সোমবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:০৬

যে কারণে কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না

ডা. কাকলী হালদার
যে কারণে কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না

১৮-২৪ নভেম্বর ছিলো বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) সচেতনতা সপ্তাহ। এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘অ্যাক্ট নাউ : প্রোটেক্ট আওয়ার প্রেজেন্ট, সিকিউর আওয়ার ফিউচার’ বা ‘এখনই পদক্ষেপ নিন : বর্তমানকে রক্ষা করুন, সুরক্ষিত করুন ভবিষ্যৎ’।

অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স কী

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালস রেজিস্ট্যান্স বা এএমআর এক নীরব মহামারি, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতিকে হার মানাচ্ছে। এতে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চিকিৎসাশাস্ত্র উভয়ই হুমকির মুখে পড়ছে মারাত্মকভাবে।

অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্সের মানে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ও পরজীবীগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসকারী ওষুধে প্রতিরোধী হয়ে ওঠা। ফলে একসময় যেসব সংক্রমণ সহজেই সারানো যেত, সেসবই আবার প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।

মূল কারণ কী

এ সমস্যার মূলে বিশেষ করে আছে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গালের যথেচ্ছ ব্যবহার, যা অণুজীবদের বিবর্তনে সাহায্য করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল ড. টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাসও বলেছেন, ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী পরিবারগুলোর স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে।’

একটি সাধারণ সংক্রমণ যখন চিকিৎসার অসাধ্য হয়ে ওঠে, তখন অস্ত্রোপচার, ক্যানসার থেরাপি বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসাগুলোও খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

করণীয়

এ মুহূর্তে ‘অ্যাক্ট নাউ’ বা এখনই পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবে কেবল বিজ্ঞানী বা চিকিৎসকদের ওপর নির্ভর করা নয়, বরং এ লড়াইয়ে আমাদের প্রত্যেকের ভূমিকা রয়েছে।

১. সচেতন ব্যবহার: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বা কোর্স অসম্পূর্ণ রাখা যাবে না। মনে রাখতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিক কেবল ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের ক্ষেত্রেই কার্যকর। ভাইরাসজনিত রোগে অ্যান্টিবায়াটিক অকার্যকর।

২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: সংক্রমণ রোধের জন্য নিয়মিত হাত ধোয়া, নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ ও টিকা নেওয়া অপরিহার্য। এটি অণুজীবের বিস্তার রোধ করে এবং অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনীয়তা কমায়।

৩. নতুন উদ্ভাবনে বিনিয়োগ: সরকার ও সংস্থাগুলোর উচিত নতুন অ্যান্টিবায়োটিক ও রোগনির্ণয়ের উন্নত প্রযুক্তির গবেষণায় আরও বেশি বিনিয়োগ করা।

শেষ কথা

‘প্রোটেক্ট আওয়ার প্রেজেন্ট’ মানে হলো আমাদের বর্তমান চিকিৎসাব্যবস্থা, যার ওপর আমরা নির্ভর করি, তাকে সচল ও সুরক্ষিত রাখা। আর ‘সিকিউর আওয়ার ফিউচার’ মানে হলো এমন একটি ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা, যেখানে আমাদের শিশুরা যেন সাধারণ সংক্রমণে মারা না যায়।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যার জন্য প্রয়োজন একীভূত ও বহুক্ষেত্রীয় পদক্ষেপ। এখনই সম্মিলিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে আমরা এই নীরব হুমকি মোকাবিলা করতে পারি এবং মানবতার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারি। সূত্র : প্রথম আলো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়