প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
সড়ক দুর্ঘটনার ৪ দিনেও কান্না থামছে না নিহত ৩ শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যদের
শোকার্তদের সমবেদনা জানাতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের কারো দেখা নেই
কচুয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিন কলেজ শিক্ষার্থীর পরিবারের আহাজারি থামছে না। গত ২৫ নভেম্বর কচুয়ার কড়ইয়া গ্রামের কাদির ডাক্তারের বাড়ি সংলগ্ন স্থানে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় শিক্ষার্থী ঊর্মি মজুমদার, সাদ্দাম হোসেন ও মাহবুব আলম রিফাত। ঊর্মি ও সাদ্দাম কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের মাস্টার্স পরীক্ষার্থী। অপরজন মাহবুব আলম রিফাত চাঁদপুর সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থী। তারা তিনজনই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে একই সিএনজি অটোরিকশা যোগে কলেজে যাচ্ছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ওদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও আর বাড়ি ফেরা হয়নি। বিআরটিসি বাস ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজনেরই মৃত্যু হয়।
|আরো খবর
দোয়াটি গ্রামের উর্মি মজুমদারের স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করবে। ঊর্মির ছোট ভাই শুভ জানান, আমরা তিন বোন এক ভাই। প্রায় ৮ বছর আগে কুয়েতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবাকে হারাই। বোন ঊর্মি উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে, গড়ে তুলবে আলোকিত সমাজ-এমন আশায় আমরা বুক বাঁধি।
নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান মজুমদারের ছেলে সাদ্দাম উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করে প্রশাসনিক ক্যাডার হয়ে দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করার স্বপ্ন লালন করে আসছিলেন। তার ভাই স্কুল শিক্ষক ইসমাইল হোসেন জানান, আমরা পাঁচ ভাই দুই বোন। ছোট ভাই সাদ্দাম একজন স্বপ্ন বিলাসী মানুষ ছিলেন। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সে কঠোর অধ্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বাবা আব্দুল মান্নান মজুমদার ও মা মমতাজ বেগম স্বপ্ন বিলাসী পুত্র সাদ্দামকে হারিয়ে প্রায় বাকরুদ্ধ। সাদ্দাম প্রায় দেড় বছর পূর্বে বিয়ে করেন। তার রয়েছে তিন মাসের এক পুত্র সন্তান। স্ত্রী আছমা আক্তার স্বামীকে হারিয়ে অবুঝ সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার ও পরিবারের অন্য সদস্যদের কান্না যেন কেউ থামাতে পারছে না।
অপর নিহত কোয়া গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে মাহবুব ইসলাম রিফাত সরদারও সদ্য বিবাহিত ছিলেন। স্ত্রী রিয়া আক্তার আছমার মতই বারা বার স্বামীর স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। তার বোন শামীমা আক্তার জানান, আমরা তিন ভাই এক বোন। অভাবী সংসারে লেখাপড়া করে ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসনিক ক্যাডার পদে চাকরি করার ইচ্ছা ছিল তার। মা হালিমা বেগম জানান, আমার স্বামী বৃদ্ধ হওয়ায় ছেলে কর্ম করে সংসার চালাতো ও পাশাপাশি পড়াশোনা করতো। এখন আমার সংসারের হাল ধরবে কে? এমনি ভাবনায় আমি কোনো কুল কিনারা পাচ্ছি না।
তিন পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভের সাথে বলেন, জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কেউ আমাদের খোঁজ-খবরটুকু নিতে আসেনি। আমরা যাতে এ কষ্ট সইতে পারি সে জন্যে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি। তবে এ ধরনের দুর্ঘটনায় আর কারো মায়ের কোল যেন খালি না হয় এটাই আমাদের কাম্য। মামলা দায়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিন পরিবারের সদস্যরাই অভিন্ন মতামত প্রকাশ করে বলেন, মামলা করে আমরাতো আর তাদেরকে ফিরে পাবো না।
কচুয়া থানার ওসি মোঃ মহিউদ্দিন জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কেউ কোনো প্রকার অভিযোগ করেনি। আমরা অপেক্ষায় আছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিহতদের পরিবার চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে লাশ দাফন করেছে। আমরা ঘাতক বিআরটিসি বাসটিকে আটক রেখেছি। বাসের চালককে কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে।