প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২২, ০০:০০
কোরবানি শব্দটি আরবি। আভিধানিক দৃষ্টিকোন হতে এর অর্থ হলো নৈকট্য লাভের উপায় হিসাবে যে কোনো বস্তু ব্যবহার করা। অপর দিকে শরীয়তের পরিভাষায় কোরবানি বলা হয় ঐ নির্দিষ্ট জন্তুকে, যা একমাত্র আল্লাহপাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে একমাত্র মহান আল্লাহর নামে জবাই করা হয়।
কোরবানির ইতিকথা ও ঐতিহাসিক পটভূমি
আজ থেকে প্রায় সাত হাজার ছয়শ’ পঞ্চাশ বছর পূর্বে মানবগোষ্ঠীর আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)-এর সন্তান হাবিল ও কাবিলের মধ্যে তাদের বোন আকলিমাকে বিবাহ করা নিয়ে কলহ বিবাদ দেখা দিলে হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ পাকের নির্দেশক্রমে তাদেরকে এখলাছের সাথে কোরবানি করার আদেশ দেন এবং বলেন, তোমাদের মধ্যে যার কোরবানি গৃহীত হবে তার সাথেই আকলিমার বিবাহ হবে। হাবিল ভেড়া দুম্বা ইত্যাদি পালন করতো সেহেতু সে একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কোরবানির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে আসলো। অপরদিকে কাবিল কৃষি কাজ করতো বিধায় সে কিছু শষ্য ও গম ইত্যাদি কোরবানির জন্যে পেশ করলো। নিয়মানুযায়ী আল্লাহপাকের হুকুমে আকাশ হতে অগ্নিশিখা অবতরণ করে হাবিলের কোরবানিটি ভস্মিভূত করে দিল এবং কাবিলের কোরবানি যেমন ছিলো তেমন পড়ে রইলো। কাবিল হাবিলকে হত্যা করলো। এভাবেই সর্বপ্রথম কোরবানির প্রথা চালু হয়।
ইব্রাহীম (আঃ) কর্তৃক ইসমাঈল (আঃ)কে কোরবানির ঘটনা
পবিত্র কুরআনের সূরা ছফফাতে এসেছে, অতঃপর যখন হযরত ইসমাঈল (আঃ) তাঁর পিতার সাথে চলাফেরার (নয় বছর) বয়সে উপনীত হলেন তখন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তদীয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ)কে সম্বোধন করে বললেন, প্রিয় পুত্র আমার! “আমি তোমাকে কোরবানি করিবার জন্য স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়েছি। এ বিষয়ে তোমার অভিমত কী? পুত্র উত্তরে বললেন আব্বা! আপনি যাহা করিতে আদিষ্ট হয়েছেন শীঘ্র তা কাজে পরিণত করুন, ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত দেখিতে পাইবেন। অতঃপর যখন পিতা পুত্র উভয়েই আত্মসমর্পণ করলেন, আর পিতা পুত্রকে কোরবানি করিবার জন্য উপুৎ করে ধরাশায়ী করলেন। আমি তখন তাঁহাকে ডাক দিয়া বললো,াম, হে ইব্রাহীম! সত্যিই আপনি স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছেন। আমি এই ভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। বস্তুত ব্যাপারটি একটি প্রকাশ্য পরীক্ষা মাত্র। আর আমি এক মহান কোরবানির বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়া দিলাম। (সূরা ছফফাত : ১০২-১০৭)।
ইব্রাহীম (আঃ) স্বপ্নে দেখলেন তিনি তাঁর প্রিয় বস্তু কোরবানি করিতে আদিষ্ট হয়েছেন। এই স্বপ্ন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)কে উপর্যুপরি তিনবার অর্থাৎ ৮, ৯, ও ১০ জিলহজ তারিখে দেখানো হয়। (কুরতুবী)। এ-কথা স্বীকৃত সত্য যে, পয়গম্বরগণের স্বপ্ন ওহীই বটে। তাই এই স্বপ্নের অর্থ ছিলো এই যে, আল্লাহপাকের পক্ষ হতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর প্রতি একমাত্র পুত্রকে জবাই করার হুকুম হয়েছে। এই হুকুমটি সরাসরি কোনো ফেরেস্তার মাধ্যমেও নাজিল করা যেতো কিন্তু স্বপ্নে দেখানোর তাৎপর্য হলো হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর আনুগত্য পূর্ণমাত্রায় প্রকাশ পাওয়া। স্বপ্নের মাধ্যমে প্রদত্ত আদেশে মানব মনের পক্ষে ভিন্ন অর্থ করার যথেষ্ট অবকাশ ছিলো। কিন্তু হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ভিন্ন অর্থের পথ অবলম্বন করার পরিবর্তে আল্লাহপাকের আদেশের সামনে মাথা নত করে দেন। (তাফসীরে কবির)। আর সাথে সাথে কোরবানির প্রস্তুতি হিসেবে পুত্রকে সাথে নিয়ে সিরিয়া হতে মক্কা শরীফের ওই স্থানের দিকে আগমন করেন। যেখানে ১৩ বছর মতান্তরে ৮ বছর পূর্বে মা হাজেরাসহ প্রাণাধিক প্রিয় পুত্রকে রেখে গিয়াছিলেন। মক্কা শরীফে পৌঁছাইয়া হযরত ইব্রাহীম (আঃ) স্ত্রী হাজেরা (আঃ)কে বললেন, ইসমাঈলকে সাজিয়ে দাও এক স্থানে বেড়াতে যাবো (মতান্তরে দাওয়াতে যাবো) সাজিয়ে দিলেন মা হাজেরা (আঃ) কলিজার টুকরা ইসমাঈলকে। পিতা চলছেন গন্তব্যস্থানে পচ্চাদানুসরণ করে চলছেন পুত্র ইসমাঈল (আঃ)। পথিমধ্যে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পুত্রকে কুরআনপাকের ভাষায় বললেন, ইসমাঈল! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে তোমাকে কোরবানি করছি। অতএব, ভেবে দেখো তোমার অভিমত কী? কিন্তু খলিলুল্লাহরই পুত্র ভাবী পয়গম্বর তাই তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বললেন, পিতা, আপনাকে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা সম্পন্ন করে ফেলুন এবং সাথে সাথে পিতাকে আরো আশ্বাস দিলেন ইনশাআল্লাহ! আপনি আমাকে ধৈর্য ধারনকারীদের মধ্যে পাবেন। অপরদিকে মুসলমানের আজীবন শক্র ইসলামের চির দুশমন ইবলীস এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে তাদেরকে প্রতারিত করার কাজে লেগে গেল। তাফসীরের বিভিন্ন বর্ণনায় জানা যায়, শয়তান প্রথমে হযরত হাজেরা (আঃ)কে প্রতারিত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ায় হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর প্রতি ছুটলো। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, শয়তান হযরত ইব্রাহীম (আঃ)কে তিন বার প্রতারণা করার চেষ্টা করেছে। প্রথমে বন্ধুর বেশে জামরায়ে আকাবার নিকট তখন তিনি ‘আলাহু আকবার’ ধ্বনী দিয়ে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন মতান্তরে পিতা-পুত্র উভয়েই সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। অদ্যাবধি এই প্রশংসনীয় কাজের স্মৃতি হিসেবে মীনায় তিনবার কংকর নিক্ষেপের বিধান চালু আছে। যা শরীয়তে মোহাম্মদীতে ওয়াজিব। শয়তান সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে জামরায় উসতার নিকট বাধা প্রদান করে। কিন্তু ইব্রাহীম (আঃ) সেখানেও কংকর নিক্ষেপ করে তাকে বিতাড়িত করেন। হতাশ হলো শয়তান অবশেষে তৃতীয় বার জুমরায়ে উলার পথ বন্ধ করে দাঁড়ায়। সেখানেও ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করে চির অভিশপ্ত শয়তানকে বিতাড়িত করলেন। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর সাথে শয়তানের তর্ক হয় এবং হযরত ইসমাঈল (আঃ)কে এই মহান কাজ হতে বিরত রাখার জন্যে সর্বশেষ চেষ্টা প্রয়োগ করে বললো, হে ইসমাঈল! তুমি কী জান? তোমার পিতা তোমাকে কোথায় নিয়া যাচ্ছে। তদুত্তরে তিনি বললেন, বেড়াতে যাচ্ছি। তখন শয়তান বললো, তুমিতো কিছুই জানো না। তোমাকে তোমার পিতা হত্যা করার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। উত্তরে হযরত ইসমাঈল (আঃ) বললেন, পিতা কি কখনো পুত্রকে হত্যা করতে পারে? ইবলীস বললো, তাকে আল্লাহতায়ালা হুকুম দিয়েছেন। তোমাকে কোরবানি করার জন্য। তখন হযরত ইসমাঈল (আঃ) দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, এর চেয়ে উত্তম জীবন আর কী হতে পারে? যে জীবনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করেছেন। হে শয়তান! তোর উপর আল্লাহপাকের অভিসম্পাত অবতীর্ণ হোক তোর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এখানেই মরদুদ নিরাশ হয়ে চলিয়া গেলো।
অবশেষে পিতা-পুত্র উভয়েই আল্লাহর রহমতে শয়তানের ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে কোরবানির স্থানে মীনায় পৌঁছাতে সক্ষম হলেন। হযরত ইসমাঈল (আঃ) পিতাকে সম্মোধন করে বললেন, আব্বাজী আর দেরী নয় এখনই বিসমিল্লাহ বলে আমার গলায় ছুরি চালিয়ে দিন। তবে ইহধাম পরিত্যাগ করিবার পূর্ব মুহূর্তে আপনি আমার এই প্রার্থনাগুলি মঞ্জুর করে নিন।
(ক) পিতা আমাকে খুব শক্ত করে বেঁধে নিন। যাতে আমি ছটফট করতে না পারি। (খ) আপনার পরিধেয় বস্ত্র সামলিয়ে নিন। যাতে আমার রক্তের ছিটা তাতে না পড়ে। (গ) আপনার ছুরিটা ধার দিয়ে নিন এবং তা আমার গলায় দ্রুত চালাবেন যাতে আমার প্রাণ সহজে বের হয়ে যায়। কারণ মৃত্যুর যন্ত্রণা কঠিন। অন্য বর্ণনা মতে, হে পিতা! আপনি যখন বাড়ি তাশরীফ নিবেন তখন আমার জনম দুঃখিনী মাকে আমার রক্তমাখা জামাটা দিবেন। হয়তো এতে তিনি কিছুটা শান্ত¡না পাবেন। একমাত্র পুত্রের মুখে এসব কথা শুনে পিতার মানসিক অবস্থা কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু হযরত ইব্রাহীম (আঃ) দৃঢ়তার পাহাড় হয়ে জবাব দিলেন বৎস আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ পালন করার জন্যে তুমি আমাকে চমৎকার সহযোগিতা করেছো। অতঃপর তিনি পুত্রকে স্নেহের চুম্বন করলেন এবং অশ্রুপূর্ণ নেত্রে তাকে বাধিয়া নিলেন। কুরআনপাকের ভাষায় অতঃপর তারা উভয়েই নত হয়ে গেলেন (অর্থাৎ আত্মসমর্পণ করলেন) এবং তাকে উপুড় করে মাটিতে শোয়াইয়া দিলেন। এই ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত পাওয়া গেলেও ঐতিহাসিক বর্ণনায় এইভাবে শোয়ানোর কারণ বর্ণিত হয়েছে যে, শুরুতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাকে গোঁজা করে শোয়াইয়া ছিলেন কিন্তু বার বার ছুরি চালানো সত্ত্বেও গলা কাটছিল না। কেননা আল্লাহ পাক স্বীয় কুদরতে পিতলের একটি টুকরা মাঝখানে অন্তরায় করে দিয়েছিলেন। তখন পুত্র নিজেই আবদার করলেন পিতা আমাকে কাত করে শোয়াইয়া দিন। কারণ আমার মুখমণ্ডল দেখে আপনার পৈতৃক স্নেহ উথলিয়ে উঠে ফলে গলা সম্পূর্ণরূপে কাটা হয় না। তাছাড়া ছুরি দেখে আমিও ঘাবড়িয়ো যাই। সেই মতে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাকে এইভাবে শোয়াইয়া ছুরি চালাতে থাকেন। (মাযহারী)। [বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (রহঃ) মবছুত ও কাজীখান কিতাবদ্বয় থেকে হেদায়ার ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখ করেন, হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আল্লাহপাকের নির্দেশে বেহেস্ত হতে একটি দুম্বা নিয়া রওনা হলেন। তার সংশয় হচ্ছিলো পৃথিবীতে পদার্পণ করার পূর্বেই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) জবাই কাজ সম্পন্ন করে ফেলবেন। তাই হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আকাশ হতেই উচ্চঃস্বরে ধ্বনী দিতে থাকেন ‘আল্লাহু আকবার’ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তার আওয়াজ শুনে দেখলেন যে উপস্থিত কোরবানির বস্তু ইসমাঈল (আঃ)-এর পরিবর্তে তিনি একটি দুম্বা নিয়া আসছেন। তাই তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’। পিতার মুখে তাওহীদের অমূল্য বাণী শুনতে পেয়ে তিনিও বলে উঠলেন, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার-ওয়া লিল্লাহিল হামদ’। তাই এই তিন মহান ব্যক্তির আমল ও কালামগুলো দরবারে এলাহীতে এতো বেশি কবুল হলো যে, কিয়ামত পর্যন্ত উক্ত বাণী ঈদুল আজহায় সমস্ত মুসলিমের কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকবে। আল্লাহপাকের অসীম কুদরাতে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর পরিবর্তে কোরবানি হলো একটি বেহেস্তী দুম্বা। এভাবেই প্রচারিত হলো কোরবানির মহান বিস্ময়কর ইতিহাস। যা অনন্তকাল সুন্নাতে ইব্রাহীম হিসেবে বিশ্ব মানবতার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আমাদের কোরবানি
আমরা জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর স্মরণে কোরবানি করে থাকি। সে প্রসঙ্গে হাদীসপাকে এসেছে, অর্থাৎ হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত কতিপয় সাহাবী প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কোরবানি কী? তদুত্তরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহা তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সুন্নাত। যদিও পরে স্বতন্ত্রভাবে আমাদের উপর কোরবানির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবুও সেই নির্দেশ সুন্নাতে ইব্রাহীম (আঃ)-এর অনুসরণে দেয়া হয়েছে। তাই আমরা শরীয়তে মোহাম্মাদীর এই নির্দেশ সুন্নাতে ইব্রাহীম (আঃ)-এর স্মরণে পালন করে থাকি।
কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত
মিশকাত শরীফের ১২৯ পৃষ্ঠায় ইবনে মাজা ও আহমদ শরীফে হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কতিপয় সাহাবী প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই কোরবানি কী? তদুত্তরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সুন্নাত। পুনরায় সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের জন্যে কোরবানির মধ্যে কী রহিয়াছে? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, কোরবানির গরু এবং বকরীর প্রতি পশমে একটি নেকী মিলবে। তখন সাহাবায়ে কেরাম আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তা হলে দুম্বা এবং ভেড়ার প্রতি পশমের বিনিময়ে ছওয়াব মিলবে না? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, দুম্বা এবং ভেড়ারও প্রতি পশমের বিনিময়ে ছওয়াব মিলবে।
কোরবানির মহত্ম ও ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহপাক সূরা হজের ৩৭নং আয়াতে এরশাদ করেছেন, এগুলোর (কোরবানির গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না বরং কোরবানির ভেতর দিয়ে তোমাদের তাকওয়া-পরহেজগারী বা আল্লাহভীতিই আল্লাহর নিকট পৌঁছে। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ম ঘোষণা করো এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথপ্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎ কর্মশীলদের সুসংবাদ শোনাইয়া দাও। তিরমিযী ও ইবনে মাযাহ শরীফে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম সন্তান কোরবানির দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকেন। তন্মধ্যে আল্লাহ পাকের নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হলো কোরবানি করা। কাল কিয়ামতে কোরবানির পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে (যা কোরবানি দাতার পাল্লায় দেয়া হবে যাতে নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে) কোরবানির পশুর রক্ত জমিনে পড়ার পূর্বেই তা আল্লাহপাকের নিকট কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা এই পুরস্কারে আন্তরিকভাবে খুশি হও।
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ইসলাম ধর্মের একটি বড় নিদর্শন বরং উদ্দেশ্য আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর স্মৃতি রক্ষা করা এবং আল্লাহপাকের রেজামন্দি লাভ করা।
অন্য হাদীসে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, কোরবানির পশু পুলসিরাতের উপর তোমাদের বাহন হবে। তাই তোমরা মোটা তাজা (জানোয়ার) কোরবানি করো। (বাদায়ে ১ম খণ্ড ৮ পৃঃ)।
তাবরানী শরীফে হযরত ইমাম হাসান বিন আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে সন্তুষ্টচিত্তে খুশি হয়ে কোরবানি করবে এ কোরবানি তাকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্ত রাখবে। তাবরানী শরীফের অন্য এক হাদীসে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন কোরবানির উদ্দেশ্যে ওইদিনে যে অর্থ ব্যয় করা হয় এর তুলনায় অন্য কোনো ব্যয়ই উত্তম নয়। অন্য হাদীসে হযরত আয়েশা (রাঃ) হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, কর্জ করে কোরবানি করবো কি না? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, হ্যাঁ করো। আল্লাহ তায়ালা কর্জ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। (দারেকুতনী ৪-২৭৭ পৃঃ)।
অন্য এক বর্ণনায় একদা হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতেমা (রাঃ)কে ডেকে এরশাদ করেন, হে ফাতেমা! তুমি তোমার কোরবানির জন্তুর নিকটে যাও। কেননা কোরবানির জন্তু জবাই করার পর রক্তের প্রথম ফোঁটা মাটিতে পড়ার সাথে সাথে তোমার যাবতীয় গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। হযরত ফাতেমা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এইটা কি শুধু আমার জন্যে? রহমাতুল্লিল আলামীন জবাব দিলেন এটা আমাদের জন্যে ও সকল মুসলমানদের জন্যে। (তারগীব)।
একদিকে যেমন কোরবানিকারীর জন্যে বহু প্রতিদান ও খোশ খবরি রয়েছে। অপরদিকে সক্ষম ব্যক্তির পক্ষে কোরবানি না করা বা অবহেলা করার কুফলের কথাও বাদ দেয়া হয় নাই। যেমন ইবনে মাযাহ শরীফে বর্ণিত হয়েছে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যার কোরবানি করার ক্ষমতা আছে অথচ সে কোরবানি করছে না সে যেনো আমাদের ঈদগাহে না আসে।
কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত
হিজরি ২য় সনে ঈদুল আজহার নামাজ ও কোরবানি আমাদের জন্যে ওয়াজিব করা হয়েছে বলে জানা যায়। (তিরমিজী, মিশকাত শরীফ-২২৯পৃঃ)। নিম্নলিখিত শর্ত পাওয়া গেলেই আমাদের উপর কোরবানি করা ওয়াজিব।
(ক) কোরবানির দিন মালেকে নেছাব হওয়া। কাজেই গরিবের উপর কোরবানি ওয়াজিব নহে।
(খ) সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি হওয়া। কাজেই বিকৃত মস্তিস্ক তথা পাগলের উপর কোরবানি ওয়াজিব নহে।
(গ) স্বাধীন ব্যক্তি হওয়া। কাজেই দাস-দাসীর উপর কোরবানি ওয়াজিব নহে।
(ঘ) মুসলমান হওয়া। কাজেই অমুসলিমের উপরে কোরবানি ওয়াজিব নহে।
(ঙ) বালেগ হওয়া। কাজীখানের মতে নাবালেগের প্রতি কোরবানি ওয়াজিব নহে।
(চ) মুকিম হওয়া অর্থাৎ নিজ বাড়িতে অবস্থান করা। কাজেই মুসাফিরের উপর কোরবানি ওয়াজিব নহে।
খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও উপার্জনের উপকরণ ইত্যাদি) বাদ দিয়া যদি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সারে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য কিংবা এর মূল্য বা সমমূল্যের অন্য কোন মালের মালিক হয়। নেছাব পরিমাণ মাল জিলহজ মাসের ১০ ১১ ও ১২ এই তিন দিনের যেই কোন দিন মালিক হলো তার উপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। (শামী ১৯৮পৃঃ)
কোরবানি না করে সে পরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে
কোরবানি করা ওয়াজিব সে যদি কোরবানি না করে এর মূল্য কোরবানির দিনগুলোর মধ্যে সদকা করে দেয় তবে কোরবানির ওয়াজিব আদায় হবে না। তাকে অবশ্যই বিধি মোতাবেক কোরবানি করতে হবে। (বাহার)।
নিজের কোরবানি অন্যের নামে দিলে হবে কি?
যার প্রতি কোরবানি ওয়াজিব তাকে কোরবানি করতেই হবে। নিজের কোরবানি পরিবারের অন্য কারো নামে করলে আদায় হবে না। (হিন্দিয়া ৬-১৯৫০২)
আইয়্যামে তাশরীকের দিনগুলোতে কোরবানিদাতার করণীয়
৯ জিলহজের ফজর হতে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রতিটি মুকীম বালেগ পুরুষের জন্যে ফরজ নামাজ বাদ তাকবীর বলা ওয়াজিব। এটা শুধু কোরবানিদাতার করণীয় নয় বরং সকল মুসলমানের দায়িত্ব। মুসলিম শরীফ ও মিশকাতের ১২৭ পৃষ্ঠায় হযরত উম্মে সালমা হতে একখানা হাদীসে বলা হয়েছে যে, কোরবানিদাতা কোরবানি না করা পর্যন্ত যেন নখ, চুল, ও অন্যান্য ক্ষৌরকাজ না করে। সেই হিসাবে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন কোরবানি দাতার জন্য উক্ত কাজগুলো না করা মুস্তাহাব।
মৃত্যু ব্যক্তির নামে কোরবানি
যদি কোন ব্যক্তি আম্বিয়া (আঃ), আউলিয়া, পীর, ওস্তাদ, মাতা, পিতা বা যে কোনো মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে কোরবানি করে তা হলো এই কোরবানি শুদ্ধ হবে। কোরবানিদাতা ধনী হলো উল্লিখিত ক্ষেত্রে তার কোরবানির ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। (শামী ২ / ২৮ পৃঃ কাজী খান ৩ / ৪৮ পৃঃ)।
উল্লেখ্য, গরিব দুই ভাই বা কয়েক ভাই যদি মিলে একটি বকরী ক্রয় করে অতঃপর তারা কোন এক ভাইকে ঐ বকরীর মালিক বানিয়ে দেয় এবং মালিক মৃত পিতা বা মাতা বা অন্য কোন মৃত আত্মীয়ের পক্ষে ঐ কোরবানি করে তা হলো মালিক ও মৃত উভয়ই কোরবানির ছওয়াব পাবে এবং অন্যান্য ভাইরা সাধারণ সদকার ছওয়াব পাবে আর গোস্ত সকলেই খেতে পারবে।
কোরবানির পশুর বয়স
গরু, মহিষ, বলদ-গাভীর জন্য দুই বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি। উট ও উটনীর পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত। একদিন কম হলো কোরবানি জায়েজ হবে না। (রদ্দুল মুখতার ৫/২০৫পৃঃ)। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, নর-মাদীর জন্য এক বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত। তবে যদি ছয়মাস বয়সের ভেড়া ও দুম্বা মোটা-তাজায় এক বছর বয়সের ভেড়া ও দুম্বার সমতুল্য মনে হয় তা হলো তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ আছে। কিন্তু ছাগল যতই মোটা-তাজা হোক এক বছরের একদিন কম হলেও কোরবানি হবে না। (জাইয়ালী ৬/৭পৃঃ রদ্দুল মোখতার ৫/২০১পৃঃ)
কোরবানির পশুতে অংশীদারে কোরবানির বিধান
ছাগল, ভেড়া ও দুম্বাতে এক ব্যক্তির অধিক শরীক হয়ে কোরবানি করা জায়েজ নাই। গরু, মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে একের অধিক সর্বোচ্চ সাতজন শরীক হয়ে কোরবানি করতে পারবে। একজন সাত ভাগের একাধিক ভাগে শরীক হতে পারবে। কিন্তু সাত ভাগের এক অংশের কম হলো কারো কোরবানি হবে না। তবে গোস্ত ওজন করে সমানভাবে ভাগ করে নিতে হবে কোনরূপ অনুমান করে নিলে হবে না। তারপরেও কমণ্ডবেশির জন্য একে অপর হতে ক্ষমা চেয়ে দাবি ছাড়িয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
সাত ভাগের পশুতে মৃত পিতা-মাতা আত্মীয় বা যে কোন মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানি করা
সাত ভাগের পশুতে নবী, অলী, পীর, ওস্তাদ, পিতা, মাতা বা যে কোন মৃত ব্যক্তির নামে শরীক হয়ে কোরবানি করা যাবে। বরং কোরবানি দাতা ধনী হলো তার ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। (শামী-২/২৮পৃঃ কাজীখান ৪/৪৮)।
কোরবানির পশুর বাচ্চা হলে
কোরবানির পর যদি পেটে জীবিত বাচ্চা পাওয়া যায় তবে উক্ত বাচ্চাটি জবাই করে শরীকদারদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে নিতে হবে এবং এর মূল্য পরিমাণ, অর্থ সদকা করে দিতে হবে। আর যদি বাচ্চাটি রেখে দেয়া হয় তবে কোরবানির বয়স হয় তবেও তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না বরং এর মূল্য পরিমাণ অর্থ সদকা করতে হবে। (কাজীখান, আলমগীরী)।
ত্রুটিযুক্ত জন্তু দ্বারা কোরবানি
পাগল জন্তু যদি ঘাস পানি খায় মাঠে চরে তাহলে তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে। অন্যথায় কোরবানি জায়েজ হবে না। (শামী ৫/২৮০ পৃঃ)।
যে সব পশুর শিং জন্মগতভাবে নাই কিংবা মধ্যভাগে ভেঙ্গে গেছে তার দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে। তবে শিং যদি গোঁড়া হতে একেবারে ভেঙ্গে যায় তবে তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না। (শামী ৫/২৮০ পুঃ)।
চর্মরোগে আক্রান্ত পশু যদি শক্তিশালী ও মোটা-তাজা হয় তা হলো তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে। কিন্তু চর্ম রোগের কারণে যদি এমন দুর্বল হয়ে যায় যে, কোরবানির স্থানে পৌঁছাতে অক্ষম তা হলো তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না।। (শামী ৫/২৮০ পৃঃ)।
অন্ধ, কানা, অতি দুর্বল (যার হাড়ে মগজ নাই) ও পঙ্গু পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ নাই। তবে উক্ত পঙ্গু পশু যদি তিন পা দিয়া চলাচল করে এবং চতুর্থ পা দ্বারা কিছু কিছু টেক লাগিয়ে হাঁটতে পারে তবে তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে। (শামী ৫/২৮১ পৃঃ)।
যে পশুর জন্মগতভাবে একটা বা দুটা কান সম্পূর্ণ নাই বা অধিকাংশ (অর্থাৎ সম্পূর্ণ কানের এক তৃতীয়াংশের বেশি) কাটা থাকে অনুরূপ লেজেরও অধিকাংশ কাটা থাকে তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না। আর যদি এর চাইতে কম হয় তবে। কোরবানি জায়েজ হবে। অনুরূপ জন্মগত কান যদি খুব ছোটও হয় তবু কোরবানি জায়েজ হবে। (শামী ৫/২৮২ পৃঃ)।
খাসি করা পশু বা স্বভাবগত এক অ-কোষবিশিষ্ট। খাসি করা পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ এবং উত্তম। অনুরূপ স্বভাবগতভাবে এক অ-কোষবিশিষ্ট পশুও কোরবানি জায়েজ হবে। (শামী ৫/২৮২ পৃঃ ও ইমদাদুল ফতোয়া ৩/৪ ৭২পৃঃ)
অধিকাংশ দাঁতবিশিষ্ট পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ তবে দাঁত মোটেই নাই যার ফলে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না এই ধরনের প- দ্বারা কোরবানি জায়েজ নাই। তবে যদি দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়ার পরেও খাদ্য গ্রহণে কোনো রূপ অসুবিধা না হয় এবং সুস্থ থাকে তবে তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে। (শামী ৫/২৮৩ পৃঃ) সিরাজিয়া।
যে পশুর পুরুষাঙ্গ কাটা হওয়াতে সঙ্গমে অক্ষম এবং বৃদ্ধ হওয়াতে বাচ্চা জন্মাতে অক্ষম তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না।
যে পশুর স্তনের প্রথমাংশ কাটা বা রোগের কারণে দুধ শুকিয়ে গিয়েছে তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ নাই।
ছাগলের স্তন হতে দুই বোঁটার একটি ও গরু বা মহিষের স্তনের চারিটি বোঁটা হতে যদি দুইটি কেটে যায় তবে তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না। (শামী ৫/২৮৪ পৃঃ)।
খোঁজা যাকে প্রচলিত ভাষায় খোনছা বলে তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ কিন্তু সমলিঙ্গ ওয়ালা পশুর কোরবানি জায়েজ নাই। (শামী ৫/২৮৪ পৃঃ)।
যেই পশুর জিহ্বা নাই অথবা অধিকাংশ কাটা গিয়েছে তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ নাই।
ফতোয়ায় তাতারখানিয়ায় বলা হয়েছে জিহ্বা কাটা যাওয়ার কারণে পশুর যদি আহার করা বন্ধ হয়ে যায় তবে কোরবানি শুদ্ধ হবে না, আহার বন্ধ না হলো কোরবানি জায়েজ হবে।
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী বলেছেন, কাটা অংশ যদি এক তৃতীয়াংশ হতে বেশি হয় তা হলো শুদ্ধ হবে না। আর কাটা অংশ যদি এক তৃতীয়াংশ বা তার চেয়ে কম হয় তবে তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে। আর এটাই বিশুদ্ধমত। (আলমগীরী)।
লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।