বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

টনসিল অপারেশন কখন করবেন

ডাঃ মোঃ তৌহিদুল ইসলাম খান
টনসিল অপারেশন কখন করবেন

টনসিল হলো একধরনের লিম্ফয়েড টিস্যু, যা আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অংশ। আমাদের মুখের ভেতরে চারটি গ্রুপে অবস্থান করে। এগুলো হলো-লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড। সাধারণ টনসিল বলতে প্যালাটাইন টনসিলকেই বুঝায়। এই টনসিলগুলোর কোনো একটির প্রদাহ হলেই তাকে বলে টনসিলাইটিস। অনেকেই টনসিলাইটিসের সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে শীতকালে এটি নিয়ে বেশ ভুগতে হয়। শিশুদের এটি অন্যতম ও সাধারণ একটি সমস্যা, যা বছরে বারবারও হতে পারে।

টনসিল বিষয়ে সাধারণ মানুষের ভিতর এক ধরনের ভীতি কাজ করে যেমন, এখান থেকে ভবিষ্যতে ক্যান্সার হবে। আসলে এই ধারণা সম্পূর্ণ অবাস্তব। গলায় টনসিলে ক্যান্সার নিয়ে অনেকেই খুব দুশ্চিন্তায় ভোগেন। টনসিলাইটিস থেকে বাতজ্বর হতে পারে কিন্তু সে সম্ভাবনাও খুব কম।

সাধারণত কম বয়সী শিশুরা ভাইরাসজনিত কারণে (যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা) টনসিলাইটিসে আক্রান্ত হয়। শীতের দিনে মৌসুমি ফ্লু হওয়ায় টনসিলাইটিসের প্রকোপ বাড়ে। এছাড়া ‘গ্রুপ এ বিটা-হেমলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস’ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ৪ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুর টনসিলাইটিস হতে পারে।

টনসিলাইটিস দুই ধরনের হয়

১। একিউট টনসিলাইটিস : হঠাৎ করে একদিন হতে পারে। ৫ থেকে ৭ দিন পর চলে যায়।

২। ক্রনিক টনসিলাইটিস : এটা ঘনঘন হয়। কিছুদিন পরপরই সংক্রমণ হবে, ব্যথা হবে।

কখনও কখনও টনসিলের চারিপাশে ফোঁড়া হতে পারে, যেটাকে বলা হয় চবৎরঃড়হংরষষধৎ অনংপবংং. এ ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ লোকাল এনেস্থিসিয়ার মাধ্যমে পুঁজ বের করে দিতে হয় এবং পরবর্তীতে এক থেকে দেড় মাস পর টনসিল অপারেশন করে ফেলে দিতে হয়।

রোগের লক্ষণ

১। তীব্র বা মাঝারি ধরনের গলাব্যথা

২। জ্বর, কাশি

৩। খাবার খেতে কষ্ট ও মুখ হাঁ করতে অসুবিধা হয়।

৪। কানেও ব্যথা হতে পারে।

৫। মুখ দিয়ে লালা বের হয় ও কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে যেতে পারে। মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে।

৬। স্বরভঙ্গ, গলায় ঘাসহ টনসিল স্ফীতি, ঢোঁক গিলতে কষ্ট হয়, গলা ফুলে যাওয়া।

কারণ

টনসিল ইনফেকশন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিছু ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।

প্রাথমিকভাবে ভাইরাস সংক্রমণের সাথে সাথে কিছু ব্যাকটেরিয়া পরবর্তীতে টনসিলের ইনফেকশন বাড়িয়ে তুলতে পারে। পুষ্টির অভাব বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, আইসক্রিম, ফ্রিজে রাখা শীতল পানি বেশি পান করা, মুখ ঠিকমত পরিষ্কার না রাখা, ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ টনসিলের ইনফেকশনের কারণ হতে পারে। স্যাঁতসেঁতে বাসস্থান, ঠাণ্ডা আবহাওয়া, শীতের প্রকোপ বেশি হলে, গরমে ঘাম বসে গেলে টনসিলের প্রদাহ বেড়ে যেতে পারে।

টনসিল ইনফেকশন কাদের বেশি হয়?

১। সাধারণত ছোট বাচ্চাদের (৪-১২ বছর) ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ বেশি হয়।

২। বেশি পরিমাণে ঠাণ্ডা খাবার (আইসক্রিম, ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি ইত্যাদি) ও তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে টনসিল ইনফেকশন হতে দেখা যায়।

৩। নাকের হাড় বাকা হয়ে বন্ধ থাকলে, এডিনয়েড বেড়ে গেলে মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেবার কারণে সহজেই ঘন ঘন টনসিল ইনফেকশন হতে পারে।

৪। নিয়মিত মুখ, দাঁত ও গলা পরিষ্কার না রাখলে।

৫। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে।

টনসিল ইনফেকশন হলে কী করবেন?

১। কুসুম কুসুম গরম পানি ও তরল খাবার খেতে হবে।

২। পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে যত দিন সুস্থ না হবে।

৩। মুখের হাইজিন (মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য) বা ওরাল হাইজিন ঠিক রাখতে হবে।

৪। বারবার কুলি বা মাউথওয়াশ করতে হবে।

৫। সাধারণ স্যালাইন বা লবণমিশ্রিত গরম পানি দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে।

৬। লেবু বা আদা চাও খেতে পারেন।

৭। গলায় ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না।

যেহেতু জ্বর ও গলায় তীব্র ব্যথা থাকে, সেক্ষেত্রে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ প্রাথমিকভাবে খাওয়া যেতে পারে এবং পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে।

নিয়মিত ওষুধ খেলে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও নিয়ম মেনে চললে রোগী সাধারণত ১-২ সপ্তাহের মধ্যে পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।

তবে অপর্যাপ্ত চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে দীর্ঘমেয়াদী ইনফেকশন বা ক্রনিক টনসিলাইটিস হতে পারে এবং কিছু অন্যান্য শারীরিক জটিলতা যেমন, কিডনি ও হার্টের বাল্বের সমস্যাও হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী টনসিলাইটিসের চিকিৎসা সাধারণত অস্ত্রোপচার বা অপারেশন। যদি বারবার টনসিলাইটিস হয় বা এর জন্য অন্য কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে টনসিল অপারেশন করে ফেলে দেয়াই ভালো।

কখন টনসিলের অপারেশন করতে হয়!

১। টনসিলাইটিস যদি বছরে ৫/৭ বার হয় এবং বিগত ২/৩ বছর ধরে হয় তাহলে টনসিল অপারেশন করা হয়

২। টনসিল (এডিনয়েড) বড় হয়ে শ্বাসনালি বন্ধ হয়ে নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হলে এবং এজন্য অনেক সময় কানে শুনতে সমস্যা হলে

৩। টনসিলে যদি ফোঁড়া বা পেরিটনসিলার এবসেস হয়।

৪। দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিকস্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন হলে

৬। স্টাইলয়েড প্রসেস অপারেশন এর সময়

৭। একদিকের টনসিল অস্বাভাবিক বড় হলে যদি ক্যানসার সন্দেহ হয়, তাহলেও হিসটোপ্যাথলজি করার জন্যও এই অপারেশন করা হয়।

কখন অপারেশন করা যাবে না

১। খুব কম বয়সে (৩ বছরের নিচে) অথবা অনেক বেশি বয়সে

২। অ্যাকিউট ইনফেকশন থাকলে টনসিলে অস্ত্রোপচার করা যাবে না।

৩। জ্বর -কাশি বা গলা ব্যথা থাকা অবস্থায় করা যাবে না।

৪। যদি কারও রক্তরোগ থাকে।

৫। এছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না এনে অপারেশন করা যাবে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়