প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২২, ০০:০০
করোনা যেনো মানুষের পিছু ছাড়ছে না। অশরীরী এ শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে মানুষ না বিজয়ী হয়েছে, না পরাস্থ হয়েছে। এখনও সমরে টান টান অবস্থা। তৃতীয় ঢেউয়ে পৃথিবীকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে আবারও এসেছে চতুর্থ ঢেউ নিয়ে। বাংলাদেশের মানুষ যেই মুখে মাস্ক ফেলে দিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, অমনি করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে দেশজুড়ে আবারও সংক্রমণের হার দশের অধিক হয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে জনমনে। আট মার্চ দু হাজার কুড়ি সালে যখন বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারীর আঘাত আসে, তখন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, অন্তত দুহাজার চব্বিশের আগে করোনা নির্মূল হবে না। আমাদের করোনা নিয়েই জীবনযাপন করতে হবে। তাঁদের সেই কথা আজ সত্য হয়ে ফলছে। করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ নেয়ার পরও সংক্রমণ বন্ধ হয়ে যায়নি।
ওমিক্রন ক্রমশ মিউটেশনের মাধ্যমে একটার পর একটা সাব-ভ্যারিয়ান্ট তৈরি করে চলেছে। সাব-ভ্যারিয়ান্টগুলো অধিক অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও পূর্ববর্তী ভ্যারিয়ান্টগুলো হতে অপেক্ষাকৃত কম ভিরুলেন্স-সম্পন্ন। ফলে সাব-ভ্যারিয়ান্টের সংক্রমণে জ্বরের রোগী বেড়ে গেলেও মৃত্যু হার তেমন বাড়ার আশঙ্কা নেই। বিএ.৪ ও বিএ.৫ এই দুটো সাব-ভ্যারিয়ান্টের সংক্রমণে বাংলাদেশে এখন ইনফেক্শন রেট শতকরা দশের ওপরে। ঢাকা যদিও সংক্রমণের অধিকাংশকে ধারণ করছে, তবু ইতোমধ্যেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রত্যন্ত জেলায়। এই সংক্রমণে এবার র্যাশ দেখা দিচ্ছে, সাথে জ্বর, সারা গায়ে ব্যথা, সর্দি-কাশি, খেতে অরুচি, মাথা ভারী হওয়া, চোখের গোলক ব্যথা হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। এ রকম কারো লক্ষণ দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত। যারা বুস্টার ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা আক্রান্ত হলেও মারাত্মক পরিস্থিতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। যারা এখনও বুস্টার ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি তারা শীঘ্রই এ ভ্যাকসিনের আওতায় আসা আবশ্যক।
করোনার চতুর্থ ঢেউকে মোকাবেলায় মাস্ক পরিধানের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি আগের মতোই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, ভিড় এড়িয়ে চলা, হাঁচি-কাশি আড়ালে দেয়া জরুরি।
বর্তমান সময়ে জ্বর-সর্দি ও শরীর ব্যথা হলে প্যারাসিটামল, অ্যান্টিহিস্টামিন এবং মন্টিলিউকাস্ট সেবন করে নিজেকে নিরাপদ রাখা উচিত এবং অতিরক্তি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। পাশাপাশি আগের মতোই ভিটামিন ডি ও ভিটামিন সি-এর ওপর জোর দেয়া উচিৎ।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি
দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১ হাজার ৬৮০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময় করোনায় মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। আগের দিন করোনা শনাক্ত হয়েছিলো ১ হাজার ২৮০ জনের। আর করোনায় মৃত্যু হয়েছিলো তিনজনের। টানা ২০ দিন দেশে করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি। ২০ জুন করোনায় একজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর টানা চার দিন করোনায় একজন করে মৃত্যু হয়। মধ্যে একদিন কারও মৃত্যু হয়নি। সর্বশেষ দুই দিনে তিনজন ও দুইজনের প্রাণ গেলো এ ভাইরাসে। গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১০ হাজার ৭২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৬৬। আগের দিন এ হার ছিলো ১৫ দশমিক শূন্য ৭। এর আগে দেশে করোনা শনাক্তের হার ১০-এর ওপরে ছিল গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১০ দশমিক ২৪। এরপর শনাক্তের হার ধারাবাহিকভাবে কমেছিল।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় যে ১ হাজার ৬৮০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে ১ হাজার ৫৭২ জন ঢাকা বিভাগের। এর মধ্যে ১ হাজার ৫১৩ জনই মহানগরসহ ঢাকা জেলার। বাকি বিভাগগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে ৬৪, ময়মনসিংহ, রংপুর ও খুলনায় ৪ জন করে, সিলেটে ৬, বরিশালে ১২ ও রাজশাহীতে ১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে, তারা ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
সংক্রমণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৭৩ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৮৮ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ১৪০ জনের। (সূত্র : প্রথম আলো)।