রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ইউএনও’র তাৎক্ষণিক পারঙ্গমতা
অনলাইন ডেস্ক

আমাদের দেশে সরকারি কর্মকর্তাগণের কেউ এখন আর ভিনদেশি নন। এ দেশের সংস্কৃতি, জল-হাওয়া ও মাটির গন্ধে বেড়ে ওঠা যোগ্য লোকেরাই এখন সরকারের বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন। এদের স্বল্প সংখ্যকই লোভী, স্বার্থপর হয়ে থাকেন, বাকি সবাই নির্লোভ, নিখাদ দেশপ্রেমিক, জনবান্ধব, সংবেদনশীল, মানবিক হওয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ এই চেষ্টায় সফল হন, দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, আবার কেউবা ব্যর্থ হন। যারা সফল হন, তারা আলোচিত হন। এমন আলোচিত হওয়া সরকারি এক কর্মকর্তা হচ্ছেন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল ইসলাম। অতি সম্প্রতি এই ইউএনও প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহে চাঁদপুরের আট উপজেলার ইউএনওদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইউএনও হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। এর পেছনে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে তাঁর আন্তরিক অবদানের মূল্যায়ন করা হয়েছে। তিনি যে সরকারের অনেক ব্যয় না বাড়িয়ে নিজ প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় কিছু সমস্যার সমাধান করতে পারেন, ইতিমধ্যে তার উল্লেখযোগ্য প্রমাণও রেখেছেন। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা গেছে সেই প্রমাণ, জানা গেছে তাঁর তাৎক্ষণিক পারঙ্গমতা।

সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর শিশু শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিলেন ইউএনও’। এ সংবাদটিতে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ নেই এমন একটি সংবাদ চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশের ক'দিনের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের বসার জন্যে ৩৪ জোড়া বেঞ্চ পৌঁছে দিলেন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম। বেঞ্চ পেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেজায় খুশি। ঘটনাটি তাঁর উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়নের আহমেদাবাদ (রামরা) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজারগাঁও ক্লাস্টারের মধ্যে অবস্থিত বিদ্যালয়টিতে দেয়ার জন্যে পাশের বেশ ক'টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মেরামতযোগ্য ৩৪ জোড়া বেঞ্চ সংগ্রহ করেন ইউএনও। পরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বেঞ্চগুলো মেরামতের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করা হয়। এরপরেই গত সপ্তাহে বিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা হয় বেঞ্চগুলো। বিদ্যালয়ে ৩৪ জোড়া বেঞ্চ পেয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বেজায় খুশি। প্রাথমিকভাবে বেঞ্চ সংকট সমাধানে তারা উপজেলা প্রশাসনের প্রতি খুশি। সরজমিনে গেলে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির এখন প্রধান সমস্যা সীমানা প্রাচীর ও শিক্ষক সংকট। বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চে বসে ক্লাস করছে সকল শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একটি শ্রেণিকক্ষে প্রধান শিক্ষক এবং অপর দুটি শ্রেণিকক্ষে দুজন সহকারী শিক্ষক (শিক্ষিকা) পাঠদান করছেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, আজ সকালে শ্রেণিকক্ষে এসে তারা বেঞ্চগুলো দেখতে পেয়েছেন। এজন্যে সবাই খুশি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মাহমুদ হাছান মোস্তফা জানান, আমাদের পুরানো টিনশেড ভবন ও শ্রেণিকক্ষে থাকা অধিকাংশ বেঞ্চ ব্যবহার ও মেরামতের অনুপযোগী হয়ে গেছে। কয়েক মাস আগে আমাদের নতুন ভবনের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই নতুন ভবনের সাথে নতুন বেঞ্চেরও বরাদ্দ আছে। কিন্তু বেঞ্চগুলো পেতে সময় লাগছে। আগে বেঞ্চগুলো ভবন নির্মাণের ঠিকাদার দিতেন, আর এখন জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। রাজারগাঁও ইউনিয়নের ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, আমার ক্লাস্টারে ৪৫টি বিদ্যালয় রয়েছে, আর আমি কয়েকমাস হলো দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে সবক’টি বিদ্যালয় একাধিকবার পরিদর্শন করেছি। পরিদর্শনকালীন সময়ে এই বিদ্যালয়টিতে (আহমেদাবাদ সপ্রাবি) কিছু বেঞ্চ সংকট দেখতে পাই। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় বিষয়টি জানতে পেরেছেন। পরবর্তীতে স্যারের নির্দেশনা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মহোদয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আমরা দ্রুততম সময়ে বেঞ্চগুলো মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করি। এরপর আজ (রোববার) ক্লাস শুরুর আগেই বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চগুলো সাজানো হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রাশেদুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসক স্যারের নজরে একটি সংবাদ এসেছে। পরবর্তীতে স্যারের নির্দেশনায় বিদ্যালয়ে বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি একটি সাময়িক সমস্যা। আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং ওই ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। আশা করি আগামী মাসের মধ্যেই নতুন ভবনের সাথে বরাদ্দকৃত বেঞ্চগুলো চলে আসবে। বাকি যেসব সমস্যা আছে, তা পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে।

যে কোনো জেলার জেলা প্রশাসক অসম্ভব কর্মব্যস্ত একজন মানুষ। তিনি স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে চোখ বোলানোর সময় সবসময় পান না। তারপরও কোনো কোনো জেলা প্রশাসক কষ্ট হলেও সে সময়টুকু বের করে নেন। এমন একজন জেলা প্রশাসকই হচ্ছেন চাঁদপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত আহমেদাবাদ (রামরা) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেঞ্চের তীব্র সঙ্কটে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ নিয়ে আলমগীর কবির কর্তৃক চাঁদপুর কণ্ঠে পরিবেশিত সংবাদ পড়ে আলোড়িত হয়েছেন এবং সেটি হাজীগঞ্জের ইউএনও’র মাঝে সঞ্চারিত করেছেন। সেমতে ইউএনও দ্রুত সেই সঙ্কট নিরসনে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় যা করেছেন তা অবশ্যই তাঁর তাৎক্ষণিক পারঙ্গমতা এবং প্রাথমিক শিক্ষাবান্ধব ফলপ্রসূ কার্যক্রম। আমরা এজন্যে ইউএনওকে অনেক ধন্যবাদ জানাই, আর জেলা প্রশাসককে জানাই অশেষ কৃতজ্ঞতা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়