপাতালের মূল ভবনের উত্তর পাশে তিনতলার একটি ছোট্ট পরিসরের ভবনকে ২৫ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। গত বছরের মাঝামাঝির দিকে রোগীর সংখ্যা যখন বাড়তে থাকে, তখন হাসপাতালের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলা পুরোটাকে আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। এখানে ৬০ বেডের আইসোলেশন ইউনিট করা হয়। এতেও স্থান সঙ্কুলান হয় না। করোনার দ্বিতীয় ধাপে যখন চাঁদপুরে মাত্রাতিরিক্ত রোগী বাড়তে থাকে, তখন হাসপাতালের তৃতীয় তলার পুরুষ, শিশু ও সার্জারি ওয়ার্ডকেও করোনার জন্য ডেডিকেটেড করা হয়। এখানেও নেয়া হয় ৬০টি বেড। এক পর্যায়ে ১২০ বেডেও কাভার দেয়া যাচ্ছিল না। জুলাই মাসের শেষ দিকে এসে ফ্লোরে, বারান্দায় রোগী রাখতে হয়। প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ১৮০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেসামাল হয়ে পড়ে। এই অবস্থা জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়। আর গ্রাম থেকে রোগী শহরে চলে আসার চিত্র শুধু চাঁদপুরে নয়, সারা দেশেই।
এমতাবস্থায় গত ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সকল জেলার সিভিল সার্জনদের সাথে জরুরি সভা করে। এ সভায় সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন ইউনিট খুলে সেখানে করোনা রোগীদের ভর্তি করতে এবং চিকিৎসা সেবা দিতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে গতকাল চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পজিটিভ এবং সাসপেক্টেড রোগী ভর্তি আছে। তবে ভর্তি সংখ্যা খুব বেশি নয়। একজন দুইজন করে। ৩১ জুলাইর হিসেব থেকে দেখা গেলো, করোনা পজিটিভ রোগী ফরিদগঞ্জ ও শাহরাস্তিতে ৩ জন করে, হাজীগঞ্জে দুইজন, আর অন্য উপজেলায় একজন করে ভর্তি। আর করোনা সাসপেক্টেড শাহরাস্তিতে ৫ জন এবং মতলব দক্ষিণে ৩ জন। বাকিগুলোতে একজন করে। এ চিত্রই বলে দিচ্ছে রোগী উপজেলার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছে না, চলে আসছে শহরে জেলা সদর হাসপাতালে।
এ ব্যাপারে রোগী এবং রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, উপজেলার হাসপাতালে করোনা রোগীকে চিকিৎসা দিতে ডাক্তাররা আন্তরিক নন। তারা প্রাথমিকভাবে দেখেই জেলা সদরে রেফার করে দেন। অথচ গ্রাম থেকে যে সব রোগী সদরে চলে আসে, তার এক চতুর্থাংশ উপজেলার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা দিতে পারে। তা না করে সদরে রেফার করে দেয়। ফলে জেলা সদর হাসপাতালে রোগীর চাপ এখনো আগের মতই।