রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

জরায়ুর ক্যানসার থেকে সতর্ক থাকুন

হাকীম মোঃ মিজানুর রহমান
জরায়ুর ক্যানসার থেকে সতর্ক থাকুন

নারীদের মাতৃত্বের অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ জরায়ু। নারীর এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জরায়ুতে সৃষ্ট টিউমারের অপর নাম হলো ইউটেরিন ফাইব্রয়েড। সংক্ষেপে ফাইব্রয়েড বলা হয়। ফাইব্রয়েড একটি অতি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা সাধারণত যার কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না।

৩০ বছরের ঊর্ধ্বে নারীদের মধ্যে ২০ শতাংশই এই সমস্যায় আক্রান্ত। ফাইব্রয়েড এক ধরনের নিরীহ টিউমার, এটি ক্যানসার বা বিপজ্জনক কিছু নয়।

বেশিরভাগ নারী এ সমস্যায় ভোগেন ও তাদের গর্ভধারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সমস্যা নিয়ে আল্ট্রাসাউন্ড করতে গেলে এ সমস্যা ধরা পড়ে।

জরায়ুর টিউমার সাধারণত তিন ধরনের হয় থাকে। সাব সেরাস, ইন্ট্রা মুরাল এবং সাব মিউকাস। এর মধ্যে সাব মিউকাস টিউমারই অধিক জটিলতার কারণ হয়ে থাকে। গর্ভধারণের আগেই যদি এই টিউমার ধরা পড়ে, তবে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জরায়ু মসৃণ পেশি কোষ দিয়ে তৈরি আর এই মসৃণ কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণেই জরায়ুতে টিউমার বা ফাইব্রয়েড তৈরি হয়। ডিম্বাশয়ে উৎপন্ন সংবেদনশীল হরমোন ইস্ট্রোজেনের জন্য ফাইব্রয়েড হয়ে থাকে।

শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে টিউমারের আকার বৃদ্ধি পায় (যেমন- গর্ভকালীন সময়ে ইস্ট্রোজেন বৃদ্ধি)। দেহে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে গেলে টিউমারের আকার সংকুচিত বা ছোট হয় (যেমন- মনোপোজের পর ইস্ট্রোজেন কমে যাওয়া)। হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপির জন্য মনোপোজের পর ফাইব্রয়েডের আকার সংকুচিত হওয়ার বিলম্বিত হতে পারে।

জরায়ু টিউমারের লক্ষণ

সাধারণত ফাইব্রয়েডের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য লক্ষণ নেই। তাই রোগী নিজে বুঝতেই পারেন না যে, তিনি ফাইব্রয়েড সমস্যায় ভুগছেন। গবেষণায় দেখা যায় প্রতি তিনজন আক্রান্তের মধ্যে এক জনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। নিম্নলিখিত এক বা একাধিক লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

ব্যথাযুক্ত ও অতিরিক্ত পরিমাণে রক্তস্রাব

টিউমারের কারণে মাসিক চক্রের কোন পরিবর্তন হয় না। কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে রক্তরণ হয়। কখনো কখনো অত্যধিক ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। যার ফলে রক্তের আয়রণের পরিমাণ কমে গিয়ে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।

মাসিক দীর্ঘস্থায়ী হওয়া

টিউমার বা ফাইব্রয়েডের জন্য দীর্ঘসময় ধরে মাসিক চালু থাকতে দেখা যায়।

তলপেট ফুলে যাওয়া

বড় আকারের টিউমারের ক্ষেত্রে তলপেটে অস্বস্তিসহ তলপেট ফুলে যেতে পারে। কোন কোন সময় ফাইব্রয়েডের জন্য কোমর ব্যথাও হতে পারে।

মুত্রথলী ও অন্ত্রে চাপ

কখনো কখনো ফাইব্রয়েড জরায়ুর সামনে অবস্থিত মুত্রথলীতে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে রোগীর ঘণ ঘণ প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়। আবার কখনো ফাইব্রয়েড জরায়ুর পশ্চাতে অবস্থিত অন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে রোগীর কুষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

সহবাসকালীন ব্যথা

ভ্যাজাইনা বা জরায়ু মুখে টিউমার হলে সহবাসের সময় অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে। এ জাতীয় সমস্যাকে ডিস্পেরনিয়া বলে।

গর্ভপাত বা বন্ধ্যাত্ব

জরায়ুর অভ্যন্তরীণ অংশে ফাইব্রয়েড সৃষ্টি হলে তা ফেলোপিয়ান টিউবকে বন্ধ করে দেয় যা গর্ভধারণকে অসম্ভব করে তোলে বন্ধ্যাত্বের সৃষ্টি করে। কখনো কখনো ফাইব্রয়েডের কারণে গর্ভপাত হতে দেখা যায়।

জরায়ুতে টিউমার থাকাবস্থায় গর্ভধারণ

জরায়ুতে টিউমার থাকাবস্থায় গর্ভধারণ করতে পারেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই টিউমারে মা ও শিশুর বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করতে পারে। চলুন জেনে নেয়া যাক সেগুলো-

সাব মিউকাস হলে জটিলতা হতে পারে। কারণ সাব মিউকাস টিউমার জরায়ুর ভেতরে অবস্থিত হওয়ায় ভ্রূণ ও প্লাসেন্টার স্থাপনকে বাধাগ্রস্ত করে।

গর্ভধারণের কারণে জটিলতা হতে পারে। জরায়ুতে এই টিউমার থাকলে জরায়ু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিউমারের আকার ও সাইজ পরিবর্তন হতে পারে। অনেক সময় টিউমারের মধ্যে রক্তক্ষরণ ও পানি জমে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।

শিশুর ওজন কমে যাওয়া, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (গর্ভফুল নিচের দিকে থাকা), সময়ের আগে ডেলিভারি হওয়ার জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ফাইব্রয়েডের কারণে নরমাল ডেলিভারির পথ বাধাগ্রস্ত হয় এবং সিজারের প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিকার

চিকিৎসামূলত অস্ত্রোপচার বা অপারেশনই হল ফাইব্রয়েড টিউমারের প্রধান চিকিৎসা। ওষুধের মাধ্যমে এর কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। প্রচলিত অস্ত্রোপচার প্রধানত দুই ধরনের-১. জরায়ু কেটে ফেলে দেওয়া এবং ২. জরায়ুর দেয়াল থেকে ফাইব্রয়েড কেটে তুলে ফেলা।

বর্তমানে দুটি পদ্ধতিতে জরায়ুর টিউমারের অপারেশন করা হয়- ছিদ্র করে এবং পেট কেটে। প্রচলিত এই দুই ধরনের অস্ত্রোপচারেই বেশ রক্তপাত হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রচলিত অপারেশনের সময় জরায়ু কেটে ফেলা হয়।

তাছাড়া এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায় । তবে আশার কথা হল জরায়ু টিউমারের চিকিৎসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে লেজার সার্জারি। এই পদ্ধতিতে কাটা-ছেড়া ও রক্তপাতহীনভাবে লেজারের মাধ্যমে ল্যাপ্রোস্কোপ ও গজও গাইডেন্সে জরায়ু টিউমারের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়েছে।

অত্যাধুনিক এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজ বা লেজার আবলাশন নামে পরিচিত। উন্নত দেশের মতো কাটা-ছেঁড়া ছাড়া, রক্তপাতহীন ও ঝুঁকিমুক্তভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলার এই চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেও হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে জরায়ু অপসারণ বা কেটে না ফেলে নারীত্ব ও মাতৃত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে স্বল্প সময়ে টিউমার থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়