বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২৫

নতুন সংকটে সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন

সিলেট প্রতিনিধি
নতুন সংকটে সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন

নতুন সংকটে আবারো জড়ালো সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন। বিদেশে ছুটিতে থাকা পরিচালককে করা হয়েছে অপসারণ। কার্যকরী পরিষদ বলছে, সর্বসম্মতিতে নেয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত।

কার্যকরী পরিষদ নিয়ে চলমান সংকট এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল। এরই মধ্যে নতুন আরেক সংকটের মুখোমুখি হৃদরোগের জন্যে বিশেষায়িত ও সুখ্যাতি অর্জনকারী সিলেটের এই চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানটি। দাবি করা হচ্ছে, ‘পথের কাঁটা’ সরাতে ভেতরের শক্তিশালী একটি মহল হাসপাতালের দীর্ঘদিনের পরিচালককে অপসারণ করতে চাইছে। এ জন্যে একটি অভিযোগ এনে বিদেশে থাকার সুযোগে পরিচালককে পদচ্যুতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদিও বিষয়টি চাউর হওয়ার পর হাসপাতালের ভেতরে শুরু হয়েছে তোলপাড়। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা 'অন্যায় আচরণে'র প্রতিবাদ জানিয়ে গত রোববার মানববন্ধনও করেছেন। হাসপাতালের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল পরিচালনার জন্যে কার্যকরী কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সংকটে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের 'স্বার্থের বাইরে' গিয়ে কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়া শুরুর পর এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছিলো সদস্যদের মধ্যে। নানান ইস্যুতে বিতর্ক পিছু নিয়েছিলো হাসপাতালের। এর মাঝেই কমিটি গঠন করা হয় গত ২৫ সেপ্টেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভায়। ‘অযোগ্য’ ব্যক্তিদের নিয়ে কার্যকরী কমিটি গঠন করার অভিযোগ এনে চরম হট্টগোল হয় সেই এজিএমে। বিষয়টি নিয়ে পরিষদের কর্তাদের মধ্যে বেশ বাকবিতণ্ডা হয় সে সময়। সংকট শুরু সেখান থেকে। সূত্রমতে, এর রেশ ধরেই একটি পক্ষ হাপসাতালের দীর্ঘদিনের পরিচালক কর্নেল (অব.) শাহ আবিদুর রহমানের প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়ে তাকে অপসারণের চেষ্টা শুরু করে। গত প্রায় নয় বছরের বেশি সময় ধরে তিনি সুনামের সাথে হাসপাতাল পরিচালনা করছিলেন। তবে নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ তৈরির পর তাকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার তৎপরতা শুরু করে ওই পক্ষ।

সূত্রের দাবি, তাকে ঘায়েল করতে সম্প্রতি তারা কয়েকজন কনসালটেন্ট, নার্স এবং কর্মচারী দিয়ে কর্নেল (অব.) শাহ আবিদুর রহমানের বিরুদ্ধে নারী ডাক্তার ও নার্সদের সাথে অসদাচরণের মৌখিক একটি অভিযোগ আনেন। অভিযোগটি আসে কার্যকরী পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ডা. মো. আমিনুর রহমান লস্কর এবং সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী সোয়েব আহমদ মতিনের কাছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, প্রকৃতপক্ষে তারাই কর্মচারী ও কনসালটেন্ট চিকিৎসকদের দিয়ে অভিযোগটি তুলতে বড়ো ভূমিকা রেখেছেন।

হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল (অব.) শাহ আবিদুর রহমান তার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে বর্তমানে মালয়েশিয়ায় সপরিবারে অবস্থান করছেন। গত ১৯ অক্টোবর রোববার টেলিফোন করে নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী সুয়েব মতিন তাকে অভিযোগের বিষয়টি অবহিত করে পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানান। এ সময় তার অপরাধ হিসেবে মহিলা ডাক্তার ও নার্সদের ডিউটিরত অবস্থায় সম্পূর্ণ মুখমণ্ডলে হিজাব না পরার মৌখিক নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ আসার ব্যাপারটি উল্লেখ করা হয়। এমনকি তারা অভিযোগে উল্লেখ করেন মহিলা ডাক্তার ও নার্সদের সাথে তিনি নানা সময় দুর্ব্যবহার করেছেন। এ জন্যে হাসপাতালের শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাকে পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা জানানো হয়।

সূত্র জানায়, ঘটনা শোনার পর সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে কার্যকরী কমিটির ৭-৮ জন বসে পরিচালককে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটি পরিকল্পিত। কেননা কর্নেল (অব.) শাহ আবিদুর রহমান সব সময়ই হাসপাতালের প্রতি আন্তরিক। সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসার পেছনে হাতেগোণা যে কয়জনের ভূমিকা অগ্রগণ্য, তিনি তাঁদের একজন। বিভিন্ন সময় স্টাফদের অনিয়ম দূর ও শৃঙ্খলা রক্ষায় খুব শক্ত ভূমিকা পালন করেন তিনি। কর্নেল (অব.) আবিদ দায়িত্ব নেয়ার পর হাসপাতালের উন্নতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। হাসপাতালের জন্যে সরকার থেকে প্রতি বছর নিয়মিত আড়াই কোটি টাকার বড়ো অংকের যে তহবিল আসে, তার পেছনে কর্নেল (অব.) শাহ আবিদুর রহমানের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। এছাড়াও নতুন ক্যাথল্যাবের জন্যে সরকার থেকে প্রায় দশ কোটি টাকা প্রাপ্তির পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে এমন বায়বীয় অভিযোগ ওঠা এবং তারই আলোকে তড়িঘড়ি করে তাঁকে পদ থেকে সরে যাওয়ার কথা বলায় বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফাউন্ডেশনের এক কর্ণধার এ প্রতিবেদকের কাছে এভাবে পরিচালককে অপসারণের চেষ্টার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, একটি মহল সুনামখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তারাই পথের কাঁটা ভেবে পরিচালককে সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

তবে কার্যকরী পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ডা. মো. আমিনুর রহমান লস্কর বলেন, আবিদুর রহমান ১০ বছর ধরে পরিচালক পদে রয়েছেন। অতীতে বারবার তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ সময় নানা অসঙ্গতি ও অভিযোগ উঠে। সাম্প্রতিক সময়েও কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তিনি বয়স্ক ও সম্মানিত ব্যক্তি, তাই বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত বা কোনো রকম ঘাঁটাঘাঁটিতে যাইনি। তাকে জানিয়ে দিয়েছি যে, নতুন পরিষদ তাঁর মেয়াদ আর বাড়াতে চাইছে না। সবার সম্মতিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী সুয়েব মতিন এ বিষয়ে টেলিফোনে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়া থেকে টেলিফোনে কর্নেল (অব.) শাহ আবিদুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, তারা যদি আমাকে না চায়, আমি চলে যাবো। এখানে থাকলে আমাকে সম্মান নিয়ে থাকতে হবে। বায়বীয় অভিযোগ আনার তো দরকার নেই। এ প্রতিষ্ঠানের জন্যে আমি কী করেছি, তা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন। এটি বলার কিছু না, আমার দায়িত্ব। এখন সেই প্রতিষ্ঠান আমাকে যদি সম্মান দিতে না পারে, আমি তো সেখানে থাকবো না।

ডিসিকে /এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়