প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস মশার আক্রমণে ডেঙ্গু ছড়ায়। সাধারণত ফুলের টব, ভাঙ্গা কলসী, হাঁড়ি, পাতিল, পরিত্যক্ত টায়ারে, এসির জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। ডেঙ্গু জ্বরে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। এ সময় প্রচণ্ড মাথাব্যথা, মাংশপেশীতে ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, হাড়সহ বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, কালচে রঙের পায়খানা, প্র¯্রাব, দাঁতের মাড়ি, নাক-মুখ দিয়ে রক্ত যেতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশে হামের মতো দানা দানা দাগ দেখা দিতে পারে। রক্তচাপ কমে যাওয়া, পালস্ রেট বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্টও হতে পারে। বেশি মারাত্মক হলে শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ, পেটে বা ফুসফুসে পানি জমতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরে একেবারে শুরু থেকেই চিকিৎসা নেয়া জরুরি। চিকিৎসা নিতে দেরি হলে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। এই মৌসুমে জ্বর হলে দেরি না করে প্রথম বা দ্বিতীয় দিনই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কেননা ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণ হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে দেরি করে আসা। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুর পরীক্ষা জ্বর আসার প্রথম দিন থেকেই করা যায় এবং ডেঙ্গু হয়েছে কি না তা প্রথম দিনই শনাক্ত করা যায়।
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত তিন থেকে ছয় দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। জ্বর ভালো হয়ে যাওয়ার ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টাকে বলা হয় সঙ্কটকাল। কারণ, ডেঙ্গু রোগজনিত বিভিন্ন জটিলতা এ সময়ে হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই জ্বর সেরে গেলে নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্কতা
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন খুবই জরুরি। ডেঙ্গু জীবাণুবাহী মশা বংশবিস্তার করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, যেমন ফুল গাছের টব, অব্যবহৃত প্লাস্টিকের ঢাকনা, ডাবের খোসা, পাত্রে জমা পানি, পোষা প্রাণির খাবারের পাত্র ইত্যাদি। তাই এসব স্থান নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে, এতে মশার আনাগোনা কমবে। মশা নিধনের জন্য স্প্রে, কয়েল, ব্যাট ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে লম্বা হাতাওয়ালা পোশাক, ফুল প্যান্ট, মোজা এবং জুতা পরিধান করতে হবে। নিয়মিত দিনে ও রাতে মশারির নিচে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। ডেঙ্গু জীবাণুবাহী মশা বংশবিস্তার করে জমানো পানিতে। তাই বাড়ির আশেপাশে কোথাও পানি জমতে দেয়া যাবে না। ঘর সবসময় আলো বাতাসপূর্ণ রাখতে হবে। মশা সাধারণত অন্ধকার এবং স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে দেখা যায়। ঘরে মশার প্রবেশ বন্ধ করতে ঘর সবসময় আলো বাতাসপূর্ণ রাখাটা জরুরি।
ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়
জ্বর কমানো জরুরি। দ্রুত শরীর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে এবং মাথায় পানি দিতে হবে। প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে। তবে ব্যথানাশক ওষুধ যেমন : ডাইক্লোফেনাক, এসপেরিন-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি, প্রোটিন-জাতীয় খাদ্য যেমন ডাল, গরুর মাংশ, ডিমের কুসুম খেতে হবে। চর্বি-জাতীয় খাবার, ভাজা-পোড়া খাওয়া যাবে না। বেশি সমস্যা হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
মনে রাখতে হবে, বাসায় থেকেও ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে, যাতে ডেঙ্গুজনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী সাধারণত পাঁচ থেকে দশদিনের মধ্যে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়; এমনকি কোনো চিকিৎসা না করালেও।
ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে গেলে করণীয়
ডেঙ্গু রোগে প্লাটিলেট কমে যাওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। এতে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর, শরীরে ডেঙ্গুর প্রভাব কমার সঙ্গে সঙ্গে প্লাটিলেটও আগের অবস্থায় ফিরে আসতে থাকে। একজন চিকিৎসক নিয়মিত রক্তের পরীক্ষায় প্লাটিলেটের পরিবর্তনের ধরনের ওপর ভিত্তি করে রোগীর চিকিৎসা-পদ্ধতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো কিছু করা যাবে না।
কখন হাসপাতালে যাবেন
* প্রচণ্ড পেটব্যথা, বমি।
* শ্বাসকষ্ট অথবা পেট ফুলে যাওয়া।
* আঘাত ছাড়াই অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ।
* জ্ঞানের মাত্রা কমে যাওয়া বা অস্বাভাবিক আচরণ করা।
* অত্যধিক দুর্বলতা।
* প্র¯্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।
এই লক্ষণগুলোর যে কোনো একটি দেখা দিলে দেরি না করে হাসপাতালে চলে যেতে হবে অথবা জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।