শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১৪

মুঠোফোনে আসক্তি, ক্যারিয়ারে বাধা

আক্তার হোসেন শিহাব
মুঠোফোনে আসক্তি, ক্যারিয়ারে বাধা

আধুনিকতার এই যুগে মুঠোফোনের সঙ্গে পরিচিত নয়, এমন লোক পাওয়া দুষ্কর। শিশু থেকে বৃদ্ধÑসবাই এর সঙ্গে পরিচিত। ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ইমপ্যাক্টের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২০ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বে ৫২০ কোটি মুঠোফোন গ্রাহক ছিল, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬৭ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৯ সালের তুলনায় ২২ কোটি বেড়ে ২০২০ সালে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪০০ কোটিতে পৌঁছেছে।

১৯৭৩ সালে ড. মার্কিন কুপার ও তাঁর সহকর্মী ফ্রান্সিস মিচেল প্রায় ২ কেজি ওজনের হাতে ধরা একটি মুঠোফোন আবিষ্কার করেন। এর পর থেকে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন মডেলের মুঠোফোন বাজারে আসতে থাকে। তবে এই ফোনগুলো দিয়ে কেবল কথা বলা ও খুদে বার্তা পাঠানো যেত। ১৯৯৪ সালে আইবিএম ও মিতসুবিসি ইলেকট্রনিক করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে বিশ্বের প্রথম স্মার্টফোন তৈরি করা হয়। এটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সিমন’। স্মার্টফোন বাজারে আসার পর থেকে বিশ্ব যোগাযোগমাধ্যম হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। এতে যেমন যোগাযোগসহ বিভিন্ন কাজ সহজ হয়েছে, তেমনি বেশ কিছু অপকারী দিকও উঠে আসে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মুঠোফোন আসক্তি বা ডিজিটাল আসক্তি, যা বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের ক্যারিয়ার ধ্বংসের অন্যতম কারণ।

মোবাইল বা ডিজিটাল আসক্তির কারণে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ ভিডিও গেম। বিশেষ করে ফ্রি ফায়ার গেম উল্লেখযোগ্য। দেশের একটি অনলাইন পত্রিকায় ২০২১ সালের ২৫ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ প্রতিদিন ফ্রি ফায়ার গেমটি খেলছে। আমাদের বাংলাদেশেও প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষ গেমটি খেলছে। কিশোর, তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের ৮ দশমিক ৬ শতাংশ ইন্টারনেট গেমিংয়ে আসক্ত। এর মধ্যে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ কিশোর এবং ১ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব অনলাইন গেমস, মুঠোফোন, কম্পিউটার বা ভিডিও গেমসের ক্ষতিকারক ব্যবহারকে একটি রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। মজার বিষয় হলো, যাঁরা এই গেম তৈরি করেছেন, তাঁরা নিজেদের ছেলেমেয়েদের গেম–আসক্তি থেকে দূরে রেখেছেন। অস্ট্রেলিয়ার ডায়াকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হেলেন ইয়ং তাঁর নিবন্ধ ‘ভায়োলেন্স অ্যান্ড ফার রাইটস’-এ লিখেছেন, ‘সন্ত্রাসভিত্তিক ভিডিও গেমগুলো সন্ত্রাস-হিংসাকে সাধারণীকরণের ষড়যন্ত্র। এটি মানুষের অভ্যন্তরীণ অপরাধবোধকে উসকে দিচ্ছে। তরুণদের হত্যার বিষয়টি স্বাভাবিক হিসেবে ভাবাতে শেখানো হচ্ছে, মানুষের মধ্যে নৈতিকতা নষ্ট হচ্ছে।’

ফলে সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি ধ্বংস হচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সৃজনশীল চিন্তাভাবনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, যা যথাযথ ক্যারিয়ার গঠনের অন্যতম অন্তরায়। ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল তাঁর একটি লেখায় উল্লেখ করেন, ‘শিগগিরই বাংলাদেশে এই সন্ত্রাসভিত্তিক গেম বন্ধ করা জরুরি। তদুপরি বাচ্চাদের এ-জাতীয় আসক্তি থেকে বাঁচাতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া দরকার। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় জড়িত হতে উৎসাহিত করতে হবে।’

তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মাদকের আসক্তিকে না বলার পাশাপাশি মুঠোফোন ও ডিজিটাল আসক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারকে ‘না’ বলতে হবে।

আক্তার হোসেন শিহাব : গণমাধ্যমকর্মী এবং স্নাতক ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়