প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
খাল খননে গুরুত্ব দিন

এক শ্রেণির মানুষ বিদ্যমান খালের অস্তিত্ব বিলোপে কতোটা সিরিয়াস, সেটা চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কসহ অন্যান্য অনেক সড়কে যাতায়াতকালে দুপাশে দৃষ্টি রাখলে সহজে বুঝতে পারি। খাল দখলের নানা কৌশল, যেমন-মাটি ফেলে তীর ভরাট, পুরোটা ভরাট করে নিচে পাইপ স্থাপন, দুপাশ থেকে খালের টুঁটি চেপে ধরার মতো করে ছোট্ট কালভার্ট নির্মাণ, আরসিসি পিলার তুলে তার ওপর স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ, মাচানের মতো করে ঘর নির্মাণ ইত্যাদি হরহামেশা অবলোকন করে আমরা খাল দখলের এবং বিলোপের অপচেষ্টা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নিতে পারি। পরিণতিতে অকাল বৃষ্টি ও অতিবৃষ্টিতে আমরা জলাবদ্ধতাসহ নানা পরিণাম যে অনিবার্যভাবে ভুগ করতে হয়, সেটা প্রায়শই গণমাধ্যমে দেখি। যেমনটি অতি সম্প্রতি চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদে দেখলাম।
‘শাহমাহমুদপুরে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ ॥ হুমকিতে শত শত একর কৃষি জমি’ শিরোনামের সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ছোট শাহতলী-ভড়ঙ্গারচর এলাকার প্রায় দুশ’ একর কৃষিজমি এখন পানিতে ডুবে আছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কয়েক বছর ধরে ওই গ্রামের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে থাকার কারণে কৃষকেরা ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। এর মাঝেও অনেক কষ্ট করে ওইসব জমিতে ধানের চারা রোপণ করলেও তা পচে নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া থেমে থেমে আসা বৃষ্টির পানি জমে থাকার ফলে আগে থেকে রোপণকৃত ধানের চারাগুলো পানির নিচে ডুবে গিয়ে পচে নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গ্রামের অসংখ্য কৃষক। তাদের চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যায় শত শত বিঘা জমির ধানের চারা। ফলে কৃষকের বুকে জমছে চাপা আর্তনাদ। তাদের চোখে-মুখে ফসল হারানোর শঙ্কার ছাপ লেগেই থাকে বছরের পর বছর। ১০ জানুয়ারি বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষার মৌসুম শেষ হলেও শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ছোট শাহতলী ও ভড়ঙ্গারচর এলাকার শত শত একর কৃষি জমি তলিয়ে আছে পানির নিচে। এ এলাকাগুলো কৃষিনির্ভর হলেও তা এখন শুধু অতীত। গ্রামবাসীর আয়ের বড় একটা অংশ আসতো কৃষি ফসল থেকে। এক সময়ে এই জমিগুলোর পানি নিষ্কাশন হতো চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট একটি খালের মাধ্যমে, যার সংযোগ ছিলো ডাকাতিয়া নদী থেকে বের হওয়া বিশ্ব খালের সাথে। ছোট খালটির এখন আর দেখা নেই। আবার রেল লাইনের পাশের বাড়ির মালিকরা ড্রেনেজ ব্যবস্থা কিংবা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখেই রাস্তা নির্মাণ করায় এ সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান কয়েকজন কৃষক।
দেলোয়ার হোসেন মাস্টার, আবুল কালাম, দেলোয়ার হোসেন দুলুসহ কয়েকজন কৃষক জানান, এক সময় এই বিলে বোরো, রোপা, আমন ও রবি মৌসুমে গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ বিভিন্ন শীতকালীন ফসল আবাদ হতো। কিন্তু এই বিলের পানি নামার অংশগুলো কয়েকজন জমির মালিক ভরাট করে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন। কালভার্ট বা নালা না থাকায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বিলটি ক্রমান্বয়ে অনাবাদী হয়ে পড়েছে। এখানকার জমির মালিকরা অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন, যেখানে সেখানে যে যার মতো বাড়ি-ঘর নির্মাণ আর এলাকার বিভিন্ন ব্রিজ ও কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে এলাকার কৃষি জমিগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত অনাবাদি জমিগুলো চাষাবাদের উপযোগী করে তুলতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এ ব্যাপারে শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোরসালিন হোসেন বলেন, এ এলাকার জমিগুলোর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি খননের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুতই খাল খনন করা হবে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদুর রহমান নান্টু পাটওয়ারী বলেন, ঐ এলাকার কয়েকজন কৃষক আমাকে বিষয়টি অবগত করেছেন। ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। চাঁদপুর জেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব আব্দুল হান্নান সবুজ বলেন, আমার জানা মতে, এই এলাকাটি একটি কৃষিনির্ভর এলাকা। এর আগেও শাহমাহমুদপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এখানকার খাল খনন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজই না হওয়ায় এ এলাকার কৃষকরা আজ দুশ্চিন্তায়, হুমকির মুখে শত শত কৃষি জমি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘এক ইঞ্চি কৃষি জমিও যাতে অনাবাদি পড়ে না থাকে’ সে লক্ষ্যে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিয়ে অনাবাদী এসব কৃষি জমি চাষাবাদের উপযোগী করে তুলতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি।
আমরা সংবাদটিতে উল্লেখিত খালসহ অন্যান্য সকল ভরাটকৃত, দখলকৃত খাল পুনরুদ্ধারে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ এবং খাল খননের কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্যে সরকারের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। খাল খননের কার্যক্রম গুরুত্ব না পাওয়ায় আমাদের চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পও অকাল বৃষ্টি ও অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে এবং ব্যাপক ফসলহানি হচ্ছে। এছাড়া সারা চাঁদপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সেচনির্ভর কৃষি প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় দেশের প্রায় নব্বই শতাংশ খালে চলছে কচুরিপানার টেকসই রাজত্ব। আর নাব্যতা সঙ্কটে বড়ো বড়ো খালেও নৌচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে টেকসইভাবে। সরকার সড়কের ব্যাপক উন্নয়নে মনোযোগী, রেলপথের সংস্কার, সম্প্রসারণ ও যুগান্তকারী উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করেছেন অভূতপূর্বভাবে, সেমতে নৌপথের উন্নয়নে মনোযোগী হতে, খাল খননে গুরুত্ব দিতে অসুবিধা থাকার কথা নয়। আমরা আশা করি, নূতন সরকার খাল খননে গুরুত্বসহ নৌপথের উন্নয়নে নূতন পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন কিংবা ইতিপূর্বে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তরিক হবেন।