রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

ইলিশ রক্ষায় ব্যাপক জনসচেতনতাই আসলে প্রয়োজন

ইলিশ রক্ষায় ব্যাপক জনসচেতনতাই আসলে প্রয়োজন
অনলাইন ডেস্ক

‘পদ্মা-মেঘনায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে ইলিশ শিকার ॥ আরো ৫০ জেলে আটক’ শিরোনামে চাঁদপুর কণ্ঠে গতকাল সোমবার প্রকাশিত সংবাদটি পড়ে সচেতন পাঠকমাত্রই উদ্বিগ্ন হয়েছেন। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুরের জেলেরা প্রশাসনের চলমান অভিযানের মধ্যেও কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় নিষিদ্ধ সময়ে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকার করছেন বলে অভিযোগ নদীপাড়ের মানুষের। নদীযুক্ত খালগুলোতে অবস্থান নিয়ে জোয়ারের সময় ইলিশ ধরছে স্থানীয় জেলেরা। রাতের বেলায় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করেও মাছ ধরছে তারা। লঞ্চের যাত্রী সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। সরকার ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি বছর ১২ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ মাছ শিকার, পরিবহন ও সংরক্ষণে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা সত্ত্বেও সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীতে অসংখ্য জেলে ইলিশ মাছ শিকারে ব্যস্ত রয়েছে। মতলব উত্তরের এখলাছপুর থেকে শুরু করে মতলবের বিভিন্ন চর এলাকা, রাজরাজেশ্বর চর, আমিরাবাদ, ফরাজিকান্দি, পুরাণবাজারের হরিসভা, রণাগোয়াল, দোকানঘর, রামদাসদী, সাখুয়া খাল, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুরসহ সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ নদী এলাকা ও হাইমচরে অসংখ্য জেলে প্রশাসনের অভিযান ফাঁকি দিয়ে নদীতে যাচ্ছে এবং মা ইলিশ নিধন করছে। নদীর পাড়ে ও নদীরপাড় সংলগ্ন বাগানে নিয়ে গিয়ে মাছ বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজার নিরাপত্তা কাজে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যস্ত থাকায় এই সুযোগটি বেশি কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণীর জেলে। এদিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরায় চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলায় পৃথক অভিযানে ৫০ জেলেকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর সদরে আটক হয়েছে ২৩ জন এবং হাইমচরে আটক হয়েছে ২৭ জন। ২১ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু করে ২২ অক্টোবর রোববার দুপুর ১টা পর্যন্ত উপজেলা টাস্কফোর্সের অভিযানে এসব জেলেকে আটক করা হয়।

১৯ ঘণ্টায় মেঘনা ও পদ্মার মতো উত্তাল নদীতে মা ইলিশ নিধনরোধে নিয়োজিত টাস্কফোর্সের ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান চালিয়ে ৫০ জন জেলেকে আটকসহ ধৃত মাছ ও জাল উদ্ধার চাট্টিখানি কথা নয়। এভাবে প্রায় প্রতিদিন টাস্কফোর্স কাজ করছে, জাল ও মাছসহ কম-বেশি জেলেদের আটক করছে এবং জেলে পুরছে। কিন্তু এক শ্রেণির জেলে সেটাকে পরোয়া করছে না। কারণ তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় কিছু নীতিহীন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং লোভী ও অপরিণামদর্শী জনপ্রতিনিধি। সেজন্যে মার্চণ্ডএপ্রিল দু মাসের জাটকা ইলিশ রক্ষা এবং অক্টোবর-নভেম্বরের ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষার জন্যে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন নদীর অভয়াশ্রম কার্যকর করার অন্তত ১৫ দিন পূর্ব থেকে নিকটবর্তী জনপদে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বার এবং শাসক দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, সর্বোপরি জেলেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করে একের পর এক অনেক সচেতনতামূলক সভা করা দরকার। যে সভায় কথা বলবেন স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা, নৌ পুলিশ, থানা পুলিশ ও কোস্টগার্ডের কর্মকর্তা। তারা সভায় উপস্থিত সকলের কাছ থেকে কার্যত ইলিশ রক্ষায় করণীয় সম্পাদনের অঙ্গীকার আদায় করবেন এবং অভয়াশ্রম চলাকালীন নদীতে মাছ ধরার পরিণাম সম্পর্কে জানিয়ে দেবেন। কথা হলো, সচেতনতামূলক সভা কি মোটেও হয় না? অবশ্যই হয়, তবে সেটা একেবারে কম। এতো কম সভায় বেশি সচেতনতা সৃষ্টি হয় না এবং ইলিশ রক্ষায় নিয়োজিত টাস্কফোর্সের অভিযান সত্ত্বেও ইলিশ নিধন পুরোপুরি বন্ধ হয় না। সেজন্যে আমরা জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচার, পর্যাপ্ত সভা করার ওপর গুরুত্ব দিতে মৎস্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি জোর অনুরোধ জানাতে চাই। কেবল অভিযাননির্ভর হলে ইলিশ নিধন যে পুরোপুরি বন্ধ হবে না এবং নানা অভিযোগ যে ক্রমশ বাড়বে সেটা আমরা হলফ করে বলতে পারি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়