বুধবার, ০৭ মে, ২০২৫  |   ৩৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

নৌপুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উদ্বেগজনক

অনলাইন ডেস্ক
নৌপুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উদ্বেগজনক

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় নৌপুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ সংক্রান্ত দুটি সংবাদ খ্বুই গুরুত্বের সাথে ছাপা হয়েছে। ‘চাঁদপুরে নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ’ শিরোনামের সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও অবৈধ জালের ব্যবহার বন্ধে নৌপুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে চাঁদপুরের জেলেদের অভিযোগ, প্রতিনিয়তই নৌপুলিশের হয়রানি ও চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন তারা। জালের ধরণ সঠিক নয় দাবি করে চলে অর্থ আদায়। মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে হাইমচরের চরভৈরবী পর্যন্ত মেঘনার প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ আহরণ করেন অর্ধলক্ষ জেলে। নানা অজুহাতে নৌ-পুলিশ তাদের হয়রানি করে, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জেলেদের দাবি, অবৈধ জাল ব্যবহারের মিথ্যা অভিযোগে নৌপুলিশের সদস্যরা প্রায়ই তাদের আটক করেন। আর চাহিদা মতো টাকা না পেলে মামলা দায়ের হয়। সম্প্রতি মৎস্য বিভাগের এক সভায় নৌপুলিশের বিরুদ্ধে স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপু মনির কাছে এমন অভিযোগ করেন জেলেরা। দীপু মনি বলেন, ‘অভিযোগ আছে আইন শৃংখলা বাহিনীর কেউ কেউ জেলে ভাইদের হয়রানি করে। তারা বিভিন্ন অজুহাতে এই হয়রানি করছে। তারা হয়তো আইনসম্মত জাল ব্যবহার করছে। সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি আহ্বান জানাবো স্বাভাবিক সময়ে জেলেদের হয়রানির বিষয়টি খতিয়ে দেখে এটি নিরসন করতে।’ তবে নৌ-পুলিশের দাবি, জালের আকার ও ব্যবহার নিয়ে জেলেদের মাঝে বিভ্রান্তি থাকায় অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি হয়। অনিয়ম হলে তা জানানোর জন্যে জেলেদের মাঝে নিজের ভিজিটিং কার্ড বিতরণ করেছেন চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার মোঃ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘জেলেদের কাছে কোন পুলিশ সদস্য অনৈতিক বিষয় চাপিয়ে দিচ্ছে, এই বিষয়ে আমরা পূর্ব থেকেই সতর্ক। এমন কিছু হলে যেন আমাকে জানানো হয়। অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

‘মেঘনায় নৌকাডুবির ছয়দিনেও সন্ধান মিলেনি নিখোঁজ জেলের লাশ’ শিরোনামের অপর সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, হাইমচর উপজেলার নীলকমল এলাকার মেঘনা নদীতে ১২ ফেব্রুয়ারি ভ্যাকু পরিবহনকারী পন্টুনের ধাক্কায় জেলে নৌকা ডুবে গিয়ে জেলে আয়নাল হক মুন্সি (৬০) নিখোঁজ হন। নিখোঁজের ছয়দিনেও তার মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় নীলকমল নৌ ফাঁড়ি ও হাইমচর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি নেয়নি পুলিশ। ঘটনাটি হাইমচর নীলকমল সীমানায় ঘটলেও দায় এড়াতে চাচ্ছে পুলিশ--এমন অভিযোগ পরিবারের স্বজনদের। তারা জানান, জেলে আয়নাল হক নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পরেও নীলকমল নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর খান নিখোঁজ জেলেকে উদ্ধারে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেন নি। দীর্ঘদিন যাবৎ হাইমচরের নীলকমলে মেঘনা নদীর চরাঞ্চলের নদীর পাড় থেকে ভ্যাকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে একটি চক্র। এ ঘটনায় চলতি সপ্তাহে চাঁদপুর থেকে কোস্টগার্ড ঘটনাস্থলে গিয়ে বাল্কহেড, পন্টুন জব্দ ও ১১ জনকে আটক করে। নিখোঁজ আয়নালের পরিবারের সদস্যরা জানান, সেখানে থাকা আরো কিছু ভ্যাকু সেদিন পন্টুনে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় মেঘনা নদীতে জেলে নৌকার উপর উঠিয়ে দেয়। এ সময় আয়নাল হক মুন্সি পানিতে তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হন। নিখোঁজ আয়নাল হক চরভৈরবী ইউনিয়নের মধ্যপাড়া বগুলা গ্রামের মৃত সিরাজউদ্দিন মুন্সির ছেলে। এ ব্যাপারে হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম খান জানান, দুর্ঘটনাস্থল হাইমচর নয়, এটি হচ্ছে শরীয়তপুর জেলায়। সেখানকার নৌ-পুলিশ বিষয়টি দেখছেন। তাছাড়া চাঁদপুর ও শরীয়তপুর নৌ পুলিশ সুপার স্যার ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

নৌপুলিশের বিরুদ্ধে উপরোল্লিখিত অভিযোগ ছাড়াও আরো নানা অভিযোগ শোনা যায় প্রায়শই। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সাথে যোগসাজশে এবং অবৈধ লেনদেনে তুষ্ট কিছু পুলিশ কর্মকর্তাসহ কিছু সদস্যের প্রশ্রয়ে নদীতে অনেক অবৈধ তৎপরতা চলে নির্বিঘ্নে। অদৃশ্য ইঙ্গিতে নৌপুলিশ এসব অপতৎপরতা দেখেও না দেখার ভান করে। চাঁদপুর কণ্ঠের দুটি সংবাদে নৌপুলিশ কর্তৃক জেলেদের অন্যায়ভাবে হয়রানি এবং নিখোঁজ জেলেকে উদ্ধারে অসহযোগিতা ও সাধারণ ডায়েরি গ্রহণে অস্বীকৃতি সংক্রান্ত যে বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। নৌপুলিশের ফাঁড়ি ও টহল থাকার পরও চরে ভ্যাকু দিয়ে নির্বিঘ্নে মাটি কাটা হয় কীভাবে--সেটা কারো বোধগম্য নয়। এর পেছনে কী কাজ করছে সেটা খতিয়ে দেখার জন্যে নৌপুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের করণীয় নিয়ে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ তৈরি হয়েছে। মানুষ বলাবলি করছে, নৌপুলিশের সামগ্রিক কার্যক্রমের ধারালো ভাব পূর্বের মতো নেই। এই বলাবলিটা স্বতঃস্ফূর্ত বিধায় উদ্দেশ্যমূলক বলার সুযোগ নেই। এতো কিছুর পরও নৌপুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল কিংবা অক্ষুণ্ণ রাখতে যদি কিছু করা না হয়, তাহলে সেটা হবে প্রশ্নবোধক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়