প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
স্বাদের কারণে বাংলাদেশের দামী মাছগুলোর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির বড় চিংড়ি এখন ভোক্তাদের জন্যে এক আতঙ্কের নাম। কারণ, এ চিংড়ির ভেতরে বিষাক্ত জেলি ঢুকিয়ে এর ওজন বাড়িয়ে এক শ্রেণীর অসাধু বিক্রেতা অধিকাংশ ক্রেতাকে ঠকিয়ে লাভবান হচ্ছে এবং ভোক্তাদের শারীরিক ক্ষতি করে চলছে। পর্যবেক্ষক ও অভিজ্ঞমহল বলেছেন, চিংড়ি মাছে ঢোকানো জেলি পুরোটাই প্লাস্টিক। এছাড়া চিংড়ির ভেতর সাগু, সাদা পাথরসহ সাদা ধাতব পদার্থও পাওয়া যায়, যা খেলে কিডনি ও পাকস্থলির জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ ইমদাদ হোসেন শপথ। তিনি বলেন, পাথর কোনোভাবেই হজম হয় না। সেটা পাকস্থলীতে জমে শুধু অস্বস্তি তৈরি করে না, পাকস্থলীতে প্রদাহও সৃষ্টি করে। আর চিংড়িতে ঢোকানো জেলিতে যে কেমিক্যাল সাবস্ট্যান্স থাকে, সেটা কোনোভাবে হজম হয় না। এটা পাকস্থলী ও কিডনী দুটোর জন্যেই ক্ষতিকর।
এমন জেলিযুক্ত বড় চিংড়ি দেশ-বিদেশের বড় বড় শহরের বাজার এবং চাহিদাসম্পন্ন স্থানে পৌঁছে দিতে এক শ্রেণীর অসাধু মৎস্য বিক্রেতা তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এরা কম-বেশি ধরাও পড়ছে। গত ৯ অক্টোবর শনিবার দুপুরে জেলিযুক্ত চিংড়ির বড় চালান ধরতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি টহল টিম। কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেঃ খন্দকার মুনিফ তকি জানিয়েছেন, শরীয়তপুর জেলার আলুরবাজার ফেরিঘাট সংলগ্ন যাত্রীবাহী ট্রলার থেকে সাড়ে সতের মণ (৭০০ কেজি) বিষাক্ত জেলিযুক্ত চিংড়ি জব্দ করেছে কোস্টগার্ড ঢাকা জোনের অধীনস্থ উক্ত টহল টিম। কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশনের সাব লেফটেন্যান্ট রুহান মঞ্জুরের নেতৃত্বে টহল টিম আভিযানিক বড় সাফল্য খুঁজে পায়। তবে প্রকৃত মালিক খুঁজে না পাওয়ায় কাউকে আটক করতে পারেনি। কোস্টগার্ডের এই সফল অভিযানের সময় সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা কুলসুম মনি ও সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব রশীদ উপস্থিত ছিলেন। এ দু কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জব্দকৃত চিংড়ি মাছগুলো কোস্টগার্ড চাঁদপুর কার্যালয় চত্বরে মাটিতে পুঁতে বিনষ্ট করা হয়।
আমরা চাঁদপুর এলাকার মেঘনা নদীতে কোস্টগার্ডের ৭শ’ কেজি অবৈধ বিষাক্ত জেলিযুক্ত চিংড়ি জব্দের সফল অভিযানে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই। ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মেঘনায় ২২ দিনব্যাপী মা ইলিশ রক্ষা অভিযান চলাকালীন বিদ্যমান কঠোর তৎপরতার পাশাপাশি কোস্টগার্ডের জেলিযুক্ত চিংড়ি জব্দের অভিযান নিঃসন্দেহে জনস্বাস্থ্য রক্ষার অনুকূলে অনেক বড় কাজ বলে মনে করি। চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন বাজারে কোস্টগার্ড যদি সোর্স নিয়োগ করে, তাহলে সহজেই জানতে পারবে জেলিযুক্ত চিংড়ি মাছ পাইকারী ও খুচরা বিক্রির হোতা কারা। আমরা কোস্টগার্ডের পাশাপাশি মৎস্য বিভাগ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ক্যাবসহ সচেতন মহলকে বিষাক্ত জেলিযুক্ত চিংড়ি মাছ বিক্রি রোধে সক্রিয় ভূমিকা পালনের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।