মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২১, ০০:০০

তিনদিনের মধ্যে চালু হচ্ছে লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট
এএইচএম আহসান উল্লাহ/রাসেল হাসান ॥

চাঁদপুরে অক্সিজেন সংকট অচিরেই দূর হচ্ছে। এমন আশার কথা শুনালেন এ জেলার সিভিল সার্জন। চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে যে অক্সিজেনের তীব্র সংকট এবং এর ফলে যে মানুষ মারা যাচ্ছে সে বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং স্বাস্থ্য ডিজির সাথে কথোপকথনের বিষয়টি জানিয়ে সিভিল সার্জন এ আশার কথা জানান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির সাথে শিক্ষামন্ত্রীর কথা হলে ডিজি মন্ত্রীকে আগামী চারদিনের মধ্যে চাঁদপুরে অক্সিজেন প্লান্ট চালু হওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অক্সিজেন সাপ্লাই প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্র্রা অক্সিজেন লিমিটেডের এক কর্মকর্তা।

চাঁদপুরে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চলছে অক্সিজেনের তীব্র সঙ্কট। প্রতিদিন গড়ে ৬শ’ লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হলেও তার বিপরীতে পুরে জেলার জন্য মজুদ রয়েছে মাত্র ২৪০ লিটার। অক্সিজেনের অভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত বৃহস্পতিবার হাসপাতাল চত্বরেই অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন এক রোগী। অক্সিজেনের জন্যে হাহাকার করেও সংগ্রহ করতে পারেননি স্বজনরা। বুধবার রাত ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৮ জন রোগীর মৃত্যু ঘটেছে।

এমন পরিস্থিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ইউনিসেফ-এর উদ্যোগে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে নির্মিত লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট চালুই হতে পারে অক্সিজেন সংকটের একমাত্র সমাধান। এ ব্যাপারে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছেন চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাঁদপুরের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির সাথে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। দু’জনের আলোচনায় গুরুত্ব পায় চাঁদপুর লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট চালুর প্রসঙ্গ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি তখন শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে চারদিনের সময় চেয়েছেন। জানিয়েছেন ঢাকা থেকে লিকুইড অক্সিজেনের গাড়ি গিয়ে চাঁদপুরের প্লান্ট ট্যাংক ভর্তি করে দিয়ে আসবে। তাঁদের উভয়ের কথোপকথনের বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাতে চাঁদপুর কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ।

তিনি বলেন, করোনার এই দুর্যোগের মধ্যে আমাদের জন্যে আপাতত স্বস্তির খবর হলো আগামী চারদিনের মধ্যে চাঁদপুরের লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট চালু হচ্ছে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এইমাত্র (বৃহস্পতিবার রাত) বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। তিনি স্বাস্থ্য ডিজি স্যারের সাথে কথা বলেছেন। শীঘ্রই অক্সিজেনের গাড়ি আসবে ঢাকা থেকে।

‘লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট চালু হলে তার সুফল উপজেলার হাসপাতালগুলো পাবে কি-না’ জানতে চাইলে সিভিল সার্জন চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, অবশ্যই পাবে। আমরা আশা করছি লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টের অক্সিজেন দিয়ে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভালোভাবেই কাভার দেয়া যাবে। বর্তমানে আবুল খায়ের গ্রুপ আমাদের বিনামূল্যে যে ১১০ লিটার অক্সিজেন বড় সিলিন্ডার থেকে ছোট সিলিন্ডারে রিফিল করে দিচ্ছে, সেগুলো আমরা উপজেলা পর্যায়ে পাঠাতে পারবো। আশাকরি এতে সকল উপজেলার সমস্যা সমাধান হবে।

‘যদি অবস্থার আরো অবনতি ঘটে? ১১০ লিটারে ৭ উপজেলায় কাভার না হয় সে ক্ষেত্রে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আছে কি-না’ জানতে চাইলে ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, তাও সমাধান হবে। আমরা সরকারিভাবে কুমিল্লা থেকে আরও ৬০ লিটার করে অক্সিজেন পাই। প্রয়োজনে তাও বণ্টন করা হবে উপজেলাগুলোতে। সব মিলিয়ে আশা করা যায় আগামী তিনদিনের মধ্যে অক্সিজেন প্লান্ট চালু হলে চাঁদপুরে অক্সিজেনের কোনো সঙ্কট থাকবে না।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে কথা হয় লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা অক্সিজেন লিমিটেডের একজন কর্মকর্তার সাথে। তিনি জানালেন, তাদের প্ল্যানের সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী তিনদিনের মধ্যে এই প্লান্টটি চালু করে হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে। তাদের প্ল্যান অনুযায়ী আজ শনিবার স্পেক্ট্রা এই প্লান্টে গ্যাস সরবরাহ করবে। এরপর দুইদিন সময় লাগবে লিকুইড অক্সিজেন তৈরি হতে। আর তখনই অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে। তিনি আরো জানান, ১০ লিটার গ্যাস দিয়ে ৮২০ লিটার অক্সিজেন উৎপাদন হবে। তাই বর্তমানে এই হাসপাতালে প্রতিদিনের চাহিদা মিটিয়ে ট্যাংকে আরো মজুদ থাকবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগী বেড কিংবা ফ্লোরে জায়গা পেলেও অক্সিজেন পাওয়া যেন ভাগ্যের ব্যাপার। ভর্তি হওয়ার চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পরও অক্সিজেন পাচ্ছেন না রোগীরা। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে দেখা মিলছে না অক্সিজেন সিলিন্ডারের। হাসপাতালের স্টাফরা এক বা একাধিক অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে প্রবেশ করলে রোগীর স্বজনরা সিলিন্ডার নিয়ে কাড়াকাড়ি ও টানা-হেঁচড়া শুরু করেন। এ নিয়ে স্বজনদের মধ্যে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা দিচ্ছে। অক্সিজেন সাপোর্ট না পেয়ে গত কয়েকদিনে এ হাসপাতালে কয়েকজন রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়