প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তিনি একাই এমন সব করছেন!

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ‘ডাঃ বদরুন নাহার চৌধুরীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ প্রদান’ শিরোনামের সংবাদে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চাঁদপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন। ১২ জানুয়ারি শুক্রবার তিনি দিনভর হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ধেররা চৌধুরী বাড়ির কাচারী ঘরে প্রায় ২শ’ রোগীকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা প্রদান করেন। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর উপলক্ষে ও হাজীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম অ্যাডঃ তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরী স্মরণে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানকালে রোগীদেরেকে বিনামূল্যে ঔষধ ও নাস্তা প্রদান করা হয়। একই দিন বাদ জুমা ধেররা চৌধুরী বাড়ি জামে মসজিদে মরহুম তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরী ও মরহুমের জ্যেষ্ঠ সন্তান মরহুম স্বজন চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ, দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। উল্লেখ্য, ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী ও তাঁর আরেক সন্তান বিশিষ্ট হাড়জোড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তানভীর হায়দার চৌধুরী নিলয় বিভিন্ন জাতীয় দিবস, ভাষার মাস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শোকাবহ আগস্ট মাসেও ধেররা চৌধুরী বাড়িতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন।
বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার আয়োজন করা ডাঃ সৈয়দা বদরুননাহার চৌধুরীর রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। তাঁর স্বামীর বাড়ি হাজীগঞ্জ হলেও তিনি স্থায়ীভাবে থাকেন চাঁদপুর শহরের স্টেডিয়াম রোডে। তাঁর নিজ বাসভবনের নিচেই রয়েছে তাঁর চেম্বার। সেই চেম্বারে এবং স্বামীর এলাকায়, এমনকি বিভিন্ন সংগঠনের আহ্বানে তিনি বিভিন্ন উপলক্ষে প্রায়শই বিনামূল্যে চিকিৎসার আয়োজন করেন কিংবা অন্যের আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্ততা ও আন্তরিকতার সাথে অংশ নেন। জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মসূচি, রোটারী ক্লাব, ইনার হুইল ক্লাব, আমরা ধূমপান নিবারণ করি ('আধূনিক') সহ বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রমে তিনি অংশগ্রহণ করেন নিয়মিত। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তিনি করেছেন ব্যতিক্রম এক মতবিনিময় সভা ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার আয়োজন। উদ্দেশ্য ছিলো নিজ দলীয় নৌকার প্রার্থীকে ভোটদানে রোগীদের উদ্বুদ্ধকরণ। এই কাজটি তিনি পুরো চাঁদপুর জেলায় একাই করেছেন, আর অন্য কোনো আওয়ামী-মনা চিকিৎসক সেটা করেন নি। তবে তাদের কেউ কেউ মাঠ পর্যায়ে সশরীরে নির্বাচনী প্রচারণাসহ বুদ্ধিবৃত্তিক কিছু কাজ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে করেছেন। এটা নারী হিসেবে ডাঃ বদরুননাহারের জন্যে সম্ভব হয়নি কোনো না কোনো সীমাবদ্ধতাহেতু। সেজন্যে তিনি স্বীয় সীমাবদ্ধতাকে উতরাতে সরাসরি রোগীদের সাথে মতবিনিময় ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার আয়োজন করেছেন। এতে পাছে লোকে কিছু বললো কি বললো না তার ধার ধারেন নি তিনি। তিনি অকালে হারানো তাঁর স্বামী ও বড়ো সন্তানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ধর্মীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি আয়োজন করেন বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা। সাধারণত কেউ তার বাবা/মা/সন্তান বা অন্য আত্মীয়স্বজন কারো ১ম, দ্বিতীয়, তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী ব্যাপকভাবে পালন করেন, তারপর আর পালন করেন না কিংবা নামকাওয়াস্তে পালন করেন। কিন্তু ডাঃ বদরুননাহার তাঁর স্বামী ও পুত্রের প্রথম দিককার মৃত্যুবার্ষিকী যেভাবে পালন করেছেন, পরবর্তীগুলো একই মেজাজে পালন করে চলছেন। এটাও বিরল। যদি বলি, চাঁদপুর জেলায় একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি একাই এমন সব করে চলছেন, তাহলে অত্যুক্তি হবে বলে মনে করি না। কারণ, অন্য কেউ এমনটি করার বিষয় আমাদের জ্ঞান গোচরে নেই। আমরা সুস্থতার সাথে ডাঃ বদরুননাহারের দীর্ঘজীবন কামনা করছি। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্যে পেয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদক, আর বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবাসহ অন্যান্য সেবামূলক ও সচেতনতামূলক কাজের জন্যে পেয়ে চলছেন সাধারণ মানুষের দৃশ্যমান/অদৃশ্যমান ভালোবাসা, সম্মান ও শ্রদ্ধা, যা কোনো পুরস্কারের চেয়ে কম নয়।