বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০১:১৭

মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান শেষ হতে মাত্র ৩ দিন বাকি

রাতে জেগে মাছ ধরে জেলেরা, ভোরে নদীর তীরে বসে ইলিশের হাট

মো. মিজানুর রহমান
রাতে জেগে মাছ ধরে জেলেরা, ভোরে নদীর তীরে বসে ইলিশের হাট

ইলিশ শিকার ও বেচাকেনায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে বাকি আর মাত্র তিন দিন। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় গত ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে আগামী ২৫ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত চাঁদপুরের মেঘনা-পদ্মাসহ সারা দেশে বিশেষ অভিযান চলছে। এ সময়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত নিষিদ্ধ।

নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে দিনে তৎপর থাকে প্রশাসন। রাতে অরক্ষিত হয়ে পড়ে পদ্মা ও মেঘনা নদী। রাত জেগে মাছ ধরেন জেলেরা। দল বেঁধে নেমে পড়ে ইলিশ শিকারে। সারারাত ইলিশ শিকার করে ভোরের দিকে নদীর পাড়ে অস্থায়ী হাট বসায়। আশপাশের ক্রেতারা এসে ইলিশ কিনে নিয়ে যায়। এমন চিত্র মতলব উত্তর, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার নদীতীর জুড়ে।

এই তিন উপজেলা ঘেঁষা মেঘনা ও পদ্মা নদী থেকে মা ইলিশ ধরে অস্থায়ী হাটে বিক্রি করছে জেলেরা। দিনের বেলায় প্রশাসনের অভিযান ও তৎপরতা থাকলেও রাতে অরক্ষিত হয়ে উঠে নদী। নিরাপত্তার কারণে রাতে অভিযান চালাতে পারে না স্থানীয় প্রশাসন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই মা ইলিশ ধরার উৎসবে মেতে উঠে জেলেরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা সদরের টিলাবাড়ি, কোড়ালিয়া চর, আনন্দবাজার, বিষ্ণুপুরের লালপুর থেকে শুরু করে শহরের পুরাণবাজার হরিসভা, রানাগোয়াল, বাবুর্চিঘাট, রাজরাজেশ্বর, ইব্রাহিমপুর চর এলাকা, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দোকানঘর, সাখুয়া, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুর নন্দেশখার খাল, হরিনা ফেরিঘাট এলাকার গাজীকান্দি, রাঢ়ীকান্দি, গোবিন্দিয়া, আখনেরহাট সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরা কিছুতেই থামছে না।

প্রতিদিন মা ইলিশ ধরছেন ও বিক্রি করছেন জেলেরা। মেঘনা তীরের অস্থায়ী হাটগুলোতে প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা। উল্লেখিত গ্রামগুলোসহ রাজরাজেশ্বর ঘেঁষা মেঘনা-পদ্মা নদীতে মা ইলিশ শিকারে এখন সক্রিয় অন্তত কয়েক শ' জেলে। রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে অনেকে জেলেদের নদীতে নামাচ্ছে এবং ইলিশ বিক্রির আড়তদারি করারও অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।

মা ইলিশ রক্ষা অভিযান শুরুর সপ্তাহখানেক মাছ ধরা থেকে বিরত ছিলো জেলেরা। প্রশাসনের তৎপরতা ও অভিযানের গতিবিধি লক্ষ্য রেখে এরপরই নদীতে নেমে পড়ে এলাকাভিত্তিক লোভী জেলেরা। চাঁদপুর শহর এলাকার পুরাণবাজার পশ্চিম শ্রীরামদী থেকে ইলিশ কিনে লোকজনকে ফিরতে দেখা গেছে।

চলমান অভিযানের মধ্যে পুরাণবাজার খাল রোডের কাঁচাবাজারে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রকাশ্যে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদীর তীরে ইলিশ বিক্রির হাট বসানো হচ্ছে। রাত ৩টার পর থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মা ইলিশ নিধন ও বিক্রির এক রমরমা অবস্থা থাকে।

জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, মা ইলিশ রক্ষায় ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এরপর থেকে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের অভিযান চলমান রয়েছে। পাশাপাশি নৌবাহিনীর টহলও আছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ মাছ ধরার প্রবণতা বাড়ায় এ বছর মা ইলিশ রক্ষার অভিযান কতোটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

চাঁদপুরে দিনের বেলায় যতোটা কড়াকড়ি, ভোর রাতে মেঘনার তীরে সেরকম নেই বলে জানা যায়।

অভিজ্ঞ কয়েকজন জেলে জানান, ইলিশের উৎপাদন কমছে, কারণ অবৈধ মাছ শিকার থেমে নেই। সেই সঙ্গে জাটকা নিধন বন্ধ করা জরুরি, কারণ ইলিশ বড়ো হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। অবৈধ জাল যা কারেন্ট জাল হিসেবে পরিচিত, সেটিও ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

বাংলাদেশে ইলিশ রক্ষায় বছরে তিনটি অভিযান হয়, তারপরও গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত ইলিশের উৎপাদন কমছে।

জেলেদের বক্তব্য হলো, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশের পাশাপাশি জাটকা মাছও রক্ষা করতে হবে। তাদের মতে, নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং জাটকা নিধন বন্ধে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ না করতে পারলে বাংলাদেশে ইলিশ বাড়ানো অসম্ভব।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ জানিয়েছেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫–এর আঠারোতম দিন অতিবাহিত করছি। আমরা এখন পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম চাঁদপুর জেলায় সফলভাবে পরিচালনা করছি।

বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে এ পর্যন্ত ৩৭৬টি অভিযান ও ৫০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে এবং ৫৬ মামলায় ৮১ জন জেলেকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়