প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষার সঙ্গে পাঠ্যপুস্তকের সংশ্লিষ্টতা কিংবা পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাস খুব প্রাচীন নয়। মূলত ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষে যখন পাশ্চাত্য শিক্ষার গোড়াপত্তন হয়, তখন থেকেই পাঠ্যপুস্তকের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর আগে শত শত বছর ধরে সনাতন যে ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে শিখন-শেখানো পদ্ধতির প্রচলন ছিল, তার সঙ্গে পাঠ্যপুস্তকের ব্যবহার ছিল না।
বঙ্গভূমিতে পাঠ্যপুস্তকের যুগ শুরু হয় ১৮১৭ সালে। তার আগে নবীন পড়ুয়াদের জন্য বাংলায় যেসব বই মুদ্রিত হয়েছে, সেগুলোকে পাঠ্যপুস্তক বলা যায় না। ১৮০০ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। মূলত ফিরিঙ্গি শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রীরামপুর থেকে ১৮১৭ সালে যেসব গ্রন্থ মুদ্রণ করা হয়, সেগুলোই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম পাঠ্যপুস্তকের উদাহরণ। মোটা দাগে বললে, এ বছর থেকেই যেমন বাংলাদেশে আধুনিক ইংরেজি শিক্ষার সূচনা হয়, তেমনি বাঙালি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ব্যাপক উদ্যোগও সূচিত হয় এই ১৮১৭ সাল থেকে।
একবিংশ শতকের প্রারম্ভে এসে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও সম্পাদনার নানা রকম মতবাদ ও পদ্ধতির উদ্ভব হয়। বিশেষ করে, এখন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হয়। ঊনবিংশ শতকে শিক্ষাক্রমের ধারণা ছিল না। শিক্ষার বিজ্ঞানভিত্তিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণের মতবাদ তখনো আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু এখন পৃথিবীর সর্বত্রই ওই দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে প্রথমে একটি শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়।
শিক্ষাক্রমে শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রান্তিক যোগ্যতা ও শিখনফল নির্ধারণ করা হয়। এর সঙ্গে থাকে শিখন-শেখানো কৌশল ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতি। আর এই শিক্ষাক্রমের আলোকেই প্রণীত হয় পাঠ্যপুস্তক। সুতরাং পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও সম্পাদনার সময় প্রথমে বিবেচনায় রাখতে হয় শিক্ষাক্রম। কেননা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্রম পড়ানো হয় না, পড়ানো হয় পাঠ্যপুস্তক। তার মানে, পাঠ্যপুস্তক হলো শিক্ষাক্রমের বাহন।
কোনো একটি নির্দিষ্ট যুগের দেশীয় ও বৈশ্বিক পটভূমিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কোন আদর্শে পৌঁছে দিতে হবে, তার অনুপুঙ্খ বিবরণ নির্ধারণ করা থাকে নির্দিষ্ট স্তরের শিক্ষাক্রমে। যেমন প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা আছে ওই স্তরের শিক্ষাক্রমে। শিক্ষাক্রমের ওই সব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পাঠ্যপুস্তকগুলোতে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হওয়া খুবই জরুরি। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ পাঠ বা টেক্সট নির্ধারণ করা আছে কি না, তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
এই পাঠ নির্ধারণের সময় শিখন-শেখানো কৌশল ও মূল্যায়ন পদ্ধতি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখা হয়। একসময় শিখন-শেখানো কৌশল ছিল শিক্ষককেন্দ্রিক। অর্থাৎ ক্লাসের পুরো সময় শিক্ষক থাকতেন সক্রিয়, আর শিক্ষার্থীরা থাকত নিষ্ক্রিয়। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকের কথা বিবেচনায় রেখে ‘পাঠ’ নির্ধারণ করা হতো। ফলে পাঠ্যপুস্তকগুলোতে প্রচুর পাঠ থাকত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওই সব পাঠের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হতো না। কেননা, পাঠের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক তৈরির জন্য বিচিত্র কাজ ও মূল্যায়নের সুযোগ তেমন থাকত না। ফলে এক ধরনের ক্লান্তিকর পাঠে পাঠ্যপুস্তক নিরানন্দময় হয়ে উঠত।
শিখন-শেখানো পদ্ধতির ক্ষেত্রে শিক্ষককেন্দ্রিক মতাদর্শের আমল শেষ হয়নি। কিন্তু শিক্ষাক্রম পরিমার্জিত হয়ে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিখন-শেখানো পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী পাঠ নির্ধারণ ও পাঠ পরিকল্পনায় বিপুল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শিক্ষাক্রমে উল্লিখিত যে পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করার কথা, লেখক ও সম্পাদকের সে পদ্ধতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হয়। যেমন প্রথম শ্রেণির শিশুদের বাংলা ভাষা শেখার জন্য যে পাঠ্যপুস্তকটি প্রণয়ন করা হয়েছে তা এখন আর বর্ণক্রমিক পদ্ধতিতে নয়। অর্থাৎ প্রথমে বর্ণ, তারপর শব্দ এবং পরিশেষে বাক্য-এই ধারাক্রমে ভাষা শেখানোর পুরোনো পদ্ধতি এখন আর নেই। এখন পাঠ্যপুস্তকটি বাক্যক্রমিক পদ্ধতিতে রচিত। কারণ, একজন শিশুর ভাষা শেখার যে প্রকৃতিগত পদ্ধতি, তা বর্ণক্রমিক নয়, বাক্যক্রমিক। অর্থাৎ বাক্য থেকে শব্দ এবং শব্দ থেকে বর্ণ-এই ধারাক্রম বজায় রেখে পাঠ্যপুস্তকটি রচিত হয়েছে। আবার প্রাথমিক স্তরের বিজ্ঞানের বইগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতিতে।
প্রতিটি পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো না কোনো দক্ষতা তৈরির জন্য। যেমন বাংলা ভাষাবিষয়ক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হয়েছে বাংলা ভাষা শেখার জন্য। অর্থাৎ শোনা, বলা, পড়া ও লেখা-ভাষা শেখার এই চারটি দক্ষতা আয়ত্ত করার জন্য। যিনি লেখক বা সম্পাদক, তাকে প্রতি মুহূর্তে মনে রাখতে হয় যে, পাঠ্যপুস্তকটি ভাষা শেখার জন্য-ধর্ম, বিজ্ঞান বা সমাজ শেখার জন্য নয়। ধর্ম, বিজ্ঞান বা সমাজ ‘পাঠসংশ্লিষ্ট’ জগৎ হতে পারে, কিন্তু ‘পাঠ’ হলো ভাষা। গণিত বা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এই বিভ্রান্তি তৈরি হয় না। গণিতের বইয়ের মধ্যে ধর্মসংক্রান্ত কোনো প্রবন্ধ থাকুক, সেটা কেউ প্রত্যাশা করেন না। এমনকি ধর্মবিষয়ক পাঠ্যপুস্তকটির ক্ষেত্রে ওই পরিণতির মুখোমুখি হতে হয় না। কিন্তু বাংলা বইটির ক্ষেত্রে কেউ কেউ মনে করেন ধর্মবিষয়ক ওই সব পাঠ কেন সংযুক্ত করা হলো না। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সমাজ-স্বাস্থ্য-পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ক পাঠ বাংলা পাঠ্যপুস্তকটিতে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার ছিল। অর্থাৎ অনেকে ভুলেই যান যে, এটি ভাষা শেখার বই- ধর্ম, বিজ্ঞান বা সমাজ শেখার বই নয়।
সাধারণ মানুষ যাই মনে করুন না কেন, লেখক বা সম্পাদককে সর্বদাই মনে রাখতে হয় যে, ভাষা শেখার জন্য যেসব শিখনফল শিক্ষাক্রমে আছে, পাঠ্যপুস্তকটির মাধ্যমে সেই শিখনফলগুলো অর্জিত হচ্ছে কিনা। গাণিতিক দক্ষতা তৈরির জন্য গণিত বইকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়, ভাষা শেখার জন্য বাংলা বা ইংরেজি বিষয়ক পাঠ্যপুস্তকটিকে সেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, সম্পাদনার সময় এই বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখা হয়। অথচ গভীর পরিতাপের বিষয় এই যে, বাংলা বইটি ভাষা শেখার জন্য উত্তম বই কি না, সে বিষয়ে কোনো রকম আলোচনা কোথাও চোখে পড়ে না। আলোচনা হয় অন্য বিষয় নিয়ে, যার সঙ্গে এই পাঠ্যপুস্তকের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।
পাঠ্যপুস্তকের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতি। আমাদের দেশে শিক্ষার্থী মূল্যায়নে শিক্ষাতাত্ত্বিক পদ্ধতি অনুসরণের ইতিহাস বেশি দিনের নয়। সম্প্রতি ধারাবাহিক ও চূড়ান্ত মূল্যায়ন নামে দুটি পদ্ধতির আলোকে শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গুণগত শিক্ষার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। চূড়ান্ত মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আমরা সৃজনশীল পদ্ধতি অনুসরণ করছি। ধারাবাহিক মূল্যায়নের বিষয়টি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিখন-শেখানো পদ্ধতির অংশ। কেননা, এই মূল্যায়নের মাধ্যমে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা বা চিন্তন দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগ থাকে, তেমনি অন্যদিকে তাদের সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা, ব্যক্তিক দক্ষতা, লিখিত ও মৌখিক যোগাযোগের দক্ষতা, সামাজিক দক্ষতা ও সহযোগিতামূলক দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়গুলো মুখ্য হয়ে ওঠে। অর্থাৎ ফলাফলকেন্দ্রিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা থেকে সরে এসে একটি সামগ্রিক মূল্যায়নের দিকে অগ্রসর হওয়াই এই পদ্ধতির লক্ষ্য। পাঠ্যপুস্তক রচনার ক্ষেত্রে মূল্যায়ন পদ্ধতির এই নতুন দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে, যদিও ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতি এখনো বাস্তবায়ন করা যায়নি।
সাধারণত ধরা হয়, ধর্মবিষয়ক পাঠ্যপুস্তকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ-সম্পর্কিত পাঠগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু মূল্যবোধ ও নৈতিকতার বিষয়টি এককভাবে বিশেষ কোনো পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নয়। শিক্ষাক্রমের আদর্শ অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়ের মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ একটি ধারণাগত বিষয় হিসেবে পাঠের মধ্যে নিহিত থাকবে। গাণিতিক দক্ষতা তৈরির জন্য গণিতবিষয়ক পাঠ্যপুস্তকে এমন বিষয় থাকতে পারে না, যেখানে একসময় দুধের মধ্যে পানি মেশানোর কথা ছিল। কারণ এর সঙ্গে নৈতিকতার সম্পর্ক আছে। পাঠ্যপুস্তকটি গণিত হলেও এর মধ্যে এমন কোনো পাঠ থাকতে পারবে না, যেখানে নৈতিক ও জাতিগত মূল্যবোধের ব্যত্যয় ঘটে। আবার সততা ও ন্যায়পরায়ণতার মধ্যে পার্থক্য আছে। সবার জন্য সমান ব্যবস্থা অনেক সময় কারও কারও জন্য বঞ্চনার বিষয় হয়ে ওঠে। সুতরাং সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং এই দর্শনের নিরিখে পাঠ্যপুস্তকে পাঠ নির্ধারণ করতে হয়।
প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে একটি দেশের জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ, অর্থনৈতিক অবকাঠামো, পারিবারিক ও সামাজিক সংগঠন, অসাম্প্রদায়িক জীবনাদর্শ, সমতা ও ন্যায্যতার আদর্শ, পরিবেশ সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি ইত্যাকার অসংখ্য বিষয় প্রতিফলিত হয়। এসব বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মনোযোগ ও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। কেননা, এসব বিষয়ে কোথাও সামান্যতম তথ্য বা তত্ত্বগত ত্রুটি দেশজুড়ে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে। কিংবা সবার অজান্তেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিরস্থায়ী ভুল ধারণার সৃষ্টি করে যেতে পারে। পাঠ্যপুস্তকে এমন কোনো তথ্য কিছুতেই অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত নয়, যা কোনো ধর্ম বা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি বা পেশাগত সম্প্রদায় বা নারী-পুরুষ ভেদে ভিন্ন সম্প্রদায়ের মনে আঘাত হানতে পারে। তা হলে এর পরিণতি নিশ্চয়ই শুভ হয় না। কিন্তু এই একবিংশ শতকে এসে আমরা যদি পাঠ্যপুস্তককে কেন্দ্র করে বিজ্ঞান ও ধর্মকে গুলিয়ে ফেলি, তা হলে সেটা হবে সবচেয়ে দুঃখজনক। কারণ বিজ্ঞান প্রামাণিকতার বিষয়, আর ধর্ম বিশ্বাসের বিষয়। ধর্মকে যারা বিজ্ঞানের প্রামাণিকতায় বিচার-বিশ্লেষণ করতে চান কিংবা বিজ্ঞানকে ধর্মের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চান, তারা না বোঝেন ধর্ম, না বোঝেন বিজ্ঞান। কিংবা বুঝেশুনেই তারা আশ্রয় নেন ষড়যন্ত্রের। এদের সংখ্যা যতই হোক না কেন, এ অন্যায়ের সঙ্গে, মিথ্যার সঙ্গে, ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আপস করার পরিণতি কখনোই কল্যাণ বয়ে আনবে না।
সরকার আবদুল মান্নান : গবেষক ও প্রাবন্ধিক।