প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
সেচ খালে পানিস্বল্পতা প্রসঙ্গে

‘বোরো মৌসুমে আবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা ॥ সেচ খালে পানিস্বল্পতায় হাহাকার ফরিদগঞ্জের কৃষকদের’- এটি চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত প্রধান সংবাদের শিরোনাম। সংবাদের শিরোনামেই ও সংযুক্ত ছবি দেখেই আন্দাজ করা যায় বিষয়টি কতোটা উদ্বেগজনক। সংবাদটিতে ফরিদগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক চাঁদপুর কণ্ঠের ব্যুরো ইনচার্জ প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন, সেচ খালে পানিপ্রবাহ কম থাকায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ফরিদগঞ্জের ক’টি অঞ্চলে পানির জন্যে হাহাকার পড়ে গেছে। খালে পানিপ্রবাহ বাড়াতে কৃষকরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। দ্রুত পানি সরবরাহ না বাড়লে বোরো আবাদে ব্যাঘাত ঘটার শঙ্কা রয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, তারা পাউবোর সাথে কথা বলেছেন, ৩/৪ দিনের মধ্যে খালে পানিপ্রবাহ বাড়বে বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন। বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনও।
জানা গেছে, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা উত্তর ইউনিয়নের বারপাইকা, বদরপুর ও গাব্দেরগাঁওসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের সেচ খালে পানিস্বল্পতার কারণে সেচ কাজে কৃষকদের নিদারুণ কষ্ট হচ্ছে। কৃষকরা বোরো আবাদের জন্যে চারা রোপণ করলেও তাতে পানি দিতে পারছেন না। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বারপাইকা ২ কিউসেক এলপিসি স্কীম খালে পানি সরবরাহের জন্যে সংশ্লিষ্ট স্কীম ম্যানজার প্রফেসর ডাঃ মোঃ তসলিম উদ্দিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন করেন। তিনি আবেদনে জানান, কৃষির এই ভরা মৌসুমে সেচ প্রকল্পে পানির অভাবে উপরোল্লিখিত স্কীমের চাষাবাদ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিপি-১১ খালে পানি নেই। পাম্পে পানি আসছে না। যদিও ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খালে পানি আসেনি। সরজমিনে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রূপসা উত্তর ইউনিয়নের বারপাইকা, বদরপুর ও গাব্দেরগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা চলতি বোরো মৌসুমে মাঠে কিছু অংশে চারা রোপণ করেছেন, আবার কিছু অংশে চারা রোপণ করতে পারেননি। চারা রোপণ করলেও পানির অভাবে মাঠ ফেটে যাচ্ছে। পানির অভাবে কিছু কিছু মাঠে চারা রোপণই করতে পারেননি কৃষকরা। অন্যদিকে বিপি-১১ খালে পানি আছে নামমাত্র। এই পানি বিএডিসির সেচ পাম্প দিয়ে উঠবে না। দ্রুত সেচখালে পানি সরবরাহ না বাড়লে বোরো আবাদে ব্যাঘাত ঘটবে। ইমরান, মিজান, আনোয়ারসহ বেশ ক’জন কৃষক জানান, সেচ পাম্প দিয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে ঠিকমতো পানি আসছে না। এতে আমরা বিপদে পড়েছি। বিগত বছরে ধানের আবাদ করে লোকসান দিলেও আবারো ঝুঁকি নিয়ে চারা রোপণ করেছি। কিন্তু সেচ পানি না পেলে আমাদের মাথায় বাজ পড়বে। আমাদের হাহাকার শুনবে কে?
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল কিশোর সরকার জানান, বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) তিনিসহ উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএস তছলিম আহমেদ, ইউএনও মৌলি মণ্ডল সরজমিনে গিয়ে দেখে এসেছেন। কৃষকদের দাবি সঠিক। তাঁরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছেন। স্লুইচ গেইটের একটি পাম্পে বিস্ফোরণ হওয়ায় পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। তারা পানিছাড়া শুরু করেছে। ৩/৪ দিনের মধ্যে সেচখালে পানি প্রবাহ বাড়বে বলে তারা আশ্বস্ত করেছেন। উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএস তছলিম আহমেদ জানান, বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপনের পর তিনি সরজমিনে গিয়ে দেখেছেন। সেচখালে পানি সরবরাহ বৃদ্ধির জন্যে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন।
চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের আওতাধীন ফরিদগঞ্জের কোথাও না কোথাও প্রতিবছরই পানিস্বল্পতায় বোরো মৌসুমে আবাদ ব্যাহত হবার আশঙ্কা তৈরি হয়। ভবিষ্যতে যে এই আশঙ্কা ঘুচবে সেটা হলফ করে বলার সুযোগ কারো নেই। কারণ, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের পাম্পহাউজ, স্লুইচ গেটসহ সকল কিছুই মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় আছে। ডাকাতিয়া নদী, সেচ খালসহ পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের সকল পথ ভরাট হয়ে গেছে এবং যথাযথ সংস্কারের আওতায় নেই দীর্ঘদিন। এখানকার জনপ্রতিনিধিরা রাস্তা, সেতু সহ সহজে দৃশ্যমান উন্নয়ন অবকাঠামো নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত যে, সেচ প্রকল্পটির সামগ্রিক সংস্কার ও উন্নয়ন নিয়ে মাথা ঘামাবার ফুরসত খুঁজে পাচ্ছেন না কিংবা এ সংক্রান্ত প্রকল্প পাস করিয়ে আনবার জন্যে তদবিরের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছেন না। এটি কি তাদের উদাসীনতা না অপারগতা সেটা ভাববার বিষয়। এমতাবস্থায় এটা বলা যায় যে, ফরিদগঞ্জসহ চাঁদপুর সেচ প্রকল্পভুক্ত অন্যান্য স্থানে পানিস্বল্পতা কিংবা জলাবদ্ধতা নিয়ে অনাগত ভবিষ্যতে কেবল হাহাকার শোনা যাবে না, প্রকল্পটির যান্ত্রিক বৈকল্যে সামগ্রিক অচলাবস্থায় ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা যাবে। অতএব, কার কার আগাম সাবধান হওয়া প্রয়োজন সেটা খোলসা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না।