প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ঘুষখোর সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা এবং মতলবের হতভাগা কৃষককুল

দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংককে গ্রাহকরা সাধারণভাবে দেশের শীর্ষস্থানীয় সরকারি ব্যাংক হিসেবে মনে করে। সেই ব্যাংকের কোনো অনিয়ম সম্পর্কে জানলে গ্রাহকসহ দেশের সাধারণ মানুষ হতাশ হয় সবচে' বেশি। এমন একটি হতাশাজনক খবরই গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ছাপা হয়েছে শেষ পৃষ্ঠায়। নির্বাচনী খবরের ভিড়ে এটি প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা না হলেও পাঠকের নজর কিন্তু এড়ায়নি। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘ঘুষ ছাড়া মিলছে না কৃষি ঋণ মতলবে সোনালী ব্যাংকে ॥ কৃষি ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ’।
সংবাদটিতে চাঁদপুর কণ্ঠের মতলব ব্যুরো ইনচার্জ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রেদওয়ান আহমেদ জাকির লিখেছেন, মতলব দক্ষিণ উপজেলায় সোনালী ব্যাংক শাখায় কৃষি ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ ছাড়া মিলছে না কৃষি ঋণ। এমন অভিযোগ উঠেছে কৃষি ঋণ বিতরণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে। কৃষকদের অভিযোগ, ঋণ বিতরণের সময় ঘুষের টাকা রেখেই বাকি টাকা কৃষকদের দেয়া হচ্ছে। নবকলস গ্রামের জসীম উদ্দীন জানান, ৫০ হাজার টাকার কৃষি ঋণ পেতে তাকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকার ঘুষ দিতে হয়েছে। ঋণ বিতরণের সময় ঋণ বিতরণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল নিজ হাতে ঘুষের টাকা কেটে রেখে বাকি ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা তাকে দিয়েছেন। একই অভিযোগ নবকলস গ্রামের আলমগীর হোসেনের। অপরদিকে ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় ঋণ পাননি একই গ্রামের ইসমাইল হোসেন। তিনি জানান, ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিতে তার কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা ঘুষ চায় ব্যাংক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল। তিনি ঘুষ না দেয়ায় তাকে ঋণ দেয়া হয়নি। সোনালী ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরোক্ষভাবে ঘুষ নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ঘুষের টাকা নেই না। দালালের মাধ্যমে ২-৩ হাজার টাকা নিয়েছি।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে সোনালী ব্যাংকের মতলবগঞ্জ শাখায় ১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকার কৃষি ঋণ বিতরণের জন্যে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ২০২ জন কৃষকের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১ কোটি ৯ লক্ষ টাকা। ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, মোস্তফা কামাল মতলব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দালাল নিয়োগ করে রেখেছেন। দালালদের মাধ্যমে তার কাছে আসতে হয়। দালাল ছাড়া শত চেষ্টা করেও ঋণ পাওয়া যায় না। কৃষকরা আরো জানান, ঋণ বিতরণের সময় ভাউচারে স্বাক্ষর নিয়ে নিজেই ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন। তারপর ঘুষের টাকা নিজের হাতে কেটে রেখে বাকি টাকা কৃষকদের হাতে দেন। এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক মতলবগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক জোবায়েত উল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভাবতে অবাক লাগে, কতো দোর্দ- প্রতাপশালী সোনালী ব্যাংক মতলবগঞ্জ শাখার ঋণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, যার কাছে মতলবের হতভাগা কৃষককুল বড়ো অসহায়! চাহিদাকৃত কৃষিঋণ পেতে তার হাতে প্রতি কৃষককে দিতে হয় ২৭ শতাংশ ঘুষ। নিশ্চয়ই ব্যাংকের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত যাকে যাকে ম্যানেজ করতে হয়, তাদের সবাইকে ম্যানেজ করেই ঋণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের নির্বিঘ্ন ঘুষ বাণিজ্য চলছে। তদন্ত করে এমন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি খুব দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ না করা হয়, তাহলে ব্যাংকের ম্যানেজারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারবেন বলে মনে হয় না।