প্রকাশ : ২৮ মে ২০২২, ০০:০০
বিগত বছরে জ্যৈষ্ঠ মাসে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা মিললেও এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। ইলিশ পাওয়ার আশায় প্রতিদিন জেলেরা নদীতে গেলেও খালি নৌকা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। এর ফলে জেলেরা নতুন করে ধারদেনায় ঋণগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও প্রতিদিন আশায় বুক বেঁধে নদীতে যাচ্ছে হাজার হাজার জেলে নৌকা ও ট্রলার। এসব জেলের অধিকাংশই ফিরে আসছে সামান্য মাছ নিয়ে। যা দিয়ে ট্রলারের তেল খরচ উঠলেও অভাব-অনটনে থাকা জেলে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসেনি। তাই ইলিশনির্ভর চাঁদপুরের প্রায় অর্ধলাখ জেলে পরিবারের জীবন-জীবিকা এখন নানামুখী সঙ্কটে। চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকে সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। এদিকে সিলেট অঞ্চলের বন্যার পানি নেমে আসায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর বৃদ্ধি পেয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঘোলা পানির কারণে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশ মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। বিএফআরআই গবেষণা তরী জাহাজ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ইলিশ গবেষণা জোরদার প্রকল্পের পরিচালক মোঃ আবুল বাসারসহ ক’জন মৎস্য গবেষক ও বাংলাদেশ ফিসিং বোট মালিক সমিতির আহ্বায়ক শাহআলম মল্লিক মেঘনায় ইলিশের পরিমাণ ও জেলেদের অবস্থা সরেজমিনে দেখার জন্যে নদীতে যান। তারা ইলিশ ধরার চ্যানেল চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার কাটাখালী এলাকায় মেঘনা নদীতে ইলিশ জেলেদের জাল ফেলা, টানা ও মাছ ধরার দৃশ্য সচক্ষে দেখেন। বিএফআরআই চাঁদপুর নদীকেন্দ্রের ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের এ পরিচালক জানান, সিলেটে বন্যার কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানি মিশে মেঘনার পানি এখন ঘোলা হওয়ায় জেলেরা এখন কাক্সিক্ষত ইলিশ পাচ্ছে না। স্বাভাবিক নিয়মে এ সময়ে নদীতে এখন ইলিশ পাওয়ার কথা। প্রাকৃতিক বিরূপতায় পদ্মা-মেঘনার পানি ঘোলা হওয়ায় এখন ইলিশের দেখা মিলছে না। আশা করি, মেঘনার পানি পরিষ্কার হলেই জেলেরা আশানুরূপ ইলিশ পাবে।
এদিকে নদীতে ইলিশ ধরতে আসা হরিণার বাতেন শেখ জানান, আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে ১০ জন ভাগীদার জেলে জ্বালানি তেলসহ জাল নৌকা নিয়ে মেঘনা নদীতে যান। দুটি খেও বেয়ে (দুবার জাল ফেলে) ৮শ’, ৪শ’ গ্রাম ও সাইজের দুটি ইলিশ এবং একটি তপসে মাছ পায়। মাছ বিক্রি করে আয় দূরের কথা, খরচের টাকা না ওঠায় ভাগীদার জেলেদেরও কষ্ট বাড়ছে। চাঁদপুরের হরিণার বাতেন শেখ ১০ জেলে নিয়ে ভোরে গিয়ে দুপুর পর্যন্ত ২টি ইলিশ ১টি তপসি মাছ পেয়েছেন। সারাদিন নদীতে জাল ফেলে যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে জ্বালানি খরচও আসছে না। জেলেরা শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছেন বলে জানান।
ইলিশ জাল নৌকার মালিক মিজান দিদার, মোক্তার দেওয়ান ও রওশন বকাউল জানান, ধারদেনা করে, সুদ, কিস্তিতে টাকা এনে পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের ভাগীদার জেলেদের দিয়ে আমরা এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। ইতোমধ্যে অনেক ভাগীদার জেলে পরিবার-পরিজন বাঁচাতে অন্য কাজে চলে যাওয়ায় ভাগীদার জেলের অভাবে অনেক নৌকার মালিক নৌকা বন্ধ করে দিয়েছেন। জাল নৌকা সংরক্ষণে মালিকরা হিমশিম খাচ্ছেন। বন্ধ ইলিশ জাল নৌকা এখন মালিকদের গলায় ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি রোটাঃ আবদুল বারী মানিক জমাদার জানান, গত বছর এ সময় দুই আড়াইশ’ মণ ইলিশ ঘাটের আড়তে ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। সেখানে বর্তমানে প্রতিদিন ঘাটে ৫০/৬০ মণ ইলিশ আসছে। মূলত চাঁদপুর নৌ-সীমামানায় ইলিশ ধরা পড়ছে না তাই ইলিশ সঙ্কটে দাম বেশি। বর্তমানে কেজি সাইজের ইলিশ মণপ্রতি ৬০/৬৫ হাজার টাকা ও ৭শ’/৮শ’ গ্রামের সাইজের ইলিশের মণ ৪৮/৫০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে অনুকূল আবহাওয়া অর্থাৎ সামনে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ইলিশ পাওযা যাবে বলে তিনি মনে করেন। বর্তমানে সাগরে মাছ ধরার উপর যে নিষেধাজ্ঞা চলছে তা একই সময় বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারে ট্রান্স বাউন্ডারি দেয়া হলে ভালো হতো। তাছাড়া সাগরে ম্যানুয়ালি ট্রলারের উপর নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে ট্রলিং জাহাজের জালের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া উচিত বলে মনে করেন এ মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা।