প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ২০:৫৮
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমএসআর টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ

মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমএসআর সরবরাহের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়মিত টেন্ডার আহ্বান ও মূল্যায়নে স্বচ্ছতা না রেখে গোপনভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমানো--এমন অভিযোগ অন্য ঠিকাদারদের। তারা বলেন, এ জন্যে উদ্ভট ও অপ্রয়োজনীয় কিছু শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছিলো বিজ্ঞপ্তিতে।
|আরো খবর
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস্ (পিপিআর) অনুযায়ী বিপুল অঙ্কের অর্থের টেন্ডারের জন্যে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অফিস ও সিভিল সার্জন অফিস থেকে অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যেটি এ টেন্ডারে মানা হয়নি।
এ অবস্থায় অবৈধভাবে সম্পন্ন করা টেন্ডারের মাধ্যমে মনোনীত ঠিকাদারের সাথে চুক্তি বাতিলপূর্বক দরপত্র পুনঃমূল্যায়ন অথবা রি-টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র কার্যক্রম স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করার দাবিতে সিভিল সার্জন বরাবর আবেদন জানিয়েছেন টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদার মেসার্স ফারুক ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর মো. ফারুক ভূঁইয়া।
অভিযোগ রয়েছে, যারা নিয়ম মেনে কাজ করতে চান, তাদের টেন্ডার ফাইল নানা অজুহাতে বাতিল করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। অথচ নিজের পছন্দের ঠিকাদারের জন্যে আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়। পিপিআর অনুযায়ী ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত টেন্ডার অনুমোদন করা হয় সিভিল সার্জন অফিস থেকে এবং ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকার টেন্ডার অনুমোদন করা হয় বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অফিস থেকে। সেক্ষেত্রে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উল্লেখিত দুটি প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিষ্ঠান থেকেও অনুমোদন নেননি।
এদিকে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের ই-জিপিতে আহ্বানকৃত এমএসআর দরপত্র ইভ্যালুয়েশন প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা ও চুক্তি সম্পাদনে অনিয়ম নিয়ে জেলা সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করেছেন মেসার্স ফারুক ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর মো. ফারুক ভূঁইয়া।
তিনি অনিয়মের অভিযোগপত্রে বলেন, “মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের জন্যে এমএসআর সামগ্রী সরবরাহের দরপত্র ইজিপির মাধ্যমে আহ্বান করা হলে দরপত্রে অংশগ্রহণ করি। আমি দরপত্রের টিডিএস-এ উল্লেখিত সকল শর্ত মেনে দরপত্র দাখিল করি। কিন্তু একটি শর্ত দেয়া হয় যে, দরদাতার আইএসও সার্টিফিকেট থাকতে হবে। কিন্তু এটি উৎপাদনকারীর হয়ে থাকে। আবার সমস্ত উৎপাদনকারীরও এটি হয় না (যেমন অপসোনিন, এসকেএফ ইত্যাদি)। ঔষধ কোম্পানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনকৃত যে সার্টিফিকেটটি লাগে তা হলো জিএমপি। এই অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো ঔষধ বাজারজাত করা সম্ভব নয়। এছাড়া লিনেন, ফার্নিচারের ক্ষেত্রে আইএসও সার্টিফিকেটের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই, কারণ এই সকল সামগ্রী স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়। এক্ষেত্রে উৎপাদনকারীর কখনোই আমাকে আইএসও সার্টিফিকেট প্রদান করা সম্ভব নয়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারি, দরদাতার সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, যদিও আমি সর্বনিম্ন দর দাখিল করেছিলাম। কিন্তু মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আমার প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফারুক ট্রেডার্সকে নন-রেসপন্সিভ ঘোষণা করে উচ্চ দর দাখিলকারী প্রতিষ্ঠানকে রেসপন্সিভ ঘোষণা করে মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়েছে এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান।
পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষার জন্যে উক্ত প্রতিষ্ঠান আমার কাছে নমুনা অথবা ছবি চেয়ে থাকতে পারে, যা পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৪৯ (উ) তে উল্লেখ আছে। এছাড়া পিপিআর অনুযায়ী ০–৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুমোদন করা হয় সিভিল সার্জন অফিস থেকে এবং ৩০–৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুমোদন করা হয় বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অফিস থেকে। সেক্ষেত্রে মতলব (উত্তর) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চাঁদপুর উল্লেখিত দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেই অনুমোদন নেয়নি।
বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পুরো দরপত্র কার্যক্রমটি পিপিএ ২০০৬ ও পিপিআর ২০০৮ নির্দেশনার পরিপন্থী। দরপত্র মূল্যায়নে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, যা পিপিআর ২০০৮-এর বিধি ৫৬ এর ৩, ৪ ও ৫ নং ধারার পরিপন্থী। এছাড়া পিপিএ ২০০৬ এর বিধি ৬৪ (২) ধারারও লঙ্ঘন হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং অবৈধ সুবিধা গ্রহণের উদ্দেশ্যে তুলনামূলক বেশি দর উদ্ধৃতিকারীর সাথে চুক্তি সম্পাদনের প্রক্রিয়া চলছে। এর ফলে আমি দরদাতা হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়ছে। যার কারণে রাষ্ট্র ও দেশের জনগণ উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমি আবেদন করছি চুক্তি বাতিলপূর্বক দরপত্র পুনঃমূল্যায়ন করা অথবা রি-টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র কার্যক্রম স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা হোক।”
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমানকে মুঠোফোনে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান,
এমএসআর টেন্ডার প্রক্রিয়াটি ৭০ লাখ টাকার ছিলো। প্রথমবার যে টেন্ডারটি দেওয়া হয়েছিলো, সেটিতে প্রক্রিয়াগত ভুল ছিলো। যার কারণে আগের টেন্ডারটি বাতিল করে নতুন করে রি-টেন্ডার হচ্ছে। মূলত আগের টেন্ডারটি শেষ করার মাঝামাঝি সময়ে এসে দেখি আমাদের প্রক্রিয়াগত ভুল আছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আপত্তি আসতে পারে বলে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর সেটি বাদ দেওয়া হয়। আমরা কাগজপত্র প্রস্তুত করছি।আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে রি-টেন্ডারটি দেওয়া হবে।
তবে আগের দরপত্রে এক নম্বর ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে ৯ নম্বর ব্যক্তিকে মনোনীত করার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।এদিকে, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নুর আলম দীনের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। যার কারণে এমএসআর টেন্ডার প্রক্রিয়ার বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।