রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

শিক্ষার্থীদের নির্যাতন কি পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে?
অনলাইন ডেস্ক

আমাদের অনেক শিক্ষক, বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষদের অধিকাংশই শিক্ষার্থীদের প্রহার সহ মানসিক নির্যাতন বন্ধে সরকারের আইনি নির্দেশনায় প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য বিরক্তিতে ভুগছেন। কেউ কেউ তো প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্যে বলছেন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ এমন আইনি নির্দেশনায় শিক্ষার যতোটুকু বারোটা বাজানোর দরকার, ততোটুকুই বাজিয়ে গেছেন। এখন আইনি ভয়ে শিক্ষার্থীদের অন্যায় ও বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে শিক্ষকরা কিছুই করতে পারছেন না। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পূর্বের ন্যায় শৃঙ্খলা নেই, মান্যতা নেই। কিন্তু কথা হলো, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি শিক্ষার্থীদের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন শতভাগ বন্ধ হয়ে গেছে? মোটেও না। ওপেন সিক্রেট পদ্ধতিতে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও এমন নির্যাতন চলছে। খোদ চাঁদপুর শহরের একটি স্কুলে ‘ম’ আদ্যাক্ষরের এক সহকারী প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে বেত চালান নির্ভয়ে। এটা ওই স্কুলের অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির লোকজন ভালো করেই জানেন। হাফেজি ও কওমি মাদ্রাসা সহ অন্যান্য কিছু মাদ্রাসায় বেত কি বন্ধ হয়েছে? এসবের ইতিবাচক জবাব দেয়ার মতো লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যদি শিক্ষার্থী নির্যাতন পুরোপুরি বন্ধ হতো, তাহলে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ নিশ্চয়ই বন্ধ হতো। কিন্তু সেটি কি বন্ধ হয়েছে? যদি বন্ধ হতো, তাহলে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে এমন সংবাদ প্রকাশিত হতো না। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে 'সার্ভার বন্ধ থাকায় স্কুল শিক্ষকের কাছে মার খেয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা!’

চাঁদপুর কণ্ঠের ‘তথ্য-প্রযুক্তি কণ্ঠ’ পাতায় প্রতিবেদক এই সংবাদটিতে লিখেছেন, রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়। ইআইআইএন : ১০৩৭১৮। চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার ৪নং কালচোঁ ইউনিয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত একটি শিক্ষানিকেতন। সেই স্কুলের এক শিক্ষক ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন করছেন। যা কোনো নিয়ম বা শাসনের মধ্যে পড়ে না। শুধুমাত্র জন্ম নিবন্ধনের ইংরেজি কপি জমা না দিতে পারার কারণে একজন শিক্ষক কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মারবেন, এটা কোনো অভিভাবকই সহ্য করতে পারেন না। এ বছরের জানুয়ারিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা। তাই পিতার এনআইডি কার্ড, মাতার এনআইডি কার্ড, পূর্বের স্কুলের প্রশংসাপত্র জমা দিতে হবে। আরও জমা দিতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্মনিবন্ধনের ছায়াকপি। তো ওই সময় ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্র চাঁদপুর পৌরসভার জন্মনিবন্ধনের বাংলা কপি জমা দিয়েছে, তাতে হবে না। জন্মনিবন্ধনের ইংরেজি কপি লাগবে। ফেব্রুয়ারিতে চাঁদপুর পৌরসভায় ওই ছাত্রের বাংলা জন্মনিবন্ধন কপি জমা দিয়ে ইংরেজি জন্মনিবন্ধনের কপির আবেদন করা হয়েছে। গত কয়েক মাসেও ‘সার্ভার ডাউন’ সমস্যার কারণে মিলেনি ওই জন্ম নিবন্ধনের ইংরেজি কপি। তাতেই হয়েছে কাল। গত মাসে রামপুর স্কুলের রাসেল নামের শিক্ষক ধরে ধরে ছাত্র-ছাত্রীদের কয়েকবার পিটিয়েছেন জন্ম নিবন্ধনের ইংরেজি কপির জন্যে। এই পেটানোর ভয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিল। শিক্ষকের বেতের ভয়ে তারা এখন স্কুলে যেতেই ভয় পায়। বিষয়টি জানতে রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির হোসেন সরকারের সাথে কথা হয়। তিনি অভিযুক্ত শিক্ষককে তলব করে এর কারণ জানতে চান। ওই শিক্ষক জানান, ছাত্র-ছাত্রীরা কাগজপত্র জমা দিতে না পারায় তিনি বেত্রাঘাত করছেন। প্রধান শিক্ষক বললেন, আসলে যেহেতু সার্ভার বন্ধ, তারা কাগজপত্র দিতে পারছে না, আপনি বিষয়টি আমাকে জানালেই হতো। বোর্ড থেকে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বেত্রাঘাত করা নিষেধ করা হয়েছে। যেহেতু দোষটা তাদের নয়, তাই তাদেরকে বেত্রাঘাত করা যাবে না। বিষয়টি আমাদের ভুল হয়েছে। তিনি ভুল স্বীকার করেছেন।

আমরা এই সম্পাদকীয় নিবন্ধে শিক্ষার্থী নির্যাতনে শিক্ষক কী কী শাস্তির মুখোমুখি হবেন, সেটা উল্লেখ করে ভীতি ছড়াতে চাই না। শুধু বলতে চাই, কাজীর গরু কেতাবে থাকলে যেমন হয় না, গোয়ালেও থাকতে হয়; ঠিক তেমনি আইন থাকলে হয় না, সেটার বাস্তবায়নও থাকতে হয়। যেমন-শিক্ষার্থী নির্যাতন বিষয়ক আইন কাগজে কলমে থাকলে হবে না, বাস্তবায়নেও থাকতে হবে। শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন তথা কার্যকারিতা প্রদর্শন না করা পর্যন্ত কোনো আইনকে ফলপ্রসূ বলা যায় না। আমাদের দেশে শিক্ষার্থী নির্যাতন বিরোধী আইনকেও ফলপ্রসূ বলা যায় না, যেহেতু এর কার্যকারিতা সচরাচর দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। আমরা এই আইনটির পুরোপুরি কার্যকারিতা চাই, অন্যথায় সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ চাই কিংবা পুরোপুরি বাতিল চাই। আমাদের এই চাওয়া পূর্ণ না হলে রামপুর হাই স্কুলের রাসেলের মতো শিক্ষকদের উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অপপ্রয়াস বন্ধ হবে না কিংবা ওপেন সিক্রেট পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী নির্যাতন কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলতেই থাকবে, যাতে সংশ্লিষ্টরা শাস্তির মুখোমুখি না হয়ে কার্যত চাঁদপুর শহরের ‘ম’ আদ্যাক্ষরের সহকারী প্রধান শিক্ষকের মতো বেপরোয়াই হয়ে যাবেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়