রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

নূতন ভবন নির্মাণে পাঁচ বছর এবং রোগীদের দুর্ভোগ
অনলাইন ডেস্ক

মঙ্গলবার দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ সংবাদ হয়েছে ‘হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে চিকিৎসা সেবা’। সংবাদটিতে মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রনি লিখেছেন, কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। নতুন ভবনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চলছে পুরাতন ভবনেই। যার ফলে সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আর সঠিকভাবে স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসকগণ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নোংরা পরিবেশ রোগীদেরকে আরো অসুস্থ করে তুলছে। হাসপাতালে স্বল্প পরিমাণে বেড থাকলেও রয়েছে নোংরা পরিবেশ। টয়লেটগুলোতে আরও বেশি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। সব মিলিয়ে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলছে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের ১৯ জুন হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ মে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। এ সময় সংযোজন করা হয় অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন, অপারেশন থিয়েটার, শক্তিশালী জেনারেটরসহ চিকিৎসা সহায়ক বিভিন্ন সুবিধাদি। পরে পরিবেশগত কারণে এ সকল সুবিধা থেকে পুরোপুরিভাবে বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ। এক্স-রে মেশিন, অপারেশন থিয়েটার, শক্তিশালী জেনারেটর অকেজো হয়ে পড়ে।

২০১৯ সালে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালে কাজ শেষ করে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। যার ফলে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে পুরানো ভবনে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুরানো ভবনে রোগীরা যেমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন তেমনি চিকিৎসকগণও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা সেবা দিতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। এ বছরের শেষের দিকে নূতন ভবনটির কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। নতুন বছরে নতুন ভবনে হাসপাতালের কার্যক্রম চালু হলে সেবার মান আরো উন্নত হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মামুন রায়হান জানান, নতুন ভবন টেন্ডার হওয়ার পর আমাদের হাসপাতালের পুরানো ভবনের একাংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়। আমরা অবশিষ্ট পুরানো ছোট ভবনে আমাদের চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। এক রুমে চারজন চিকিৎসক বসে দৈনিক পাঁচশত রোগী দেখতে হয়। এতে আমাদের যতোটা কষ্ট হয়, তার চাইতে বেশি কষ্ট হয় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের। রোগীরা যে বেডে থাকে তা অনেক অমানবিক। চিকিৎসা সেবা নিয়ে একজন রোগীকে সুস্থ হতে একটি সুস্থ পরিবেশ প্রয়োজন, যা এ হাসপাতালে নেই। আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষেই ২০২৪ সালের নতুন বছর নতুন ভবনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা প্রদান করতে পারবো। নতুন ভবনে কার্যক্রম চালু হলে সকল অসুবিধার সমাধান হবে। হাইমচরবাসী উন্নত চিকিৎসা পাবে। সংযোজন করা হবে অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন, অপারেশন থিয়েটার, শক্তিশালী জেনারেটরসহ চিকিৎসা সহায়ক বিভিন্ন সুবিধা। হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পুরানো টিনশেড ভবনে ইনডোর-আউটডোর করে কোনোরকমভাবে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী বছর মার্চ মাসের দিকে হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন উদ্বোধন হলে চিকিৎসা সেবার মান বাড়বে। এখন রোগীদের একটু কষ্ট হচ্ছে, আগামী দিনে হাইমচরে অপারেশনসহ সকল চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। হাইমচরের মানুষ চিকিৎসার জন্যে চাঁদপুর যেতে হবে না, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকল ধরনের চিকিৎসা নিতে পারবে।

সরকারি হাসপাতাল মানেই জরুরি সেবা প্রদানের স্থান। যেটি দিনের ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহের সাতদিন, মাসের তিরিশ দিন এবং বছরের ৩৬৫ দিন খোলা থাকে। হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিশ্চয়ই তেমন একটি প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানে নূতন ভবন করার নামে ২০১৯ থেকে ২০২৩ অর্থাৎ পাঁচ বছর ধরে রোগী ও চিকিৎসকদের যে কষ্ট দেয়া হচ্ছে, সেটা অবশ্য অবশ্যই দুঃখজনক, আপত্তিকর এবং অমার্জনীয়। একটি সরকারি হাসপাতালের নূতন ভবন করতে গিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান ও গ্রহণের বিকল্প পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না রেখে কর্তৃপক্ষীয় যে অমানবিকতা, উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতা প্রদর্শন করা হয়েছে ও হচ্ছে, সেটা জবাবদিহিতা ও তদন্তের দাবি রাখে। আমাদের দেশে ঠিকাদাররা যথাসময়ে যে কোনো কাজ না করে তাদের অজুহাতকে গ্রহণযোগ্য করতে যে কোশেশ চালায় এবং পার পেতে যে কৌশল ও সমঝোতা চালায়, তাতে লাভবান হয় ঠিকাদার ও কার্যাদেশ প্রদানকারী সংস্থার সংশ্লিষ্ট সকলে, আর কষ্ট পায় ‘পাবলিক’ নামের নিরীহ প্রাণী, যাদেরকে অনেক ঠিকাদারই ‘পাগল’ ছাড়া ভালো কিছু ভাবে বলে মনে হয় না। তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমাদের সকল উন্নয়ন কার্যক্রমে যদি সুষ্ঠুতা, সঠিকতা, সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে সেটি স্মার্ট বাংলাদেশ হবার প্রক্রিয়াকে পেছন থেকে অনেক টেনে ধরবে, যেটা কিন্তু এমন বাংলাদেশের প্রবক্তাদের মাথায় রাখতে হবে এবং হালকাভাবে না নিয়ে আগেভাগে সতর্ক হবার পদক্ষেপ নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়