শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ইউপি নির্বাচন

দলীয় কোন্দল না মিটলে আওয়ামী লীগকে মাশুল দিতে হবে

দলীয় কোন্দল না মিটলে আওয়ামী লীগকে মাশুল দিতে হবে
এমকে মানিক পাঠান ॥

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের আসন্ন ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপি চুপচাপ থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মধ্যে নির্বাচনী উত্তাপ বিরাজ করছে। গতকাল বুধবার থেকে দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। এই ১৩টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে এবার শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় প্রতীক নৌকা পেতে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছে। তবে স্থানীয়রা বলছে, দলের প্রভাবশালী তিন নেতার কোন্দল না মিটলে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে মাশুল গুণতে হবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে।

ফরিদগঞ্জে সরকার দলীয় প্রভাবশালী তিন নেতার অনুসারী প্রার্থীরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত। প্রভাবশালী এই তিন নেতা হলেন যথাক্রমে বর্তমান এমপি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান। গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি দলীয় প্রতীক নৌকা না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সম্ভাবনা বেশী বলে অনেকেই মনে করছেন। এ তিন নেতার অনুসারী নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ না হলে নৌকার জয় নিশ্চিত করতে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে।

দলীয় অন্তঃকোন্দলের কারণে বিগত ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ২নং বালিথুবা, ১০নং গোবিন্দপুর, ৪নং সুবিদপুর ও ১১নং চরদুঃখিয়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ১১নং চরদুঃখিয়া ইউনিয়নে বিএনপির ৩জন প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু সেই সময়ে ধানের শীষের প্রার্থী বাছির আহাম্মদের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। বিএনপির তিনজন প্রার্থী থাকার পরও আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী পরাজিত হওয়ার কারণ হচ্ছে অন্তঃকোন্দল।

এদিকে উক্ত নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে নীরবতা দেখা গেলেও আওয়ামী লীগের মধ্যে নির্বাচনী উত্তাপ দেখা যায় সব ইউনিয়নে। খোদ আওয়ামী লীগেই ১৩ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট ১শ’ ১১জন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যে হারে দলীয় মনোনয়ন ফরম ক্রয় করার হিড়িক পড়েছে, তাতে করে প্রার্থীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে অনেকই মনে করছেন। দলীয় প্রতীক নৌকা পেতে প্রার্থীরা বিভিন্ন নেতার কাছে নানা তদবির আর দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ নিজেকে ইউপি চেয়ারম্যান পদে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি উঠোন বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান তৈরি করছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও চুপচাপ বিভিন্নভাবে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।

এদিকে এবার নৌকা প্রতীক যদি নাও পায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় নিশ্চিতের জন্যে উক্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জোরালোভাবেই মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেকে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার দলীয় তিন গ্রুপের নেতা-কর্মীরা ছাড় দিবে না কেউ কাউকে। অপরদিকে বিএনপি এই নির্বাচনে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা পায়নি বলে বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী জানিয়েছেন। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির প্রার্থীরা প্রতিটি ইউনিয়নেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির বেশ ক’জন প্রার্থী জানিয়েছেন। দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে তিন নেতার অনুসারী প্রার্থী রয়েছে। প্রত্যেক নেতাই চাইবেন তার পছন্দের ব্যক্তিটি নৌকা প্রতীক নিশ্চিত করতে নানা তৎপরতা চালাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দলীয় অন্তঃকোন্দলের কারণে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে এবার দলীয় প্রতীকের লড়াইয়ের চেয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের আশায় শক্তি প্রদর্শনের লড়াই হিসেবে প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই সরকার দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে লড়বেন বলে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গত অক্টোবর মাসে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যেগে ১৩টি ইউনিয়নে বর্ধিত সভা করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের প্রস্তাব সমর্থনের মাধ্যমে প্রার্থী তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব বর্ধিত সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বর্ধিত সভা সম্পন্ন করেছেন। তবে ওই বর্ধিত সভায় ফরিদগঞ্জের এমপি শফিকুর রহমানের অনুসারী সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা অংশগ্রহণ না করলেও ১৩টি ইউনিয়নে সম্ভাব্য প্রার্থীর নামের তালিকা জেলা আওয়ামী লীগের কাছে জমা দিয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

এমন অবস্থায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিন নেতার অনুসারী সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঐক্যবদ্ধ না হলে ১৩টি ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক আকারে হানাহানির আশঙ্কা করছেন অনেকেই। একইভাবে দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবিরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অচিচ্ছুক ক’জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেছেন, ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের ৩ নেতার অনুসারী ৩টি পৃথক গ্রুপের অন্তঃকোন্দলের কারণে প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা আছেন বিপাকে। এলাকায় নিজর অবস্থানকে ধরে রাখতে ওই তিন প্রভাবশালী নেতা চাইবেন তার পছন্দের ব্যক্তিটিই নৌকা প্রতীক পাক। যে কারণে এবার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয় নিশ্চিত করতে আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নামার সকল প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত ইউপি নির্বাচনে যারা নৌকা প্রতীক না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন, এবারও সেই প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক পেতে তাদের নাম প্রস্তাব করেছে।

তবে দলের নেতা-কর্মী ও ভোটারগণ জানান, এবারের নির্বাচনে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি দলীয় প্রতীক (নৌকা) না পেলে ভোটারগণই গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির জয় নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবে। প্রতীকের চেয়ে এবার প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতাই ভোটারদের কাছে বেশি প্রাধান্য পাবে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান এ সংবাদদাতাকে এ বিষয়ে বলেন, আমার ব্যক্তিগত পছন্দের কোনো প্রার্থী নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই দলীয় প্রতীক নৌকা দিবেন, তাকে নিয়েই নৌকার জয় নিশ্চিত করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হবে বলে আমার বিশ্বাস রয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পৌর মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার বলেন, কে কোন্ নেতার অনুসারী তা আমাদের কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। নেত্রী যাকেই নৌকা প্রতীক দেবেন তার জয় নিশ্চিত করতে উপজেলা আওয়ামী লীগ আন্তরিকভাবেই কাজ করবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়