প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
বড় শহরে সচরাচর পাওয়া যাচ্ছে না দেশসেরাদের!
রাজধানী, বিভাগীয় শহরসহ জেলা পর্যায়ের বড় বড় শহরে ভালো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। এসব শহরে কিংবা বাইরে সুপরিসর জায়গায় ক্যাডেট কলেজ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। উপজেলা সদরে রয়েছে মাঝারি মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। আর গ্রামে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার মধ্যে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। সন্তোষজনক শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ শিক্ষকগণের মধ্যে নগণ্য সংখ্যকই গ্রামে নিয়োগ পেতে ও থাকতে ইচ্ছুক হন। এঁদের প্রায় সবাই শহরে অবস্থান নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে থাকেন শুধুমাত্র স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনযাপনের প্রয়োজনে। এঁদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ শহরে অবস্থান নিশ্চিত করতে চান প্রাইভেট-বাজার জমজমাট করার প্রয়োজনে। কারণ, শহরেই অবস্থান করে থাকে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের স্কুল-কলেজগামী ছেলেমেয়েরা, যারা এমন শিক্ষকগণের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। প্রাগুক্ত এসব কারণে বিভিন্ন পরীক্ষায় শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গড় ফলাফল গ্রামের চেয়ে অনেক ভালো।
|আরো খবর
স্বাধীনতাপূর্ব ও পরবর্তীকালে পরীক্ষায় জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) প্রবর্তনের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার ফলাফলে যে সম্মিলিত মেধা তালিকা ও বিভাগওয়ারী মেধা তালিকা প্রকাশিত হতো, তাতে শহুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ক্যাডেট কলেজে পড়ুয়াদের একচ্ছত্র দাপট দেখা যেতো। কালেভদ্রে গ্রাম পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ২-৪ জন উপরোক্ত তালিকাসমূহে শীর্ষস্থান দখল করে চমক সৃষ্টি করতো, তবে ধারাবাহিকতা রাখতে পারতো না। পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ প্রবর্তন করার পর কোনো মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয় না বলে এখন সুস্পষ্ট জানা যায় না কোন্ কোন্ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেরা শিক্ষার্থীরা পড়েছে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, মেডিকেল-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও বিসিএস পরীক্ষাসহ আরো কিছু পরীক্ষার ফলাফলে দেশসেরা মেধাবীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, যারা কিনা অধিকাংশই বড় বড় শহরে শৈশব থেকে সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার মতো কেউ নয়। এরা নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হওয়া অদম্য মেধাবী। সম্প্রতি এমন মেধাবীরাই বিভিন্ন পরীক্ষায় দেশসেরা মেধাবী হবার ধারাবাহিকতা অনেকটা ধরে রেখেছে। অবস্থা এমন, বড় শহরে সচরাচর পাওয়া যাচ্ছে না দেশসেরা মেধাবীদের।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত মেডিকেল কলেজসমূহের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের মেয়ে সুমাইয়া মোসলেম সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন। তিনি ডুমুরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছেন। সুমাইয়া পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলায় প্রথম এবং জেএসসিতেও উপজেলায় প্রথম হয়েছিলেন। সুমাইয়া মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আমি কল্পনাও করিনি দেশসেরা হবো। বস্তুত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন পরীক্ষায় দেশসেরা যারা হচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই কল্পনাবহির্ভূত ফলাফল করছেন। এটা কেনো হচ্ছে, সেটা গবেষকদের ভাবনার বিষয় বা গবেষণার উপজীব্যে পরিণত হচ্ছে বলে আমাদের অভিমত।