প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জনপ্রতিনিধির অমানবিকতা!

গণ্ডারের চামড়া অনেক ভারী। কাতুকুতু দিলে তিনদিন পর হাসে। এটি প্রচলিত কথা। চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক এক জনপ্রতিনিধি নিজের সহনশীলতা ও ধৈর্যের বিষয়ে প্রায়শ এই কথাটা বলতেন। তিনি বলতেন, আমরা যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তাদের অধিকাংশের শরীরের চামড়া গণ্ডারের চামড়ার মতো ভারী। আমরা ধৈর্য ধরে সাধারণ মানুষের সমস্যা শুনি, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য গালাগালও শুনি, বঞ্চিত মানুষের কিংবা ভুল বুঝে খেপে যাওয়া মানুষের আচরণ চুপ করে দেখি, এছাড়া অপবাদ সহ আরো কতো কিছু সহ্য করি, তবে সহজে নিজেরা খেপি না। এমন মানসিকতার জনপ্রতিনিধিরা বারবার নির্বাচিত হন। আর বিপরীত চরিত্রের অধিকারীরা নির্বাচিত হন একবার, বড়োজোর দুবার।
|আরো খবর
বদমেজাজি, ধৈর্যশক্তি কম এমন লোক জনপ্রতিনিধি হলে জনসেবার চেয়ে নিজের ক্ষমতা বেশি প্রদর্শন করেন কিংবা কেবলই বড়াই করেন। মাঝেমধ্যে অঘটনও ঘটিয়ে ফেলেন, যেটি জনমনে তৈরি করে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এমন বিষয় যদি পত্রিকায় আসে, তাহলে সৃষ্টি হয় আলোড়ন। চাঁদপুর কণ্ঠে এমন একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ‘ভাইস চেয়ারম্যানের ছোড়া কেটলিতে ঝলসে গেলো দোকানদারের শরীর’। এ সংবাদে হাজীগঞ্জে কর্মরত চাঁদপুর কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিনিধি পাপ্পু মাহমুদ লিখেছেন, সিগারেটের দাম বেশি রাখায় দোকানদারের শরীরে চায়ের গরম কেটলি ছুড়ে মারার অভিযোগ উঠেছে কচুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে। জানা যায়, কচুয়া বাজারের বিশ্বরোডের চায়ের দোকানদার মুকবুল খানের (৬০) সাথে সিগারেটের দাম নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চায়ের গরম কেটলি ছুড়ে মারেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম। ঝলসানো শরীর নিয়ে নিজ উপজেলা স্বাস্ব্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্যে ভর্তি হতেও বাধা দেয়ার অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। পরে পাশর্র্^বর্তী হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন তিনি। ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার দিবাগত রাতে। ভুক্তভোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে শনিবার হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান স্বজনরা। মুকবুল খান কচুয়া পৌর এলাকার কোয়া গ্রামের মৃত জাফর আলীর ছেলে। শনিবার দুপুরে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, মুকবুল খানের পিঠ, হাত ও পা ঝলসে আছে। কর্মরত চিকিৎসক জানান, সুস্থ হতে সময় লাগবে তার। দোকানদার মুকবুল বলেন, শুক্রবার রাতে ভাইস চেয়ারম্যান আমার দোকান থেকে অন্য লোক দিয়ে বেনসন সিগারেট নেন। কিছুক্ষণ পর সিগারেটের দাম বেশি নিয়েছি বলে ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম ৮-১০ জন লোক নিয়ে এসে আমার ওপর হামলা করেন। এক পর্যায়ে গরম চায়ের কেটলির পানি আমার শরীরে ছুড়ে মারেন। এ সময় আশেপাশের লোকজন আমাকে উদ্ধার করেন। পোড়া শরীর নিয়ে আমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। আমাকে এবং আমার পরিবারকে হুমকি দেন, আমি যেনো হাসপাতালে ভর্তি না হই। যন্ত্রণায় আর টিকতে না পারলে আমাকে হাজীগঞ্জ নিয়ে আসে আমার পরিবার। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম জানান, মুকবুল রাজনৈতিক উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলেন। এক পর্যায়ে কিছু লোকের সাথে তার হাতাহাতি হয়। হাতাহাতির সময় তার শরীরে গরম পানি পড়ে। আমি সে সময় সেখানে উপস্থিত থাকলেও এ ঘটনার সাথে জড়িত নই। কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির জানান, ঘটনাটি জেনেছি, দোকানদারকে চিকিৎসা নিতে বলেছি।
কচুয়া বিশ্বরোডের চা দোকানদার মুকবুল খানের অভিযোগ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম অস্বীকার করায় বিষয়টির নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। ধরে নিলাম, উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলায় খেপে যাওয়া কিছু মানুষের ছোড়া কেটলির গরম পানিতে মুকবুল খান আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাতে পারতেন সেখানে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী জনপ্রতিনিধি মাহবুব আলম। কিন্তু তিনি সে কাজটি করেন নি। এটি কি অমানবিকতা নয়? মুকবুল খান বাড়ির কাছের কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি না হয়ে দূরবর্তী হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে গেলেন কেন?