বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২১, ০০:০০

খাল ভরাটের অভিযোগ মহামায়া বাজারের কিছু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ॥ পরিবেশ বিপর্যয়

গোলাম মোস্তফা ॥
খাল ভরাটের অভিযোগ মহামায়া বাজারের কিছু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ॥ পরিবেশ বিপর্যয়

চাঁদপুর সদর উপজেলার দৈনিক ও সাপ্তাহিক বাজারগুলোর মধ্যে মহামায়া বাজারের প্রসিদ্ধি দীর্ঘ দিনের। এটি মূলত কয়েকটি উপজেলার মানুষের মিলনস্থল।

নানা কারণে বাজারটি সব সময় সরগরম থাকে। বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সিএন্ডবি (সওজ) খাল দিয়ে এক সময় মালামাল নিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল করলেও মহামায়া বাজারের কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী পরিকল্পিতভাবে খালটি দখলের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ময়লা আর্বজনা ফেলে মৃত খালে পরিণত করার অপচেষ্টায় রয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে মহামায়া বাজার ও খালের আশপাশের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই খালের পানি গোসল ও গৃহস্থালি কাজসহ বিভিন্নভাবে ব্যবহার হতো। আর এখন বাজার এলাকায় খালের যতটুকু অংশ রয়েছে, তাতে গত ২/৩ বছর যাবৎ ময়লা-আর্বজনা ফেলে খালটিকে মৃত খালে পরিণত করা হয়েছে। ফলে বর্ষার ভরা যৌবনেও এখন এই খাল দিয়ে নৌকা চলাচল দূরের কথা, খালটি চেনা দায় হয়ে পড়েছে।

শুল্ক মৌসুমে খালটি প্রতিনিয়ত অবৈধ দখলদারিত্বের কারণে ধীরে ধীরে বিলীন হওয়ার পথে। এই অবস্থায় খালের পানি ব্যবহারকারীরা যেমনি বেকায়দায়, তারচে’ বড় সমস্যা হচ্ছে কৃষকদের। কারণ খালটি থাকার কারণে এক সময় ঐ অঞ্চলে ইরি ধানের ব্যাপক চাষ হলেও, এখন সেটিও প্রায় বন্ধ রয়েছে।

দেখা যায়, খালটির পাশে গড়ে ওঠা বাজারের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা ও বর্জ্য খালের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এ সকল ময়লা-আর্বজনার প্রচণ্ড দুর্গন্ধে চলাফেরা যেমনি অসম্ভব, তেমনি পরিবেশেরও বিপর্যয় ঘটছে।

মহামায়া বাজারটিকে চাঁদপুর জেলার চারটি উপজেলা যথাক্রমে চাঁদপুর সদর, হাজীগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার মানুষের মিলনস্থল বলা হয়। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারিসহ বেশ ক’টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাছাড়া বাজারকে কেন্দ্র করে বাজারের আশপাশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আবাসিক ভবন। রয়েছে কওমী মাদ্রাসা, ব্যাংক-বীমা, এনজিওসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাপ্তাহিক দু’দিন বাজারটিতে হাট বসার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে বাজারে শত শত মানুষের আনাগোনা প্রতিনিয়ত। যে কারণে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে সব সময় জমজমাট থাকে বাজারটি।

বাজারের ব্যবসায়ীদের ময়লা আর্বজনা ফেলার জন্যে ডাস্টবিন না থাকার অজুহাতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী বংশের গুটিকয়েক ব্যক্তির পরিকল্পিত পরিকল্পনা অনুযায়ী খালে ময়লা ফেলে খালটি দখলের প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে ঐ সকল ব্যক্তি খালের পাশে অবৈধভাবে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা করছে।

শুষ্ক মৌসুমে বাজারের সব ময়লার স্তূপের দুর্গন্ধে বাজারে চলাফেরা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। যা স্থানীয় মানুষদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ময়লা-আবর্জনা ফেলার মধ্য দিয়ে মূলত সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারায় রয়েছেন বাজারের দু’ব্যক্তি। তারা হচ্ছেন দেলোয়ার হোসেন দুলু ও খোকা বেপারী।

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারের ব্রীজ সংলগ্ন স্থানের পাশে বাজারের দোকানীদের বর্জ্য ও গরু জবাইয়ের স্থান হওয়ার কারণেও বাজারে আগতদের মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

খালে ময়লা-আর্বজনা ফেলার বিষয়ে বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্দিষ্ট কোনো ডাস্টবিন না থাকায় ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থান হিসেবে খালটিকেই তারা বেছে নিয়েছেন।

বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি শীঘ্রই ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন বলেন, খালের পাশে বা মানুষ চলাচলকারী রাস্তায় নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া ময়লা আর্বজনা ফেলা ঠিক নয়। এতে পরিবেশের মারাত্মক ঝুঁকি বাড়ে, মানুষের শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। আর বাজারের ময়লা-আর্বজনা থেকে মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

এ বিষয়ে চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে কথা হলে তারা বলেন, মহামায়া বাজারের ব্যবসায়ীরা এমনটি করে থাকলে অবশ্যই পরিবেশকে হুমকির সম্মুখীন করছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন দেলুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। অপর অভিযুক্ত ব্যবসায়ী খোকা বেপারীর মুঠো ফোনে বার বার ফোন দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

মহামায়া বাজারের সমস্যা সমাধানে সংক্ষিপ্ত কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়