রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

নিরুপদ্রব খাল দখল
অনলাইন ডেস্ক

রেলওয়ে এবং সড়ক ও জনপথের জায়গা সহজে দখল করলেও মাঝেমধ্যে দখলদারদেরকে উচ্ছেদ অভিযানের শিকার হতে হয় এবং উচ্ছেদ আশঙ্কায় ভুগতে হয়। কিন্তু সরকারি খালের জায়গা দখল করলে দখলদারদের কোনো কিছুর শিকার হতে হয় বলে মনে হয় না। ফলে দখলদার খালের পাড় শুধু নয়, খালের ওপরই নিশ্চিন্তে বসতঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করে। এমন নমুনা হয়তো শহরে দৃশ্যমান হয় না। তবে শহর থেকে দূরে একটু প্রত্যন্ত এলাকা কিংবা সরকারের কর্তাব্যক্তিরা যেখানে সাধারণত যান না, যাওয়ার বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে যেতে পারেন, সেসব এলাকায় খাল দখলের নগ্ন নমুনা ও স্থায়ী স্থাপনা গড়ে তোলার দুঃসাহস চোখে পড়ে। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় 'নানুপুর-মকিমপুরে সরকারি খাল দখল করে ঘর নির্মাণ' শিরোনামের সংবাদটি তার প্রমাণ।

সচিত্র সংবাদটিতে সোহাঈদ খান জিয়া লিখেছেন, চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের নানুপুর-মকিমপুর গ্রামে সরকারি খাল ভরাট করে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঘর নির্মাণ করার সময় খাল ভরাট করে নিচে মিডিয়াম পাইপ দিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করে। কিন্তু পাইপ সরু হওয়ায় পানি চলাচল করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এতে বৃষ্টির পানি জমে চাষাবাদের জমি তলিয়ে যাওয়াসহ বসতবাড়িতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ খাল দিয়ে প্রায় ৪শ’ একর জমির পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু সরু পাইপ দেয়ার ফলে পানি নিষ্কাশন একেবারে কম হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে কৃষকরা কষ্টার্জিত আশানুরূপ ফসল ঘরে তুলতে পারে না। যার ফলে অনেকেই জমি চাষাবাদ ছেড়ে দিয়েছে। এতে করে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে। জানা যায়, প্রভাবশালী মহলের সাথে আঁতাত করে খাল ভরাট করে স্থানীয় কোনো লোক বা দূর থেকে আগত কেউ জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করে। এর বিনিময়ে ওই মহল পেয়ে থাকে বড় ধরনের নগদ অর্থ। পরিণামে সরকারি খাল ভরাট হয়ে যে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে সেদিকে কারো নজর নেই। এভাবে খাল ভরাট করতে থাকলে একদিন ফসলের জমিগুলোতে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে না। এসব জমির উপর অনেকের সংসার চলে আসছে। জমিগুলোতে পানি জমে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেলে এ সকল পরিবার খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালের নিজ গাছতলা ঈদগাহ মাঠের দিক থেকে উত্তর দিকে খাল ভরাট করে বসতঘর গড়ে উঠেছে। এসব বসতঘর নির্মাণ করার সময় বড় পরিসরের খাল ভরাট করে কেউ নামমাত্র কালভার্ট কিংবা কেউ ছোট পাইপ স্থাপন করে। আবার সরকারি খালের জায়গা ভরাট করে সে জায়গা তারা দখল করে নিচ্ছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন কৃষক জানান, খাল ভরাট করার কারণে বৃষ্টির পানি জমে আমাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যারা বসতঘর করেছে তারা কিছু প্রভাবশালী লোকজনকে হাতে রেখে সেটি করে। আমরা কষ্ট করি, ফসল করে পানি জমে থাকার কারণে আশানুরূপ ফসল ঘরে আনতে পারি না। ইউপি সদস্য ফজলুর রহমান বলেন, বাড়িঘর নির্মাণ করে সরকারি খাল ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। কৃষকের কথা চিন্তা করে সরকারি খাল রক্ষা করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে বাগাদী ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল বলেন, এ খালটি বহু পুরানো। ১০/১২ বছর ধরে খালটি দখল করে বাড়ি-ঘর গড়ে উঠেছে। খালটি ভরাট করার কারণে পানি চলাচল করতে না পারায় পানি জমে কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষক বাঁচাতে হলে পানি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে খালটি উদ্ধার করা প্রয়োজন।

আমাদের দেশে অনেক মেগা প্রকল্প দেখা যায়, যেগুলোর সুসম্পন্নকরণের তৃপ্তিতে আমরা ঢেঁকুর তুলি, বাহবা দেই, বাহবা পেতে উন্মুখ থাকি। আমরা মনে করি, দখলকৃত খাল, নদী সহ অন্যান্য জলাশয় দখলমুক্ত করতে ছোটখাট প্রকল্প নয়, মেগা প্রকল্পই দরকার। অবকাঠামোগত দৃশ্যমান প্রকল্পের অনিবার্যতা যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি পরিবেশ রক্ষার জন্যে কার্যকর ও বাস্তবানুগ প্রকল্পও এড়ানো যায় না। বাংলাদেশ পাহাড় ও মরুময়তার প্রাবল্যে ভরপুর দেশ নয়, বরং নদী, খালবিলে ভরপুর একটি দেশ। এই দেশের ভূপ্রকৃতি বিবেচনায় রেখে নদী ও খালবিলের সুরক্ষাকে যদি গুরুত্ব দেয়া না হয়, তাহলে আমরা আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডের দিকেই ক্রমশ ধাবিত হতে থাকবো--সেটা চোখ বুঁজেই বলা যায়। আমরা সরকারকে নদী, খালবিল সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ, কঠোর পদক্ষেপ ও নিরাপোষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে তার প্রশাসনযন্ত্রকে কাজে লাগাতে দ্রুত দিকনির্দেশনা দিতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়