প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ইউএনও’র বক্তব্য পরিষ্কার, তবে দেখা যাক--

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল বলেছেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে অনুমোদন লাগে। এ ছাড়া ছোট সড়ক দিয়ে ডাম্প ট্রাক চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কৃষিজমি থেকে যারাই মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিনিধি পাপ্পু মাহমুদকে বলেছেন এসব কথা। ইউএনও’র এই বক্তব্য জুড়ে দিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে ‘মাটিখেকোদের কবলে হাজীগঞ্জ’ শিরোনামে একটি সংবাদ পরিবেশন করেছেন তিনি, যেটি গতকাল লীড নিউজের মর্যাদা পায়।
সংবাদটিতে পাপ্পু মাহমুদ লিখেছেন, হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আবাদি কৃষিজমির মাটি নির্বিঘ্নে বিক্রির মহোৎসব চলছে। কৃষিজমি সুরক্ষিত করতে প্রশাসন মাঝে মাঝে সরব হলেও স্থায়ী কোনো সুফল মিলেনি। ফলে আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমি, কমছে ফসল উৎপাদনও। জানা যায়, মাটিখেকো ব্যবসায়ীরা সবকিছু ম্যানেজ করেই নির্বিঘ্নে মাটি কাটার কাজ করছে। অনেক মাটি ব্যবসায়ী স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই কৃষকরা লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার। ফসলি জমিতে ভেকু বসিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। এসব মাটি ডাম্প ট্রাক দিয়ে ক্রেতার কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে কৃষিজমির পাশাপাশি গ্রামীণ এবং পাকা রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, স্থানীয় তহশিল অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করার সাাহস পাচ্ছে না।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের টাকার লোভ দেখিয়ে ফসলি জমিতে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন বিভিন্ন বাড়ি-ভিটে, পুকুর ভরাটের কাজে এবং ইটভাটায়। নির্বিচারে চলছে এই মাটি কাটা। এভাবে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে যেমন ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে এলাকার ঘরবাড়ি, তেমনি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। এছাড়া মাটিবোঝাই ভারী ডাম্প ট্রাক চলার কারণে ধুলোবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। স্থানীয় কৃষকরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তিন ফসলি কৃষিজমিতে খননযন্ত্র (ভেকু) বসিয়ে মাটি কেটে স্থানীয় বসতবাড়ি ভরাটের কাজ করা হচ্ছে। অন্যের ফসলি জমির ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্যে বানানো হয়েছে রাস্তা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বাধা দিলে নানা হুমকি-ধমকি ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। হাজীগঞ্জ উপজেলার ৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের প্যারাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ ও করিম মিয়া বলেন, আমার পাশের জমির মালিক মাটি বিক্রি করেছেন। এই মাটি নেওয়ার জন্যে আমাদের ফসলি জমির উপর দিয়ে নেওয়া হচ্ছে ভেকু ও ডাম্প ট্রাক। বাধা দিলে মাটি ব্যবসায়ীরা বলেন, ফসল তো নষ্ট হয়েছে। এখন জমির মাটি বিক্রি করে দেন। ৫নং সদর ইউনিয়নের মৈশাইদ গ্রামের কৃষক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, মাটিবোঝাই ভারী ট্রাক চলাচলে রাস্তাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলাচলে বাধা দেওয়ায় আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং জোর করেই রাস্তা নষ্ট করে ট্রাক চালানো হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ী শহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি কবরস্থানে মাটি দিচ্ছি। এক ফসলি জমি কিনে মাটি কাটছি। তিন ফসলি জমি কেউ বিক্রি করতে চাইলে আমি কিনি না। আমি জোর করে কারো জমিতে মাটি কাটি না।
উপরোল্লিখিত সংবাদের প্রয়োজনে পাপ্পু মাহমুদকে হাজীগঞ্জের ইউএনও'র প্রদত্ত বক্তব্য পরিষ্কার। তিনি সদ্য যোগদান করেছেন হাজীগঞ্জে। তিনি নিশ্চয়ই তাঁর বক্তব্যের আলোকে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। তবে হাজীগঞ্জে বেশ কিছুদিন ধরে দায়িত্বপালনকারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তথা এসি ল্যান্ড ও বিভিন্ন তহশিল অফিসে দায়িত্বপালনকারী উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার)গণ কেনো অবৈধ মাটি ব্যবসার বিরুদ্ধে স্থায়ী সুফল পাওয়ার মতো ব্যবস্থা নেননি, সেটি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন বিরাজ করছে। যেহেতু সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে গুরুত্বের সাথে, আশা করি জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হাজীগঞ্জকে মাটিখেকোদের কবল থেকে রক্ষায় আশু ব্যবস্থাগ্রহণের ত্বরিৎ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।