প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ০১:৩১
জরাজীর্ণ ভবনে তিন যুগেরও বেশি সময় চলছে সাহিত্য একাডেমির কার্যক্রম
নতুন ভবন নির্মাণের জোরালো দাবি

চাঁদপুর শহরের জোড়পুকুর পাড়ে তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে সাহিত্যচর্চার আলো ছড়ানো সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুর আজ অস্তিত্ব সংকটে। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সাহিত্য চর্চা কেন্দ্রটি এখন একটি একতলা জরাজীর্ণ ভবনে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে, দেয়ালে ফাটল, ভাঙ্গা দরজা-জানালা আর স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার ঘরে চলছে জেলার সাহিত্য চর্চা এবং সাহিত্য কর্ম। ভবনটি এখন এতোটাই জরাজীর্ণ যে, যে কোনো সময় বড়ো ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে।
|আরো খবর
জানা যায়, সাহিত্য একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, চাঁদপুরের দ্বিতীয় জেলা প্রশাসক এসএম শামসুল আলমের আন্তরিকতায় প্রায় ৩৭ বছর পূর্বে ১৯৮৮ সালে এই ভবনটি জেলা পরিষদের প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়। এই পুরানো ভবনটিতেই এতো বছর ধরে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির নিয়মিত সাহিত্য সভা ও পাঠচক্র চলে আসছে। তবে ভবন জরাজীর্ণ হলেও সাহিত্যচর্চা কখনও বন্ধ হয়নি শুধুমাত্র সাহিত্যপ্রেমীদের নিষ্ঠার কারণে। সাহিত্যকর্মীরা বলছেন, এভাবে জরাজীর্ণ ভবনে সাহিত্য একাডেমির কার্যক্রম আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় ও নিরাপদ নয়।
পুরো ভবনটিতে মাত্র তিনটি কক্ষ থাকলেও একটি কক্ষে নিয়মিত সাহিত্য কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে। ভবনে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই, ছাদ থেকে পানি পড়ে, বৃষ্টির দিনে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ছাদের নিচের অংশ ভিজে থাকে, অনেক জায়গায় দেয়াল বেয়েও পানি পড়ে।
চাঁদপুরের অনেক প্রবীণ সাহিত্যকর্মীর কাছ থেকে জানা যায়, সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুর ঢাকায় বাংলা একাডেমির পর দেশের হাতেগোণা দুটি সাহিত্য একাডেমির একটি। অন্যটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাকলেও চাঁদপুরের সাহিত্য কার্যক্রম বরাবরই ছিলো উল্লেখযোগ্য ও অগ্রগামী। অথচ এই শহরের সাহিত্যকেন্দ্রের এমন করুণ পরিণতি হতাশাজনক।
সম্প্রতি নবনির্বাচিত পরিষদের উদ্যোগে একটি সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত হয় ভবনের ভেতরেই। সেখানে উপস্থিত কবি-সাহিত্যিকরা সরজমিনে ভবনের বেহাল অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে যান।
সাহিত্যকর্মীরা জানান, এই ভবনের বয়স প্রায় ৩৭ বছর। ভবনটি নির্মাণের পর আজ পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের সংস্কার হয়নি। আমরা চাই, প্রশাসন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ নিক, নতুন ভবন না হলে এই প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাবে।
ভবনটির বিষয়ে কথা হয় চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমিতে নয় বছরের অধিক সময় দায়িত্বে থাকা সাবেক মহাপরিচালক রোটারিয়ান কাজী শাহাদাতের সাথে। তিনি জানান, ১৯৮৬ সালের জুলাইতে সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুর প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমান ভবনটিতে কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। এর আগে মিশন রোডে 'গিরিধাম' ভবনের দোতলায় চলতো একাডেমির কার্যক্রম।
তিনি বলেন, “জোড়পুকুর পাড়ে সাহিত্য একাডেমির নিজস্ব ভবন নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়া ও পলেস্তারা খসার ঘটনা ঘটে। জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের অনুদানে বারবার মেরামত করা হলেও টেকসই হয়নি। সর্বশেষ কিছু সংস্কার হলেও ছাদ মেরামত বা বড় কাজ হয়নি। একজন রাষ্ট্রপতির দূর সম্পর্কের ভাগ্নি জামাই ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পেয়ে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ করেছেন বলেই ভবনটি দ্রুত জীর্ণ হয়ে পড়ে।”
“এই জীর্ণতাকে জোড়াতালি দিয়েই বারবার ঢাকার চেষ্টা হয়েছে, এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। সেজন্যে নতুন ভবন নির্মাণই এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
স্থানীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, তরুণ লেখক এবং সংস্কৃতিপ্রেমীরা ইতোমধ্যেই সাহিত্য একাডেমির একটি আধুনিক ভবনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁদের দাবি, দ্রুত একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করে সেখানে গ্রন্থাগার, গবেষণা কেন্দ্র, সেমিনার হল, নিয়মিত সাহিত্য আড্ডা ও তরুণ লেখকদের জন্যে রেসিডেন্সিয়াল ওয়ার্কশপ স্পেস তৈরি করা হোক।
সচেতন মহল ও সাহিত্যপ্রেমীরা মনে করছেন, জেলা প্রশাসনের সদিচ্ছা ও সরকারি বরাদ্দ থাকলে এই গৌরবময় প্রতিষ্ঠান আবারো নতুন রূপে প্রাণ ফিরে পেতে পারে।
সাহিত্য একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক কাদের পলাশ বলেন, “৩১ মে ২০২৫ তারিখে নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদ দায়িত্ব নিয়েছে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে আমরা চাঁদপুরের সাহিত্যকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। একটি পরিশুদ্ধ চিন্তাশীল তরুণ প্রজন্ম তৈরিই আমাদের লক্ষ্য। আমরা নিয়মিত সাহিত্য আড্ডা ও মননশীল কার্যক্রম চালু করতে চাই।”
সাহিত্য একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “একাডেমির সাহিত্য চর্চা সরব করতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একাডেমির নিজস্ব অর্থ না থাকলেও ভবন সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
ডিসিকে/এমজেডএইচ