প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছরপূর্তি : প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মুখোমুখি-১১
কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হোক-এটি আমার প্রত্যাশা
---রোটাঃ আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম
রোটাঃ আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, সমাজসেবক ও একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি চাঁদপুরে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা)-এর প্রতিষ্ঠাতা। বহু সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সমাজসেবায় অদম্য প্রচেষ্টা, কর্মদক্ষতা ও মেধার সমন্বয়ে এগিয়েছেন। তিনি চাঁদপুর কলেজের ১৯৬২-১৯৬৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ১৯৬২ সালে তিনি এ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্র্তি হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ও কুমিল্লা ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি চাঁদপুর আইনজীবী সমিতির অনিয়মিত একজন আইনজীবীও। তিনি এফবিসিসিআইয়ের ৭ বার ডিরেক্টর ছিলেন। ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে সিআইপি মনোনীত হন। তিনি বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি, মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি, চাঁদপুর ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান, চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা স্কাউট, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, নাটাব ও জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান, পুরাণবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মার্চেন্টস্ একাডেমী ও উদয়ন শিশু বিদ্যালয়ের সভাপতি। তিনি চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সাবেক সভাপতি, চাঁদপুর উন্নয়ন ফান্ডের সভাপতি, চাঁদপুর ক্লাবের সহ-সভাপতি, ঐতিহাসিক বেগম মসজিদের সভাপতি, জাফরাবাদ হাফেজিয়া মাদ্রাসার সভাপতি, বাসস্ট্যান্ড হাফেজিয়া মাদ্রাসার সহ-সভাপতি, চাঁদপুর ডায়াবেটিক সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান। ব্যবসায়িক ও সাংগঠনিক কারণে তিনি বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক রোটারী কনভেনশনে কোলকাতা, দার্জিলিং, জাপান ও আমেরিকা; ফিনল্যান্ড সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে রোল অব চেম্বার অব কমার্স ইন ট্রেড প্রমোশন সম্মেলনে হেলসিংকি বোদাপেস্ট, মালয়েশিয়া, জাপান, হংকং, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, হাঙ্গেরি, ইতালীর মিলান, সৌদি আরব ও সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করেন। তিনি সাপ্তাহিক রূপসী চাঁদপুরের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন।
|আরো খবর
‘চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছরপূর্তি : প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মুখোমুখি’ শীর্ষক দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার পর্বে আজ রোটাঃ আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিমের কথা তুলে ধরা হলো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই।
জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম : আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা চাঁদপুর শহরে। পুরাণবাজারে আমার পৈত্রিক নিবাস। এ শহরেই আমার শৈশব-কৈশোরের সময় কাটে। শহরের মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা করতাম।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কত সালে, কোন্ শ্রেণিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন?
জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম : আমি চাঁদপুর সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র। ১৯৬২ সালে এ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সে সময় কলেজের পরিবেশ কেমন ছিলো?
জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম : সে সময় কলেজের পরিবেশ ছিলো মনোরম। ছেলে-মেয়েরা একসাথে পড়াশোনা করতাম। আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন তুমুল থাকাকালেই আমরা ভর্তি হই। আমাদের সময় আমার যতটুকু মনে পড়ে ৩৫-৪০ ছাত্রী আমাদের সাথে পড়তেন। মেয়েরা এক সারিতে বসতো, আমরা অন্য সারিতে বসতাম। আমাদের মধ্যে কোনো রকম ভেদাভেদ ছিলো না। আমরা খুব উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে ক্লাস করতাম। মেয়েরা আমাদের সাথে পড়তো, কোনো রকম টিজ করার বিষয় একেবারেই ছিলো না। সকলের মধ্যে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। ছেলে-মেয়েদের কোনো নির্দিষ্ট ড্রেস ছিলো না। কলেজের স্যারেরা চমৎকারভাবে পাঠদান করাতেন। আমাদের বাংলা পড়াতেন কুমিল্লা নিবাসী এক স্যার (তাঁর নামটা মনে করতে পারছি না)। তিনি খুব সুন্দরভাবে পড়াতেন। ছাত্র-ছাত্রীরা কেউ স্যারের ক্লাস মিস করতো না। আামাদের ইংরেজি পড়াতেন এবিএম ওয়ালিউল্যাহ স্যার। খুবই ভালো পড়াতেন স্যার। অর্থনীতি পড়াতেন মশিউর রহমান স্যার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়াতেন নূরুজ্জামান স্যার। বর্তমানে কলেজে দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। আমাদের সময় তেমনটা ছিলো না। শুধুমাত্র মূল ভবনটি ছিলো। ছাত্রজীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় চাঁদপুর কলেজে পড়াবস্থায় পার করেছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় শিক্ষক এবং সহপাঠী ছিলেন কারা? তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন।
জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম : ইংরেজির এবিএম ওয়ালিউল্যাহ স্যার, বাংলার সামছুজ্জামান চৌধুরী স্যার আমার প্রিয় শিক্ষক। এছাড়া অধ্যাপক নূরুজ্জামান স্যার, সাত্তার স্যারও আমার প্রিয় শিক্ষক। সহপাঠীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ সফিউদ্দিন আহমেদ। আমার খুব ক্লোজ বন্ধু ছিলো ফসিউর রহমান। তিনি ফ্যামিলি প্লানিংয়ের ডিরেক্টর হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন। শেখর চন্দ্র, গোবিন্দ পোদ্দারও ছিলেন আমাদের সহপাঠী। বন্ধুদের সকলেই ভালো ছিলেন। পরস্পরের মধ্যে সহানুভূতিশীল মনোভাবটা বেশি কাজ করতো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজের ৭৫ বছরপূর্তিতে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম : আমরা ৬২ বছর উদযাপন করেছি, সামনে ৭৫ বছরপূর্তি উদযাপন করবো। ৭৫ বছরপূর্তি উদযাপনে যারা এগিয়ে এসেছে তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। প্রাক্তন সকল ছাত্র-ছাত্রী আসলে একটি ভালো গেট টুগেদার হবে-এটি হবে কলেজের জন্যে অনন্য মাইলফলক।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা/স্বপ্ন কী?
জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম : আমার স্বপ্ন চাঁদপুর সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়া। কারণ অনেক কলেজ আছে, কিন্তু চাঁদপুরে পূর্ণাঙ্গ কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। আমি প্রত্যাশা করবো, সকলের প্রচেষ্টায় এটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত হবে। চাঁদপুর দেশের সুপরিচিত জেলা। এটি অন্যতম বাণিজ্যিক শহর। এখানের পরিবেশও ভালো। তাই যতো দ্রুত এটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে ততোই চাঁদপুরবাসী উপকৃত হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উল্লেখিত প্রশ্নের বাইরে আপনার কোনো কথা থাকলে বলুন।
জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম : ছোটবেলা অনেক খেলাধুলা করতাম। যেমন ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি। একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তখন দেয়ালিকা বের হতো। সেটিতে আমরা সহপাঠীরা লিখতাম। আর কেউ দেয়ালিকা পড়ছে কিনা সেটি লক্ষ্য রাখতাম। একটি পত্রিকা ছিলো ‘অন্যগ্রাম’। সেই পত্রিকায় নিয়মিত লিখতাম। আমি নিজেও ‘রূপসী চাঁদপুর’ নামে পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলাম।