প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

চার বছর আগে চাঁদপুর-ঢাকা নৌরূটে চলাচলকারী এমভি মিতালী লঞ্চের কেবিনে এক নারীর মৃত্যুর কথা সকলে যখন ভুলতে বসেছিলো, তখন পিবিআই দীর্ঘ তদন্ত শেষে অতি সম্প্রতি জানালো, পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই বিধবা নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তেমনি পিবিআই ধারণা করছে, প্রায় পৌনে তিন বছর পূর্বে হাজীগঞ্জের প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব মোঃ সেলিম মিয়ার পুত্র বাপ্পীকে তারই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সহ অন্যরা হত্যা করেছে। ‘হাজীগঞ্জে বাপ্পী হত্যা মামলায় সফলতা দেখালো পিবিআই’ শিরোনামের সংবাদে গত বৃহস্পতিবার কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, প্রায় পৌনে ৩ বছর পর হাজীগঞ্জের আবু বকর বাপ্পী (৩২) হত্যা মামলা রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। এ মামলায় ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত সোমবার রাতে তাদেরকে আটক করে মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজের ৩ দিন পর হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার রান্ধুনীমুড়া গ্রামের একটি পুকুর থেকে বাপ্পীর লাশ উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। এরপরেই নিহতের বাবা আলহাজ্ব সেলিম মিয়া বাদী হয়ে হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় গত সোমবারে গ্রেফতারকৃতরা হলো : হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন রান্ধুনীমুড়া গ্রামের বৈষ্ণব বাড়ির গৌতম চন্দ্র সাহা (২৭), একই বাড়ির জীবন সাহা নিরব ওরফে সাগর (২৫), অন্তু সাহা (২৯) ও লাকসামের বাসিন্দা বর্তমানে মকিমাবাদ সেবাশ্রমে বসবাসকারী সুকেশ কান্তি চৌধুরী (৪৩)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই, চাঁদপুর-এর উপ-পরিদর্শক মোঃ আমিরুল ইসলাম মীর জানান, গ্রেফতারকৃতদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। মামলার তদন্তকালে বাদীর এজাহার পর্যালোচনায় ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদ, মোবাইলের কল লিস্ট ও তদন্তে সন্দেহ হওয়ায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত সুকেশ ও গৌতম মামলার বাদী ও নিহতের বাবা সেলিম মিয়ার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন।
উল্লেখ্য, নিখোঁজের তিনদিন পর ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ১১নং ওয়ার্ডের রান্ধুনীমুড়া গ্রামের সোলেমান বেপারীর বাড়ি ওরফে হুনার বাড়ির পুকুর থেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি আলহাজ্ব সেলিম মিয়ার বড় ছেলে মোঃ আবু বকর বাপ্পীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় বাপ্পী। পরে তার কোনো খোঁজ না পেয়ে পরদিন তার বাবা আলহাজ্ব মোঃ সেলিম মিয়া হাজীগঞ্জ থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। যার নং : ১০৪১। নিহত মোঃ আবু বকর বাপ্পী পৌরসভাধীন ৫নং ওয়ার্ড মকিমাবাদ গ্রামের বাসিন্দা। তার স্ত্রী এবং মোঃ আব্দুল্লাহ্ (৫) ও আদিবা (৩) নামের দুই শিশু সন্তান রয়েছে। থানা সূত্রে জানা গেছে, ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে পৌরসভাধীন রান্ধুনীমুড়া এলাকার সোলেমান বেপারী বাড়ির পুকুরে মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন হাজীগঞ্জ থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলমগীর হোসেন রনি ও পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদসহ জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) মোঃ সুমন মিয়াসহ কর্মকর্তাগণ। পরে পুলিশ পুকুর থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট সম্পন্ন এবং বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে নিখোঁজ বাপ্পীর পরিবারের লোকজন উপস্থিত হয়ে তার মরদেহ চিহ্নিত করেন। এরপর চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে বাপ্পীর মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি পরিবারের পক্ষ থেকে হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
পিবিআইসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে নিহত আবু বকর বাপ্পীর বাবা মোঃ সেলিম মিয়া জানান, ওই সময়ে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ, পিবিআইসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন এবং আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। আশা করি, খুব শীঘ্রই রহস্য উদ্ঘাটন করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই সদস্যরা।
আমাদের দেশে সনাতনী যে পুলিশি ব্যবস্থা, তাতে বাদীর লাগাতার তদবির ছাড়া কোনো মামলার অগ্রগতি প্রত্যাশার সমান্তরালে হয় না। ২০১৬ সালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আধুনিক সরঞ্জামে ও উন্নত পদ্ধতিতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করলে বাদীর তদবির ছাড়াও যে মামলার অগ্রগতি হয় সাধারণ্যে সেই বিশ্বাস জন্ম নিতে শুরু করে। দেখা যাচ্ছে, থানা পুলিশ যেখানে ব্যর্থ, পিবিআই কিংবা র্যাব সেখানে হচ্ছে সফল। অপরাধী অপরাধ করে পার পাবার কোনো সুযোগই যে এখন আর থাকছে না, সেটা পিবিআই ও র্যাব বারবার প্রমাণ করে চলছে। আমাদের বিশ্বাস, পৌনে তিন বছর পূর্বে সংঘটিত হাজীগঞ্জের বাপ্পী হত্যার রহস্য পুরোপুরি উন্মোচনে পিবিআই সফল হবে এবং প্রমাণ করবে, হত্যাকারী নিকটে কিংবা দূরে যতো ছদ্মবেশ ধারণ করেই অবস্থান করুক না কেন, ধরা সে পড়বেই।