বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

সুন্দরবনে দুই রাত

আহমেদ রিয়াজ
সুন্দরবনে দুই রাত

যাব সুন্দরবন। অনেকের তুমুল আপত্তি। এই গরমে! যাব তো ঘুরতে, তাও আবার সুন্দরবন। গরমকে থোড়াই কেয়ার। পাত্তা না দিলেই হলো। গরমটা আর মাথায় চড়ে বসতে পারবে না। তাই ঈদুল ফিতরের ঠিক এক দিন পর সকাল সাড়ে ৭টায় মোংলাগামী বাসে আমরা চড়ে বসলাম। আমরা সাতজন। যাত্রার ঠিক আগে পরিচিত হলাম নুরুল ইসলাম খানের সঙ্গে। পরিবার নিয়ে তিনিও চলছেন সুন্দরবন। একই বাসে এবং একই রিসোর্টে।

পদ্মা সেতু হওয়ার পর এই প্রথম ওই পথে আমাদের যাত্রা। অসাধারণ সড়কের কারণে যাত্রাপথ ছিল ভীষণ আরামদায়ক। নন-এসি বাসের খোলা জানালা দিয়ে ভারী বাতাস এসে আমাদে র রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছিল। দুপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা মোংলা পৌঁছে গেলাম দুপুরের শুরুতেই। ওখানে রিসোর্টের বোট আমাদের অপেক্ষা করছিল। তারপর চড়ে বসলাম বোটে। মাথার ওপর সূর্য তখন খাড়া হয়ে আলো ও উত্তাপ দুটোই বিলিয়ে যাচ্ছিল অকাতরে। কিন্তু গরমে আমরা কাতর হতে গিয়েও হইনি। নদীর হাওয়া। পশুর নদী পাড়ি দিয়ে কিছুটা দক্ষিণে এগিয়ে ইউটার্ন নিয়ে বোট ঢুকল ঢাংমারীতে।

ঢাংমারী কি নদী? এলাকার মানুষজন নদী বলেই ডাকে। যদিও কাগজে-কলমে ওটাকে খাল হিসেবেই অভিহিত করা হয়েছে। ঢাংমারী দিয়ে এগোতে লাগলাম পশ্চিমে। বেশ কিছু বাঁকও পেরোলাম। আমাদের বামে তখন সুন্দরবন। আর ডানে ঢাংমারী গ্রাম। কিন্তু সবার দৃষ্টি বামে। কঠিন দৃষ্টি। যদি কোনো বাঘ চোখে পড়ে! কিন্তু কোথায় বাঘ! এত সহজেই যদি বাঘের দেখা মিলত তবে সুন্দরবন ভ্রমণ এতটা রোমাঞ্চকর লাগত না। তবে ডলফিন চোখে পড়েছে। নদীতে নয়, ঢাংমারী যেখানে পশুর নদীর সঙ্গে মিলেছে, সেখানে। আর কুমিরের দেখা মিলেছে ঢাংমারীতেই। জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ দেখার জন্যই তো সুন্দরবনে আসা। ফিফটি পার্সেন্ট দেখা মিলেছে, মানে কুমিরের দেখা মিলেছে, এখন বাকি ফিফটি পার্সেন্ট...

প্রায় ঘণ্টা দু-এক পর রিসোর্টের জেটিতে বোট ভিড়ল। পিয়ালী ইকো রিসোর্ট ও কালচারাল সেন্টার। রিসোর্টের ওপারেই মূল সুন্দরবন। মাঝে ঢাংমারী। মোংলা থেকে রিসোর্টকর্তা কামাল খান আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। আসার পথেই দুপুরের খাবারের মেন্যুও জানিয়েছিলেন- পারশে মাছ, সবজি, চিংড়ি দিয়ে মিষ্টিকুমড়ার ঝোল, ঘন ডাল, ঢ্যাঁড়শ ভাজি। একসময় নাকি সুন্দরবনে হাতি ছিল। কিন্তু অনেক বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দীর্ঘ যাত্রা ও নদীর বাতাসে সেই হাতি এসে আমাদের পেটের ভেতর নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে তখন।

পিয়ালীর জেটি দিয়ে অভ্যর্থনা ঘরে ঢোকার সময় ফুল, শরবত আর চৈত্র সংক্রান্তির ভাত দিয়ে স্বাগত জানানো হলো। হাতির নাচন অনেকটাই কমে এল। এরপর যার যার ঘরের চাবি দেওয়া হলো। কাঠ আর গোলপাতা দিয়ে বানানো ঘরে ঢুকে প্রাণ জুড়িয়ে গেল।

হাত-মুখ ধুয়ে খাবার ঘরে এলাম। খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে চলে গেলাম পাঁচ কিলোমিটার দূরে, যেখানে চৈত্রসংক্রান্তি মেলা হচ্ছিল। গ্রামীণমেলা। যদিও গ্রামের সেই ঐতিহ্যের ছোঁয়া মেলায় দেখা গেল না। তবু মেলা তো! অনেক মানুষ! একসময় নাকি এই গ্রামগুলোতেও বাঘের উৎপাত ছিল। তবে এখন আর নেই। বিদ্যুতের কারণে গ্রামগুলোও এখন ঝলমলে হয়ে উঠেছে। কাঁচামাটির সড়কে চলছে বাংলার টেসলা- বৈদ্যুতিক অটোরিকশা। সুন্দরবনে সে রাতের অনুভূতি ছিল অন্যরকম।

পরদিন সুন্দরবনের ভেতরে ঢুকলাম আমরা। এ জন্য বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়েছিল। অনুমতি নেওয়ার কাজটা রিসোর্টই করে দিয়েছে। এজন্য জনপ্রতি নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়েছে।

বিকেল পেরিয়েছে অনেকক্ষণ আগেই। একটু দেরিতে বেরোনোর কারণ গরম। বৈঠাচালিত নৌকায় করে আমরা ঢুকলাম সুন্দরবনের ভেতরে। ঢুকতে ঢুকতে দেখতে লাগলাম নানান গাছপালা। বেশির ভাগ গাছপালা তখন ফুলে ফুলে সুরভিত। বসন্তের শেষেই নাকি সুন্দরবনে ফুলের সমারোহ বেশি দেখা যায়। আর এ কারণে এটাই হচ্ছে সুন্দরবনে মধু আহরণের মৌসুম। কেওড়া ফুলের কলি হয়েছে শুধু, তখনো ফুল ফোটেনি। তবে ছৈলা, খলিশা, কাঁকড়া ও সুন্দরীদের ফুলগুলো ফুটে আছে। ফুলের ওপর মৌমাছি, প্রজাপতি- একের পর এক ছবি তুলতে লাগলেন কামাল খান। আর খাল দিয়ে গহীনে অনেকটা পথ যাওয়ার পর হঠাৎ...

বোঁটকা একটা গন্ধ এসে আমাদের সবার নাকেই ঝাপটা মারল। মুহূর্তে পুরো শরীর সচকিত হয়ে ওঠল। এ কীসের গন্ধ? আমাদের কৌতূহলী মন জবাব খুঁজে বেড়াচ্ছে। বাঘেরা নাকি সন্ধ্যার সময় শিকারের খোঁজে বেরোয়। তখন তো ঠিক সেরকমই সন্ধ্যা ছিল। তবে কি আমাদের আশপাশে কোথাও আছে? আমাদের লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে?

আরও গহীনে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু কে জানে, তখনই কেন আমাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল একটা গরান গাছ। যদিও তখনই সন্ধ্যা হয় হয়। আমরা ফিরতি পথ ধরলাম।

ততক্ষণে জোয়ার শেষ হয়ে ভাটা শুরু হয়ে গেছে। ঢাংমারীর দুপাশে জেগে উঠেছে গাংপালংয়ের মাথা। আঁখি আপা (আঁখি সিদ্দিকা, লেখক) গাংপালং তোলার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন। পরদিন দুপুরের খাবারে ছিল এই গাংপালং শাক। অসাধারণ স্বাদ। ফেরার সময় কামাল খান বেশ কিছু শাক দিয়েছিলেন আমাদের। আর মধুর মৌসুমে সুন্দরবন থেকে মধুছাড়া ফিরব? হতেই পারে না। ওপাশের গ্রাম থেকে পাকা তেঁতুলও এনেছিলাম আমরা। আর সঙ্গে এনেছি চমৎকার এক ভ্রমণস্মৃতি। বর্ষায় নাকি সুন্দরবন অপূর্ব সন্দর!

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়