রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

প্রফেসর মোস্তাক আহাম্মদের মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা
অনলাইন ডেস্ক

লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রফেসর মোস্তাক আহাম্মদ। তিনি ছিলেন বৃহত্তর কুমিল্লার সবচে’ প্রাচীন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ। তাঁর পৈত্রিক নিবাস চাঁদপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল মতলব উত্তর উপজেলার নিজ ছেঙ্গারচর গ্রামে। পড়ালেখা শেষে তাঁর পেশাগত জীবনের প্রথম দিককার কর্মস্থল ছিলো চাঁদপুর। চাঁদপুর সরকারি কলেজ যখন বেসরকারি ছিলো, তখন তিনি প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সুন্দর পাঠদান পদ্ধতির কারণে স্বল্প সময়ে শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা ও সম্মান অর্জন করেন। সত্তর দশকে ও আশির দশকে চাঁদপুরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে ছিলো তাঁর কম-বেশি পরিচিতি। সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন যুব সংগঠন রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের চাঁদপুর শাখা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সহযোগিতায় একদল স্থানীয় শিক্ষিত যুবক ও পেশাজীবীদের নিয়ে সমাজসেবায় এমন কিছু কাজ করেন, যা চাঁদপুরের সুধীজনসহ সাধারণ মানুষের নজর কাড়ে। তিনি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পরিচালিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি)-এর সাথে জড়িত হয়েও বিশেষ পরিচিতি অর্জন করেন। আশির দশকে চাঁদপুর থেকে বদলি হয়ে নূতন কর্মস্থলে যোগদান করলে ক্রমশ তাঁর কর্মদক্ষতার বিকাশ ঘটতে থাকে। বিএনসিসিতে নৈপুণ্যের জন্যে তিনি সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদা লাভ করেন এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন। অনেকটা প্রচারবিমুখ ও নিভৃতচারী ছিলেন বলে তাঁর নিজ জেলা চাঁদপুরে তাঁর এমন গৌরবজনক অধিষ্ঠানের সকল মহলে কথা তেমন জানা ছিলো না।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রফেসর মোস্তাক আহাম্মদ শুধু কুমিল্লায় নয়, বৃহত্তর কুমিল্লায় খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন। নিজ জেলা চাঁদপুরের মানুষ তাঁর খ্যাতিকে যেভাবে কাজে লাগাতে পারতো, সেভাবে কেউ লাগানোর প্রয়াস চালিয়েছে বলে দৃশ্যমান হয়নি। তবে কুমিল্লা শহরবাসী ও জেলাবাসী তাঁর খ্যাতি ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সম্ভবত তাঁকে মায়ার ডোরে বেঁধে ফেলেন। বোধকরি সেজন্যে তিনি অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসরগ্রহণ শেষে জীবনের বাকিটা সময় কুমিল্লাতেই সপরিবারে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন এবং চিরস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে চাঁদপুর বা মতলব উত্তরের নিজ গ্রাম নয়, কুমিল্লাকেই পছন্দ করেন। সে কারণে গত সোমবার রাতে কুমিল্লা শহরস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করলে মঙ্গলবার বাদ জোহর তাঁর প্রিয় কলেজ ভিক্টোরিয়া কলেজের নিউ হোস্টেল ঈদগাহে সেনাবাহিনীর গার্ড অব অনারশেষে জানাজার পর নিকটস্থ গোরস্তানে চিরনিদ্রায় শায়িত করানো হয়।

মৃত্যুকালে অধ্যক্ষ প্রফেসর মোস্তাক আহাম্মদের বয়স হয়েছিলো ৭৫ বছর। ধর্মভীরু ও শৃঙ্খলাপরায়ণ এই মানুষটি আরো অনেকদিন বেঁচে থাকবেন বলে শুভাকাঙ্ক্ষী সকলে আশা করেছিলেন। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ইচ্ছায় সে আশা আর কারো পূরণ হলো না। অতি সম্প্রীতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহ রাজধানীর বিশেষায়িত একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয় এবং স্থানীয় একটি হাসপাতালের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বাসায় চিকিৎসা চালানো হয়। এতে তিনি ভালোই বোধ করছিলেন। এমতাবস্থায় সোমবার রাত ১১টায় তিনি বলা যায় আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেজন্যে তাঁর মৃত্যুটি পরিণত বয়সে হলেও আকস্মিকই ঠেকেছে সকলের নিকট। পরিচিত সকল মহলে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারও তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকাহত। আমার তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়